|
|
|
|
|
|
|
নাটক সমালোচনা... |
|
যন্ত্রণার জীবন |
শতরূপা চক্রবর্তী |
নিউইয়র্কের কেভিন নাদাল, বোস্টনের রোল্যান্ড নিগল্যান্ড বা চিনের লিউ ই এঁদের মধ্যে মিলটা কোথায় বলতে পারবেন? ইন্টারনেটে উত্তরটা পাবেন আর অবাকও হবেন। আমেরিকান ব্লগার চার্লি ফিস এই প্রেক্ষাপটেই লিখেছিলেন একটি ছোট-গল্প। সেই ভাবনাসূত্র ধরেই মৌলিক বাংলা নাটক ‘আমি ওয়েডস আমি’। রচনা ও পরিচালনায় সোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রযোজনায় ‘নট-রঙ্গ’।
একটা মানুষ নিজেকেই বিয়ে করে ফেলেছে ব্যাপারটা যতটা হাস্যকর, ঠিক ততটাই হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক যন্ত্রণাময় জীবনের কথা। মানুষটি নিজেকে ছাড়া আর কারওকে সেই অর্থে ভালবাসতে পারেনি। অনেককেই জোর করে জীবনের সঙ্গে আপস করতে হয়। না চাইতেও পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়। কেন? এই প্রশ্ন সমাজের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন প্রযোজক। |
|
নাটকের প্রতিটি সংলাপেই তীব্র ব্যঙ্গের ছোঁয়া। ব্ল্যাক কমেডির আধারে গড়া এই নাটকে মাঝেমধ্যেই দর্শকরা হেসে ওঠেন কেন্দ্রীয় চরিত্রের উদ্ভট কর্মকাণ্ডে, অথচ নাটক শেষে চোখের কোণ যেন চিকচিক করে ওঠে।
পার্কের বেঞ্চিকেই মঞ্চের উপরে ভেঙে ফেলে আদালতের কাঠগড়া বানানো, আবার মডেলসুলভ অঙ্গভঙ্গি করতে থাকা ন্যায়ের প্রতিমূর্তি প্রতিটি তির্যক উপস্থাপনায় যথাযথ পরিচালক। চমকের অবকাশ থাকে না যখন দর্শকদের মধ্যে থেকেই চরিত্ররা উঠে আসেন। সব কিছুর ঊর্ধ্বে গর্জে ওঠে একটাই শব্দ ‘নার্সিসিজম’। যা কম বেশি প্রতিটি মানুষের মধ্যেই আছে। কিন্তু বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে তা বিকারগ্রস্ত রূপ ধরতে চলেছে।
মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরিচালক নিজে। মেয়েলি পুরুষ এবং পুরুষালি স্ত্রীসত্তার মেলবন্ধনে চরিত্রটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। সম্পূর্ণ আলাদা দু’টি সত্তার অভিনয়ের মতো দুরূহ কাজটিকে সোহন তাঁর অনবদ্য অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। নাট্যদলের সম্পাদক এবং পাদরির ভূমিকায় নীলাভ চট্টোপাধ্যায়ও অনবদ্য অভিনয়ের দাবি রাখেন। এর পরেই বলতে হয় পৌলমী বসুর কথা। কমেডি-তেও যে তাঁর দখল সমমাত্রায় তা এই নাটক না দেখলে বোঝা যাবে না। নেপথ্য থেকে বার কয়েক শুনতে পাওয়া যায় সম্বুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলা। এ ছাড়া আইনজীবীর ভূমিকায় অয়নাংশু চট্টোপাধ্যায়, যীশুর চরিত্রে দেবাঞ্জন বসু এবং মায়ের চরিত্রে মৌসুমী সেনগুপ্তের অভিনয় যথাযথ। এই নাটকের বিশেষ প্রাপ্তি কণ্ঠসঙ্গীত। মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্যই
প্রশংসা পাবেন।
রবি ঘোষের রূপসজ্জা, সুদীপ সান্যালের আলো, এই নাটকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। |
|
|
|
|
|