|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি ২... |
|
এখনও আরও অনেক রুম দেখানো বাকি আছে |
বললেন রাহুল। বাঁধা ছকে আটকে থাকতে চান না।
তাঁর চ্যালেঞ্জ নিজের সঙ্গে। মুখোমুখি দেবশ্রুতি রায়চৌধুরী |
পত্রিকা: একটা কথা আছে না, ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’...আপনি অনেকটা সেই রকম...
রাহুল: হো হো, মানে?
পত্রিকা: মানে এই যে, ভাল কাজ পাচ্ছেন না, পাচ্ছেন না। যেই পেলেন এমন অভিনয় করলেন..
রাহুল: (থামিয়ে দিয়ে) আরে বাবা আমার তো এই ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও শত্রু নেই! দাবিয়ে রাখতে যাবেই বা কেন? দাবিয়ে রাখতে একমাত্র আমিই পারি নিজেকে। না হলে (হাসতে হাসতে) আমাকে দাবিয়ে রাখা সত্যি কঠিন।
পত্রিকা: মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার ফর্মুলাটাই জানতে চাই। এই যে ‘বেডরুম’। এতগুলো চরিত্র। এত জন ভাল অভিনেতা। কিন্তু শেষ হাসিটা...
রাহুল: ভাল কাজ করাটা কিন্তু অন্যদের ওপর নির্ভর করে। ‘বেডরুম’-এ আমাদের সবার কাজ যে ভাল হয়েছে...এই যে আবির, কী কাজটাই না করেছে! রুদ্রদা নতুন করে বলার কিছু নেই। মৈনাক (ভৌমিক) আর রাণাদা (রাণা সরকার) আমাদের সেই সুযোগটা দিয়েছিলেন বলেই তো...
পত্রিকা: পলিটিক্যালি কারেক্ট উত্তর শোনার জন্য ইন্টারভিউটা করছি না...
রাহুল: (হেসে ফেলে) কী আশ্চর্য...
|
|
পত্রিকা: সোজা কথা সোজা ভাবে বলুন না। বারবার ভাল কাজ করেও স্বীকৃতি না পেয়ে আবার ভাল পারফরম্যান্স দেন কী করে?
রাহুল: কী ভাবি জানেন? আমি চরিত্রাভিনেতা। আমার ইনিংসটা তাই লম্বা হবে। এই ‘দেহ পট সনে নট’ কথাটা আমার ক্ষেত্রে তাই খাটবে না। তা ছাড়া, বোমান ইরানি কবে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন বলুন তো? পরেশ রাওয়াল? সেখানে তো অনেক তাড়াতাড়ি শুরু করেছি আমি। আসলে ভেতরে ভেতরে তেতো হতে চাই না। যা পাচ্ছি তাতে আমার মতো সাধারণ বাড়ির সাধারণ ছেলে খুশি। আর অতৃপ্তি? আমার থেকে অনেক গুণী অভিনেতা এখানে আছেন। অপুদা (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়), রণিদা (রজতাভ দত্ত)। তাঁরা তৃপ্ত? ডাস্টিন হফম্যানও অভিনেতা হিসেবে অতৃপ্ত বলে আমার ধারণা। আমি সেখানে কে? কতটুকু?
পত্রিকা: আপনাকে নিয়ে অনেক অভিযোগও তো রয়েছে। পি আর নেই। অভিনয়ের থেকে মাচার প্রতি আকর্ষণ বেশি। নেশা করেন...
রাহুল: যা যা বললেন আমি শুনিইনি। (একটু উত্তেজিত হয়ে) অভিনয়টা তো ক্যামেরার সামনে আমাকেই করতে হয়। এই যে নেশার অভিযোগ, অভিনয়টা তা হলে করে কে? আর মাচা? এমন কিছু ছবি অতীতে করেছি যেগুলো আর করব না ঠিক করেছি। কমার্শিয়াল ভাল ছবি, ভাল প্রোডাকশন হাউসের ছবি করব। তা সে ছবি ক’টা পাব তার ঠিক নেই। সে ক্ষেত্রে মাচা করতে হয়ই। না হলে সংসার চলবে কী করে? কিন্তু অভিনয় ছেড়ে মাচা করি এটা বাজে কথা। অভিনয়টা কতটা ভালবাসি তার প্রমাণ ‘অশালীন’। কেরিয়ারের এই স্টেজে কোনও অভিনেতা মঞ্চে কাজ করেছেন বলে আমার জানা নেই। সেটা নিশ্চয়ই টাকার জন্য করি না। থিয়েটারে টাকা নেই এটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না!
পত্রিকা: বাণিজ্যিক ছবির এখনকার সবচেয়ে সাড়া জাগানো পরিচালকের হাত ধরেই আপনার সিনেমায় আসা। সেটা প্রযোজনা করেছিলেন আবার টালিগঞ্জের এক নম্বর প্রোডাকশন হাউজ। সেই প্রথম, সেই শেষ। আর আপনারা একসঙ্গে কাজ করেন না। ফিরে তাকালে মনে হয় কি এখনকার পরিণত মস্তিস্কে ব্যপারাটা হ্যান্ডেল করলে রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে ঝামেলাটা হত না? ভেঙ্কটেশের সঙ্গেও আরও কাজ করতে পারতেন?
