আমরি কাণ্ডের পরেই তড়িঘড়ি বহুতল ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রোমোটার-হোটেল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বহরমপুর পুর-কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে আগাম সতর্কতা হিসেবে বেশ কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। কিন্তু বৈঠকের মাস খানেক পরেও কোনও কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ।
গত কয়েক বছরে প্রাচীন শহর বহরমপুরে বহুতল আবাসনের সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। তেমনই মুর্শিদাবাদে পর্যটকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে হোটেলের সংখ্যাও। শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে উঠেছে শপিং মল। কিন্তু ওই ভবনগুলিতে সতর্কতামূলক কোনও ব্যবস্থা রয়েছে কি না তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আগুনের হাত থেকে রেহাই পেতে আগামী দিন কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তারও রূপরেখা ঠিক হয় ওই বৈঠকে। এ প্রসঙ্গে পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “ভবনের মাটির নীচে জলাধার নির্মাণ, জরুরি বা আপৎকালীন সিঁড়ি, প্রতিটি তলায় জলের সংযোগ, ফায়ার অ্যালার্ম ব্যবস্থা বহুতল বাড়িগুলিতে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে সিঁড়ির নীচে থেকে বিদ্যুতের মিটার অবিলম্বে সরিয়ে ফেলা জরুরি। হোটেলের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বাড়তি হিসেবে সেখানে স্মোক অ্যালার্ম লাগাতে হবে। এ ছাড়াও প্রতিটি তলায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখতে হবে।”
আমরি’র ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ওই সিদ্ধান্তগুলি দ্রুত কার্যকরী করার জন্য একটি কমিটিও গঠিত হয়েছে। উপ-পুরপ্রধান, পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার ও হাতে গোণা কয়েক জন কাউন্সিলর ওই কমিটিতে রয়েছেন। তাঁরা গোটা বিষয়টি সরজমিনে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সেই সঙ্গে ওই সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে তবেই বহুতল বা হোটেল ভবনের প্ল্যান অনুমোদন করা হবে। আর নির্মিত ভবনগুলির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই নিয়মগুলি কার্যকরী করার কথাও হয়েছে। কিন্তু বৈঠকের ওই সিদ্ধান্ত কার্যকরী করতে পুরসভা এখনও উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ।
তবে আবাসনের পাশাপাশি হোটলের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও যথেষ্ট নয় বলে পুরবাসিন্দারা জানান। তাঁদের কথায়, পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ যতটা চিন্তিত, তাঁদের কাছে নিরাপত্তার বিষয়টি তত গুরুত্ব পায় না। পর্যটকদের সুরক্ষা নিয়ে তাঁদের ভাববার অবকাশ কোথায়? শহরের জনবহুল ও ব্যস্ততম ভাল জায়গায় ভবন নির্মাণ করে পুরসভার ‘ট্রেড লাইসেন্স’-কে ‘শিখণ্ডি’ করে হোটেল ব্যবসা চলছে বহরমপুর জুড়ে। সেখানে দমকল দফতরের লাইসেন্স নেই। বহরমপুর শহর ও লাগোয়া এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে খান পঁচিশেক হোটেল রয়েছে। দমকল দফতরের লাইসেন্স দূর অস্ত্! অধিকাংশ হোটেলেরই নেই ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’-ও। কোনও কোনও হোটেলে দমকল দফতরের ‘ফাইনাল এনওসি’ নেই।
লালদিঘির এক হোটেল মালিক চন্দন সরকার বলেন, “এটা অস্বীকার করে লাভ নেই পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকটি নিয়ে আমরা যতটা চিন্তিত, সুরক্ষা নিয়ে ততটা ভাবিনি। তবে আমরির ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। দমকল দফতরের নিয়ম মেনে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে হোটেলের বেশ কিছু রদবলদলের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” যদিও বহরমপুরের কোনও হোটেল বা বহুতল বাড়ির মাটির নীচে জলাধার নেই। |