|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা |
উড়ালপুল |
সম্প্রসারিত দুর্ভোগ |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
অফিস যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে বেরতে হয় শরৎ বসু রোডের বাসিন্দা সুমন বসুকে। তাঁর অফিস মল্লিকবাজার এলাকায়। কিন্তু গাড়ি নিয়ে ওইটুকু রাস্তা যেতেই রীতিমতো কালঘাম ছুটে যাচ্ছে তাঁর। কারণ, অফিসের সময় শরৎ বসু রোড এবং আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের সংযোগস্থলে এসে রোজই যানজটে পড়তে হয়।
একই রকম অভিজ্ঞতা পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা মহম্মদ ইউসুফেরও। মোটরবাইক নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই হরিশ মুখার্জি রোডের অফিসে যাতায়াত তাঁর। কিন্তু এজেসি বসু উড়ালপুলের র্যাম্প তৈরির কাজ শুরুর পর থেকে অফিস যেতে যা সময় লাগছে, তাতে রীতিমতো সমস্যা হচ্ছে। তাঁর কথায়: “এই রাস্তায় গত চার-পাঁচ বছর ধরে যাতায়াত করছি। ফ্লাইওভার তৈরির আগে বরং যানজট কম হত। তখন এত সময় লাগত না। কিন্তু ফ্লাইওভার তৈরির পর থেকেই রাস্তায় যেন হঠাৎ করে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। তার উপর যখন থেকে উড়ালপুলের র্যাম্প তৈরির কাজ শুরু হয়েছে, তখন থেকে অফিস সময়ে গাড়ি যেন নড়তেই চায় না।”
রাস্তার যানজট কমাতে তৈরি করা হয়েছিল এজেসি বসু উড়ালপুলটি। কিন্তু উড়ালপুলটি তৈরির পরেও রাস্তায় যানজট লেগেই রয়েছে। আর সম্প্রসারণের কাজ খুবই ধীর গতিতে এগনোয় তা যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে। অফিসের সময়ে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, বেকবাগান রো এবং সার্কাস অ্যাভিনিউয়ের ক্রসিংয়ে বর্তমান উড়ালপুলের সম্প্রসারণের ফলে যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে তাতে নাজেহাল হতে হয় নিত্যযাত্রী-সহ অফিসযাত্রীদের। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা কোনও ভাবেই উন্নয়নের বিরোধী নন। কিন্তু, উড়ালপুলটি ২০১১-র ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে এই কাজ শেষ হতে আরও বেশ কিছু দিন লাগবে। ভুগতে হবে তাঁদের। |
|
চৌরঙ্গি রোড বা জওহরলাল নেহরু রোড থেকে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড গিয়েছে মিন্টো পার্ক বা পার্ক সার্কাসের দিকে। বরাবরই এই রাস্তায় যান চলাচল বেশি। এই রাস্তার যানজট কমাতেই তৈরি হয় এজেসি বসু উড়ালপুল। ২০০৩ সালে এটির উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু যাঁরা শিয়ালদহ বা মল্লিকবাজার যেতে চান, তাঁদের এখন ফ্লাইওভারে না উঠে মিন্টো পার্ক হয়ে, বেকবাগান রো দিয়ে মল্লিকবাজার যেতে হয়। রাস্তাটিকে যানজট মুক্ত করে গতি আনতেই ঠিক করা হয়, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড থেকে উড়ালপুলের আর একটি বাহু (র্যাম্প) বের করে নিয়ে যাওয়া হবে থিয়েটার রোড ক্রসিংয়ে। এতে মল্লিকবাজার বা মৌলালি যেতে গাড়িগুলি মিন্টোপার্ক বা বেকবাগান মোড় দিয়ে না গিয়ে ফ্লাইওভার দিয়ে সরাসরি পৌঁছতে পারবে। একই সঙ্গে এজেসি বসু রোডের যানজটও কমবে।
বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের পর যেখান থেকে উড়ালপুলের র্যাম্প তৈরি শুরু হয়েছে, সেই জায়গাটি পাঁচ মাথার মোড়। রাস্তাটি যখন পার্ক সার্কাস থেকে মিন্টো পার্ক তথা রবীন্দ্রসদন অভিমুখী থাকে কিংবা রবীন্দ্রসদন থেকে পার্ক সার্কাসের দিকে যায়, তখন থিয়েটার রোড থেকে পার্ক সার্কাস অভিমুখী গাড়িগুলিকে পার করানোর জন্যও সিগন্যাল খোলা থাকে। আবার একই সঙ্গে বেকবাগান রো কিংবা সার্কাস অ্যাভিনিউ থেকে মল্লিকবাজার অভিমুখী গাড়িগুলিও এজেসি বসু রোড পেরিয়ে ঢুকে যায় থিয়েটার রোডের দিকে। উড়ালপুলের কাজের জন্য নির্দিষ্ট ভাবে এই জায়গায় এখন কোনও স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল কাজ করছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এই মোড়ে মাঝেমধ্যে ট্রাফিক কনস্টেবল বা সার্জেন্টের দেখা মিললেও বেশির ভাগ সময়ে অবশ্য তাঁদের দেখা যায় না। এই কারণে সকাল- বিকেল এবং দুপুরেরও ব্যস্ত সময়ে এই মোড়টি পেরতে রীতিমতো ঝামেলা পোয়াতে হচ্ছে তাঁদের। উড়ালপুলের কাজের জন্য এখন বেশ কিছুটা অংশে ফুটপাথ এবং রাস্তা ঘিরে কাজ হওয়ায় যানজট বাড়ছে। তা ছাড়া এখানে একাধিক স্কুল ও অফিস রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে তাদেরও। যানজটের কথা স্বীকার করলেও ট্রাফিককর্মী না থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ফ্লাইওভারের কাজের জন্যই আমার নির্দিষ্ট ওই জায়গা দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। ছোট গাড়ি ও ট্যাক্সি ওখান দিয়ে যাতায়াত করায় যানজট থাকছে। তবে কোনও জায়গাতেই সব সময় সার্জেন্ট থাকেন না। কিন্তু ওখানে ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে।” |
|
উড়ালপুলের মাত্র ৪২৫ মিটার র্যাম্প তৈরি করতে এত দেরি হচ্ছে কেন? জানা গিয়েছে, হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি) ২০১০-এর ফেব্রুয়ারি মাসে যখন এই র্যাম্প তৈরির কাজ শুরু করে, তখন বলা হয়েছিল এক বছরের মধ্যে কাজটি সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এজেসি বসু রোড আর বেকবাগান রো মোড়ে উড়ালপুলের কাজের জন্য সবে খোঁড়াখঁড়ির কাজ শুরু হয়েছে। বাকি অংশের কাজও যে সম্পূর্ণ হয়েছে, তা নয়।
কিন্তু এই কাজ শেষ করতে এত সময় লাগছে কেন? এইচআরবিসি-র ভাইস চেয়ারম্যান সাধন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “থিয়েটার রোড থেকে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড পর্যন্ত অংশে একাধিক লেন এবং একাধিক সিগন্যাল ব্যবস্থা থাকায় আমাদের ভাগ করে করে কাজ করতে হচ্ছে। ফলে যখন একটি অংশে কাজ চলছে, তখন বাকি অংশে কাজ করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া ওখানে বিভিন্ন স্কুল থাকায় আমাদের দেখেশুনে কাজ করতে হচ্ছে। এখন যা পরিস্থিতি তাতে আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।” পাশাপাশি, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “গোটা বিষয়টি নিয়ে এইচআরবিসি-র সঙ্গে কথা বলব।” |
|
|
|
|
|