হেরিটেজ কমিশনের সঙ্গে চুক্তি মতো টাকা দিচ্ছে না জেলা পরিষদ। ফলে নাড়াজোল রাজাবাড়ির সংস্কারের কাজ মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ দিন কাজ বন্ধ থাকায় ঐতিহ্যমণ্ডিত ওই রাজবাড়িটি ফের আগাছায় ভরে ওঠার আশঙ্কা। ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে।
এ ব্যাপারে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “ঠিক কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখার পরেই বলতে পারব।” একই কথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সাগর সিংহেরও। তিনি বলেন, “নথি না দেখে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।” তবে জেলা পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র তরুণ চক্রবর্তী বলেন, “হেরিটেজ কমিশন বরাদ্দ টাকা দিয়ে দিয়েছে। ‘মউ’-অনুযায়ী জেলা পরিষদের টাকা না পাওয়ায় কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলা পরিষদকে টাকা দেওয়ার জন্য বলাও হয়েছে।”
বহু পুরনো নাড়াজোলের এই রাজবাড়ি। কিন্তু সংস্কারের অভাবে বাড়িটি ভেঙে পড়ছিল। আগাছায় ভরে উঠেছিল চার দিক। ঐতিহ্যশালী রাজবাড়িটি পরিণত হচ্ছিল ধ্বংসস্তূপে। বাইরে থেকে পযর্টকেরা এলেও কেউ কিছু দেখার সুযোগ পেতেন না। আগাছায় ভরে থাকা জায়গাটি বিষধর সাপের আড্ডা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরাসম্পদ নষ্ট হয়ে যাবে? শুধু নাড়াজোল রাজবাড়ি নয়, তার সামনের পুকুরটিরও একটা আকর্ষণীয় ইতিহাস রয়েছে। ‘জলহরি’ নামে ওই পুকুরের মাঝে রয়েছে ছোট্ট একটি বাড়ি। রাজা নাকি নৌকাবিহার করে ওই ছোট্ট বাড়িতে যেতেন বিনোদনের জন্য। এ রকম একটি স্থানকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতেই নাড়াজোল রাজবাড়িটিকে যাতে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয় এবং সংস্কার করা হয়--তার দাবি উঠেছিল। |
পরবর্তীকালে হেরিটেজ কমিশন বাড়িটিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণাও করে। সংস্কার-খরচের ৮০ শতাংশ অর্থও কমিশন দেবে বলে ঘোষণা করে। বাকি অর্থ রাজ্য সরকার বা জেলা প্রশাসনকে দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক হয় জেলা পরিষদই ২০ শতাংশ টাকা দেবে। সে নিয়ে ‘মউ’ও স্বাক্ষরিত হয় ২০১০-এর জানুয়ারি মাসে। প্রথম ধাপে ২৩ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকাও মঞ্জুর করে হেরিটেজ কমিশন। ৮০ শতাংশ টাকা দিয়েও দেয়। পূর্ত দফতর সেই টাকায় কিছু কাজ করেছে। কিন্তু জেলা পরিষদ তাদের ভাগের টাকা দেয়নি বলে অভিযোগ।
শুধু তাই নয়, ২০১১-র ১৭ ফেব্রুয়ারি হেরিটেজ কমিশন দ্বিতীয় ধাপের টাকাও বরাদ্দ করে। যার পরিমাণ, ২৪ লক্ষ ৪ হাজার টাকা। জেলা পরিষদ প্রথম ধাপের ম্যাচিং গ্রান্টের টাকা তো দেয়ইনি, উল্টে দ্বিতীয় দফায় ‘মউ’ চুক্তিও করেনি। হেরিটেজ কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, জেলা পরিষদ যাতে দ্বিতীয় দফায় ‘মউ’ চুক্তি করে। আর প্রথম ধাপের টাকা দিয়ে দেয়। কিন্তু জেলা পরিষদ টাকা দেয়নি ও মউ চুক্তিও করেনি। ফলে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা পরিষদের কাছে বার বার অর্থ চেয়েও ফল মেলেনি। তাই, আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে, কিছু দিনের মধ্যেই ফের পুরো এলাকা আগাছায় ভরে গিয়ে সাপখোপেরই আড্ডা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা। তা ছাড়াও জেলার একটি পর্যটন কেন্দ্রও নষ্ট হবে।
প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, জেলা পরিষদ যাতে টাকা দেয় সে জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের একটি সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, হেরিটেজ কমিশনের বরাদ্দ টাকার পরিমাণ কিছু কম নয়। তাতেই সিংহভাগ কাজ হওয়া সম্ভব। সেই কাজ না এগিয়ে বাড়তি টাকার জন্য জেলা পরিষদের উপরে ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে। এমনকী প্রদেয় অর্থের পরিমাণ নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু জানানো হয়নি বলেও জেলা পরিষদ সূত্রের দাবি। |