|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর |
বিপদ-বাজার |
লাইনেই আছে... |
প্রসেনজিৎ পাঠক |
দু’দিক দিয়ে ছুটে যাচ্ছে ট্রেন। মাঝে চলছে সান্ধ্য বাজার। বাজারের জন্য হুক করে টানা হয়েছে রেলেরই বিদ্যুৎ। বাজারে অসংখ্য মানুষের জমায়েত। শুধু বাজারই নয়, যাত্রী-পারাপারও চলছে লাইনের উপর দিয়েই। দুর্ঘটনাও ঘটেছে। অভিযোগ, রেলের জমিতে এই অবৈধ বাজার বহু বছর ধরে চললেও উদাসীন রেল কর্তৃপক্ষ।
পানিহাটি পুর এলাকার আগরপাড়া রেলস্টেশনে বিকেল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত প্রায় এগারোটা পর্যন্ত চলে এই বাজার। ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের সোজাসুজি রেলের প্রায় ১০০ ফুট লম্বা ও ৪০ ফুট চওড়া জমিতে বসে বাজারটি। এর পূর্ব দিকে দু’টি রেললাইন ও তার পাশে সেনবাজার নামে আরও একটি স্থায়ী বাজার রয়েছে। বাজারের পশ্চিম দিকে আরও দু’টি লাইন ও মহাজাতি মোড়, নীলগঞ্জ রোড প্রভৃতি জনবহুল এলাকা। পশ্চিম দিকের অংশটি পানিহাটি পুরসভার ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত।
|
|
রেলযাত্রী ছাড়া বাজারের ক্রেতা মূলত এই দিকের বাসিন্দারাই।
এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রায় দু’দশক আগে বাজারটি ছিল না। তখন স্টেশনের পশ্চিম দিকের বাসিন্দাদের লাইন পার করে পূর্ব দিকের সেনবাজারে যেতে হত। পরে সন্ধেবেলা এই বাজারটি বসতে শুরু করে। ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে দিনে দিনে। এখন ওই বাজারে মাছ, মাংস, সব্জি সব মিলিয়ে কমবেশি জনা-পঞ্চাশ ব্যবসায়ীর দোকান কার্যত স্থায়ী হয়ে উঠেছে। ফলে সংলগ্ন এলাকায় ক্রেতাদের ভিড় ক্রমে বাড়ছে। রেলের তার থেকে হুক করে বিদ্যুৎ নিয়ে জ্বালানো হচ্ছে অনেক জোরালো আলো।
কিন্তু এ ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ এলাকার একাংশ বাসিন্দার। তাঁদের বক্তব্য, দুর্ঘটনায় ট্রেন লাইনচ্যুত হলে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। ওই অবৈধ বাজার দ্রুত সরানো উচিত। আবার স্থানীয় বাসিন্দা সাগরিকা মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাড়ি ফেরার পথে পছন্দসই সব্জি নেওয়ার দরকার হয়। সে ক্ষেত্রে এ বাজারটা সুবিধাজনক। সতর্ক হয়েই বাজার করি।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, “দীর্ঘ দিন বসছি। সমস্যা তো হয়নি। রেলওয়ে হকার্স প্ল্যাটফর্মের সদস্য আমরা। ইউনিয়ন যা বলবে তাই করব।”
|
|
আগরপাড়ার তৃণমূল পরিচালিত রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি তথা পানিহাটি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই ব্যবসায়ীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। বিকল্প জায়গাও রয়েছে। শুধু উদ্যোগের অভাবে পুনর্বাসন হয়নি।” পানিহাটি পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়: “ওই বাজারের জায়গা রেলের অধীন। রেলই উচ্ছেদে উদ্যোগী হোক।” পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের চারণ চক্রবর্তীও বলেন, “বিষয়টি রেল প্রশাসনের দেখা উচিত। পুনর্বাসনের প্রশ্ন উঠলে তখন ভাবা যাবে।”
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “রেলের জমি দখল করে বসা ওই বাজারের উপর রেলপুলিশের নজর আছে। ওরা না তুলে দিলে কিছু করা যাচ্ছে না। মানুষ যদি ওখান থেকে কেনাকাটা না করেন তা হলেও বাজারটি উঠে যায়, কিন্তু রেল-কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে মানুষের উপরে জোরাজুরি করতে পারেন না। বিদ্যুৎ-হুকিংয়ের বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|