রাহুল: রাজের সঙ্গে ঝামেলাটা হতই। আমরা দু’জনে দু’টো আলাদা মানুষ। তবে এটা কোনও দিনও অস্বীকার করব না যে রাজ আমাকে ‘চিরদিনই...’ দিয়েছিল বলে আজ এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আর ভেঙ্কটেশের সঙ্গে তার পরেও ছবি করেছি‘জ্যাকপট’। এই ছবিটাও জানেন, কোনও নায়ক নিতে চাইত না। ইন ফ্যাক্ট, সোহম রোলটা না নেওয়ায় আমি অফারটা পাই।
পত্রিকা: ভেঙ্কটেশের সঙ্গে সম্পর্ক তার মানে ভাল?
রাহুল: ওঁদের ঋণ কোনও দিন শোধ করতে পারব না। ঠিক মতো একজন অভিনেতাকে লঞ্চ করাটা কত বড় ব্যাপার আজ বুঝি। কত নতুন অভিনেতাকে দেখি প্রযোজকরা চুক্তির ফাঁসে বেঁধে রেখেছেন। কাজ দেবেন বলে কথা দিয়েও কথা রাখছেন না। কেন না তাঁদের অন্য উদ্দেশ্য আছে। ভেঙ্কটেশ কিন্তু সিনেমা বানাতে চায়। সেই জন্যই ওরা আজ এক নম্বরে। আজও যেখানেই দেখা হয় শ্রীকান্তদা’ বা মণিদা’র পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করি। আমার বংশে প্রথম গাড়িটা আমি কিনেছি। আর সেটা ভেঙ্কটেশের জন্য। এটা কোনও দিন ভুলতে পারব না।
পত্রিকা: পি আর এর প্রসঙ্গটা আবার আনছি। এই যে ‘বেডরুম’ এ আপনার কাজের এত প্রশংসা। বড় পরিচালক, যেমন ঋতুপর্ণ ঘোষ, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তীএঁদের সঙ্গে কথা হল নিজের কাজ নিয়ে?
রাহুল: সৃজিতদা নিজে ফোন করেছিল। বলেছে, এ রকম ভাবেই ভাল কাজ করে যেতে। রাজের সঙ্গেও কথা হল। আমাদের মাঝেমাঝেই ফোনে কথা হয়। ওরও ভাল লেগেছে আমার কাজ। টোনিদা (অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী) বা ঋতুদার সঙ্গে কথা হয়নি। টোনিদা যখন ‘জ্যাকপট’-এর রিভিউ করেছিলেন আমার অভিনয়ের প্রচুর প্রশংসা করেছিলেন। আর ঋতুদার সম্পাদিত পত্রিকায় তো আমি লিখি...
পত্রিকা: কাজের কথা বলেছেন? অ্যাপ্রোচ করা বলে যাকে?
রাহুল: পাগল না কি? ওঁরা খুব বড় বড় লোক। খুব ভয় পাই এ সব ব্যাপার। আর পি আর আমার খারাপ মেনে নিয়েই বলছি কী লাভ বলুন তো? মিডিয়া আজ ওপরে তুলবে। কাল টেনে নামাবে। সেই সঙ্গে আজ এখানে ফিতে কাটা। কাল গাছ পোঁতা। ও সব আমি পারি না। তার থেকে এই ভাল...।
পত্রিকা: রাজের সঙ্গে কথা হয় বললেন। তার মানে আবার কাজের জায়গা তৈরি হচ্ছে?
রাহুল: নাহ। এতটা বলতে পারব না। তবে রাজকে শ্রদ্ধা করি। একটা ইন্টারভিউতে আমি ওর সম্পর্কে কী বলেছিলাম সেটা ধুয়ে মুছে যাবেএই পারস্পরিক শ্রদ্ধাটা থেকে যাবে বলে বিশ্বাস করি। ওর সম্পর্কে যা বলেছিলাম তাতে ওর রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। ওকে রাগাতেই বলেছিলাম। (থেমে) আমার সম্পর্কে ওর রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক।
পত্রিকা: শোনা যায় প্রিয়াঙ্কা আর আপনাকে একসঙ্গে নিলে না কি প্যাকেজ ডিল পাওয়া যায়?
রাহুল: আমাকে আর ওকে একসঙ্গে নিলে আউটডোরে আলাদা আলাদা হোটেল রুম ভাড়া করতে হয় না এটুকু বলতে পারি। কিন্তু এমনিতে আমি পাঁচ টাকা নিই, প্রিয়াঙ্কা আছে বলে তিন টাকা নিচ্ছি এমন তো নয়। আমাদের যা রেট তা তো দু’জনেই নিই রে বাবা! আর (হাসতে হাসতে) বউ যখন তখন আউটডোরে গেলে এক ঘরে থাকব, প্রযোজকের আলাদা ভাল ঘর ভাড়া করার পয়সা বেঁচে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক। সেটা যদি কোনও প্রযোজকের লোভনীয় ডিল মনে হয় তা হলে...। আর প্রিয়াঙ্কা কিন্তু এই সময়ের সব থেকে যোগ্য অভিনেত্রীদের একজন। আমাকে কমপেনসেট করে। তাই একসঙ্গে কাজ করলে ভালই তো!
পত্রিকা: শেষ প্রশ্ন। স্বীকৃতি আসছে ধীরে ধীরে। আপনি তৃপ্ত?
রাহুল: তৃপ্ত যে দিন হব সে দিন তো মরেই যাব। সবে তো আমার ‘বেডরুম’ দেখালাম আপনাদের। এখনও আরও অনেক রুম দেখানো বাকি আছে তো...লিভিং রুম, ডাইনিং রুম... |
|
|
|
|
|