|
|
|
|
জমির জল বার করতে পাম্প বসালেন চাষিরাই |
অমিত কর মহাপাত্র • পটাশপুর |
নিকাশি বেহাল। প্রায় তিন হাজার বিঘা জমি জলের তলায়। সম্প্রতি নিজেরাই জমিতে পাম্প বসিয়ে জল বের করার চেষ্টা শুরু করেছেন চাষিরা। কিন্তু জল বের করতে জানুয়ারি পেরিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। অন্য বছর জানুয়ারির আগেই বোরো ধানের চারা রোপণের কাজ শেষ হয়ে যেত। কিন্তু এ বার কী হবে সে নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর-১ ব্লকের গোপালপুর পঞ্চায়েতের সেলমাবাদ, ত্রিশূলবাঁধ, বড়বাঁধ গ্রামের অন্তত এক হাজার চাষি।
কেলেঘাই নদীবাঁধের পাড়ের এই চাষ-জমি এমনিতেই নদীখাতের সমান নিচু। বর্ষার জল প্রায় সারা বছর জমে থাকায় জমিগুলি একফসলি হয়েছে। সেই ফসল মানে বোরো মরসুমের চাষ। কিন্তু এ বার বর্ষার জল জানুয়ারিতেও নামেনি। পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের কাছ থেকে জল সরানোর ব্যাপারে কোনও নির্দিষ্ট আশ্বাসও মেলেনি। অগত্যা চাষিরা নিজেরাই বিশাল পরিমাণ জমি থেকে জল বের করতে ৪০টি পাম্প বসিয়েছেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কালীপদ শী, মাখন মান্না বলেন, “এলাকার কয়েক জন চাষি মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম চাষ করতে হলে পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের ভরসায় বসে থেকে লাভ নেই। তাই আমরাই পাম্প বসিয়ে জমির জল কেলেঘাইতে ফেলার ব্যবস্থা করেছি যাতে জমি তৈরি করা যায়।” কিন্তু তা করতেই জানুয়ারি পেরিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন চাষিরা। এর পর মাটি তৈরি, চারা রোপণ আছে। পঞ্চায়েত, প্রশাসন ও স্থানীয় বিধায়কের অবশ্য বক্তব্য, “সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে ৩১ জানুয়ারি ব্লকে চাষিদের নিয়ে সর্বদলীয় ভাবে বৈঠক হবে।” |
|
নিজস্ব চিত্র। |
জমি নিচু হওয়ায় বৃষ্টির জল বেরোতে পারে না। সম্প্রতি শীতেও ফের বৃষ্টির জেরে জমা জলের পরিমাণ বেড়েছে। জমির পাশে নদীবাঁধে সেলমাবাদের বেলতলায় একটি স্লুইস গেট আছে। তা দিয়েই জমির জল নদীতে বেরিয়ে যেত। কিন্তু এ বছর নদী ও জমির জলের উচ্চতা সমান থাকায় জমিতে জল দাঁড়িয়ে আছে। কাঁথি সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র স্বপন পণ্ডিত এবং ব্লকের যুগ্ম-বিডিও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী জানান, সেলমাবাদ থেকে নদীর মোহনার দিকে বেশ কিছু জায়গায় নদীর মূল প্রবাহে মাছচাষ ও জলসেচের জন্য বাঁধ দিয়ে নদীর জল ধরে রাখেন পটাশপুর, সবং ও ভগবানপুর এলাকার প্রায় ২০টি গ্রামের লোক। ওই বাঁধ দেওয়ায় এবং নাঙলকাটা এলাকায় নদীর একাংশে পলি জমে নদীখাত উঁচু হয়ে গিয়েছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই নদীতে জল যেতে পারছে না।
সেলমাবাদ গ্রামের ক্ষুদিরাম মাইতি, দীপক মান্না, ত্রিশূলবাঁধের গৌরহরি মিদ্যা, খোকনচন্দ্র বর্মনের অভিযোগ, “জমির জমা জল সেলমাবাদ ও ভাঙাদহ গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া চার কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সুতিখাল হয়ে এসে স্লুইস গেট মারফৎ নদীতে পড়ত। খালটি মজে গেলেও গত কয়েক দশকে প্রশাসন তা সংস্কারে উদ্যোগী হয়নি। অথচ শুধু নিকাশি নয়, সেচের কাজেও ব্যবহার হত খালটি।” চাষিদের কাছ থেকে সমস্যার কথা জানার পরে ইতিমধ্যে জলমগ্ন এলাকা ঘুরে দেখেন বিধায়ক জ্যোতির্ময় কর, পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাধিপতি শক্তিপদ সাউ এবং যুগ্ম বিডিও। এলাকার তৃণমূল নেতা সমীরণ মাইতি, পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের চন্দনা জানার দাবি, “সরকারি ভাবে সেচের খরচ দিতে হবে। সংস্কার করতে হবে ওই চার কিলোমিটার দীর্ঘ সুতিখালটি। তা না হলে আন্দোলন শুরু করবেন চাষিরা।” বিধায়ক ও বিডিও অমিতেন্দু পাল বলেন, “সমস্যার স্থায়ী সমাধানের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে এই খালটি সংস্কারের ভাবনা আছে। তার আগে জমি-সমস্যা সমাধানের জন্য চাষিদের নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|