হাসপাতাল পরিদর্শনে স্বাস্থ্য দফতরের দল
লকাতা থেকে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিদল এসে পরিদর্শন করে গেল মেদিনীপুরের রাঙামাটিতে এক বেসরকারি হাসপাতাল ও প্যারামেডিক্যাল কলেজ। ঘটনাচক্রে ‘সেন্টার ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অফ হায়ার এডুকেশন’ যে সংস্থা এই দু’টি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে, তার চেয়ারম্যান সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার। ফলে আচমকা এই পরিদর্শন নিয়ে শোরগোল পড়েছে রাজনৈতিক মহলে।
তবে প্রশাসন প্রকাশ্যে বলছে, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে এই হাসপাতাল নিয়ে কিছু অভিযোগ জমা পড়েছিল। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই শুক্রবার হাসপাতালে আসে স্বাস্থ্য দফতরের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। দলে ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হেলথ সার্ভিস লক্ষ্মীকান্ত হাটুই, হরেকৃষ্ণ চন্দ্র। সঙ্গে ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্রও। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে পরিদর্শন চলে। পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হাসপাতালে পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। হাসপাতালের ‘ফায়ার লাইসেন্স’ নেই দেখে অসন্তুষ্ট হন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। কর্তৃপক্ষকে যত দ্রুত সম্ভব এই লাইসেন্স করার নির্দেশ দেন। যদিও হাসপাতাল পরিচালনা করে যে সংস্থা, তার সম্পাদক মণীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, “স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা পরিদর্শন শেষে সন্তুষ্ট।”
পরিদর্শনে স্বাস্থ্যকর্তারা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
২০০২ সালে মেদিনীপুরের রাঙামাটিতে গড়ে ওঠে এই হাসপাতাল ও প্যারামেডিক্যাল কলেজ। ২০০৪ সালে হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। সব মিলিয়ে ২৫টি শয্যা রয়েছে। সঙ্গে আইসিইউ-এ ৮টি শয্যা ও ডায়ালিসিস ইউনিটে ২টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু, পরিষেবা ও পরিকাঠামোর দিক থেকে কিছু ঘাটতি রয়েছে বলেই অভিযোগ রোগীর আত্মীয়দের। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য দফতরের কাছেও এই অভিযোগ পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবারই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, স্বাস্থ্য দফতরের এক প্রতিনিধিদল পরিদর্শনে আসবে। সেই মতো তড়িঘড়ি হাসপাতাল চত্বর সাফসুতরো করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছন প্রতিনিধিরা। স্বাস্থ্য ভবন থেকে প্রতিনিধিরা আসছেন জেনেও দীপকবাবু হাসপাতালে আসেননি। তবে হাজির ছিলেন সংশ্লিষ্ট সংস্থার সম্পাদক মণীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, প্যারামেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ নন্দদুলাল ভট্টাচার্য, সংস্থার সদস্য বিমলকৃষ্ণ দাস, দিলীপ নন্দী প্রমুখ।
হাসপাতালে পৌঁছেই প্রথমে আইসিইউতে যান আধিকারিকেরা। কথা বলেন রোগীর পরিজন, হাসপাতাল কর্মীদের সঙ্গে। পরে একে একে ডায়ালিসিস ইউনিট, অপারেশন থিয়েটার, জেনারেল ওয়ার্ড প্রভৃতি ঘুরে দেখেন। হাসপাতালে কেন পর্যাপ্ত এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার রাখা নেই, তা জানতে চান। কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, প্রয়োজনীয় সব জায়গায় সিলিন্ডার রাখা আছে। আর যদি কোথাও রাখতে হয়, তাহলে তারও ব্যবস্থা করা হবে। এরপরই চিকিৎসকদের নামের তালিকা তলব করেন আধিকারিকেরা। হাসপাতালের সামনে সেই তালিকা নেই কেন তা জানতে চান। অবিলম্বে এই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে প্যারামেডিক্যাল কলেজে পৌঁছয় ওই দল।
একই ক্যাম্পাসে এই কলেজ। এখানে নিউট্রেশন এন্ড ডায়াটেটিক্স, মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি প্রভৃতি বিষয়ের উপর বিএসসি ও এমএসসি কোর্স পড়ানো হয়। এ ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে। দোতলা ভবন। এক তলায় যে কলেজ চলে সেটি পরিচালনা করে সেন্টার ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অফ হায়ার এডুকেশন। কিন্তু, দোতলায় আরও একটি প্যারামেডিক্যাল কলেজ চলে, যেটি পরিচালনা করে অন্য এক সংস্থা। একই ভবনে দু’টি কলেজ চলছে দেখে কার্যত অবাকই হন স্বাস্থ্য-আধিকারিকেরা। নন্দদুলালবাবু তাঁদের জানান, “দোতলার কলেজটি আমরা পরিচালনা করি না। অন্য একটি সংস্থা পরিচালনা করে। ওরা পঠনপাঠনের জন্য জায়গা চেয়েছিল। আমরা দিয়েছি।” যেহেতু এ ক্ষেত্রে সরাসরি স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা নেই, কোর্স পড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়, তাই আর কথা বাড়াননি আধিকারিকেরা। তবে, তাঁরা দোতলায় গিয়ে ওই কলেজের শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। এবং নিজেদের নোটবুকে বিষয়টি লিখে নেন। দুপুর আড়াইটে নাগাদ পরিদর্শন শেষ হয়।
ঠিক কী কারণে এই পরিদর্শন?
স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা জানান, কিছু অভিযোগ এসেছিল। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এখানে আসা। লক্ষ্মীকান্তবাবু বলেন, “কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই এখানে এসেছি। কলকাতায় ফিরে গিয়ে রিপোর্ট দেব। পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “সুরক্ষার দিকে নজর দিতে হবে। আরও কয়েকটি এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার রাখা প্রয়োজন।” তবে, স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারটি ভাল।”
শুধুমাত্র এই হাসপাতালটি পরিদর্শন করেই আধিকারিকেরা ফের কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন। উদ্দেশ্য নিয়ে ধোঁয়াশাটা রয়েই যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.