ছেলে বেঁচেছে, দুঃস্বপ্নের কাল কাটল মুরাতিপুরে
রাত বারোটায় বালিশের পাশে রাখা মোবাইলটা বাজছিল। নদিয়ার কল্যাণী মুরাতিপুরের কানু মণ্ডলের মাঝ রাতে ভিন দেশের নম্বর দেখে বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে— ছেলের কিছু হল না তো?
একমাত্র ছেলে বাড়ি ছাড়া চার বছর ধরে। আট মাস আগে ইতালিতে ভাল চাকরি পেয়েছে বলে সেই যে গেল, আর আসেনি। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হত। বিশাল এক বিলাসবহুল প্রমোদতরীতে ছেলে নাকি ‘শেফ’। অচেনা নম্বর থেকে আসা ফোনটা ধরেই কানুবাবু উৎকন্ঠায় বলে ফেলেছিলেন, ‘‘মিঠুন নাকি? কিছু হয়নি তো বাবা?’’ ওপারে খানিক্ষণ নিরুত্তর থাকার পরে ছেলের গলা শুনে আশ্বস্ত হয়েছিলেন প্রৌঢ়। মিঠুন তখন শুধু বলেছিলেন, “আমাদের জাহাজটা ডুবো পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যাচ্ছে বাবা। তবে আমি নিরাপদে আছি। একটা বড় হোটেলে উঠেছি। চিন্তা কোরো না, আমার মোবাইলটা তলিয়ে গিয়েছে।” এরপরেই লাইনটা কেটে গিয়েছিল। ছেলে ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে পড়েও কোনও ভাবে রেহাই পেয়েছে, তখন এইটুকুই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল কানুবাবুর। কিন্তু ছেলেকে নিয়ে উদ্বেগ কী তাতে কাটে? স্ত্রী পুষ্পদেবীকে ছেলের দুর্ঘটনার খবর বলার পরে দু’জনেই ছেলের ছবি আঁকড়ে বসেছিলেন সারা রাত ধরে।
গ্রামের বাড়িতে ছেলের অপেক্ষায়। নিজস্ব চিত্র
সকালে মেয়ে-জামাইদের জানানোর পরে তাঁরা মিঠুনের অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু কাউকেই ফোনে পাওয়া যায়নি। ততক্ষণে সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে ইতালিতে প্রমোদতরী কোস্টা কনকর্ডিয়ার ডুবে যাওয়ার খবর। ছেলে আর তাঁর সহকর্মীদের খবর জানতে টিভির সামনে ঠায় বসে থেকেছেন পুষ্পদেবী। কানুবাবু কাঠের আসবাবপত্রের কারিগর। তিনিও কাজকর্ম ছেড়ে রোজ সকালে সব কটা খবরের কাগজ কিনেছেন। যদি ছেলের কথা কিছু লেখা থাকে।
খবরের কাগজের ছবি দেখে ১৪ তলা জাহাজের কোন তলায় ছেলে ছিল, নিজেদের মতো করেই বোঝার চেষ্টা করেছেন মণ্ডল দম্পতি। খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকেও। বৃহস্পতিবার ফের ছেলের ফোন পেয়ে অবশ্য আশ্বস্ত হয়েছেন পুষ্পদেবীরা। পুষ্পদেবী বলেন, “কল্যাণীতে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ার পরে মুম্বইতে চাকরি করতে গেল মিঠুন, তখন ওর বাইশ বছর। আট মাস আগে ইতালির জাহাজে চাকরি পেল বেকারি সেকশনে। কেক তৈরি করত খুব ভাল। কেক বানাতে পারে বটে ছেলেটা। আমাদের খাইয়েছে একবার।”
ইতালি থেকে দুবাই হয়ে শুক্রবার রাতে কলকাতায় ফিরেছেন মিঠুন। শুক্রবার কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে মিঠুন বলেন, “প্রথমে তো ঘণ্টা খানেক বুঝতেই পারিনি। পরে যখন বুঝলাম তখন বাঁচা-মরা সুতোর উপরে ঝুলছে। আমি নিজে লাইফবোট নিয়ে দু’টো ‘ট্রিপ’ দিয়ে বেশ কয়েক জন সহকর্মীকে বাঁচিয়েছি। তবে সব কিছু খুইয়েছি। কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পেয়েছি সামান্যই।”
এ বার এত দিন পরে নিশ্চিন্তে রাতে ঘুমোতে পারবে এই পরিবার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.