|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা |
নৈশাবাস |
মাথার উপর ছাদ |
কৌশিক ঘোষ |
কলকাতা পুরসভা গৃহহীনদের জন্য উত্তর কলকাতায় নৈশাবাস তৈরির সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল। কিন্তু তা তৈরির জায়গা না পাওয়ায় এই প্রকল্প আটকে ছিল। অবশেষে, গ্যালিফ স্ট্রিটে শহরের হকারদের বসার জন্য নির্মিত ভবনের একাংশে গৃহহীন মহিলা ও শিশুদের জন্য এই নৈশাবাস তৈরি করা হল। নিয়ন্ত্রণের ভার পুরসভার হাতে থাকলেও নৈশাবাসটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে হস্তান্তর করবে পুরসভা। দক্ষিণ কলকাতার চেতলাতেও এ ধরনের একটি নৈশাবাস চালাচ্ছে পুরসভা।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গৃহহীনদের জন্য নৈশাবাস নির্মাণের পরিকল্পনা অনেক দিনের ছিল। কিন্তু জায়গা না পাওয়ার ফলে তা সম্ভব হয়নি। অবশেষে গ্যালিফ স্ট্রিটে আমরা জায়গা পাওয়ার পরেই দ্রুত নির্মাণ করেছি। কিছু দিনের মধ্যেই এখানে গৃহহীন মহিলা ও শিশুরা থাকতে পারবেন। দক্ষিণ কলকাতায় পুরসভা ইতিমধ্যেই একটি নৈশাবাস নির্মাণ করেছে।”
দেশের বিভিন্ন শহরে গৃহহীনদের জন্য নৈশাবাস নির্মাণের জন্য ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ মোতাবেক রাজ্য সরকার কলকাতায় কয়েকটি নৈশাবাস তৈরির পরিকল্পনা করে। কলকাতা পুরসভাকে এই নির্মাণকাজ করতে বলা হয়। তার পরেই পুরসভা মহিলাদের জন্য চেতলা হাট রোডে একটি নৈশাবাস তৈরি করে সেটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে হস্তান্তর করে। এর পরেই উত্তর কলকাতায় একই রকম একটি নৈশাবাস নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
|
|
পুরসভার এক আধিকারিক জানান, প্রথমে শহরের উত্তরে পুরসভা পরিচালিত কয়েকটি পুরনো স্কুলবাড়িতে নৈশাবাস তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের অন্যত্র সরানো নিয়ে সমস্যা হয়। ফলে বিষয়টি আটকে থাকে। পরে, পুরকর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, গ্যালিফ স্ট্রিটে হকারদের জন্য নির্মিত ভবনের একাংশে যেটি ফাঁকা পড়ে রয়েছে সেখানেই আপাতত চল্লিশ শয্যাবিশিষ্ট নৈশাবাস তৈরি করা হবে। এই প্রকল্পের কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। চেতলা হাট রোডের নৈশাবাসে একশো জন থাকতে পারেন।
শ্যামপুকুর কেন্দ্রের বিধায়ক এবং পুরসভার শিক্ষা দফতরের মেয়র পারিষদ শশী পাঁজা বলেন, “উত্তর কলকাতায় গৃহহীনদের জন্য নৈশাবাস খুব প্রয়োজন ছিল। পুরসভার স্কুলগুলিতে এটি করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেখানে নৈশাবাস করলে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি হবে। তাই রাজি হইনি। শেষে, গ্যালিফ স্ট্রিটেই নৈশাবাস করার প্রস্তাব দিই পুরসভাকে। এই নৈশাবাসে মহিলা ও শিশুরা বিনা পয়সায় রাত্রে থাকতে পারবেন। তবে নিয়ন্ত্রণ থাকবে পুরসভারই।” স্থানীয় কাউন্সিলর মঞ্জুশ্রী চৌধুরীর কথায়: “আপাতত এখানে ৪০ জনের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। পরে তা আরও বাড়ানোর ইচ্ছা আছে। ক’জন সত্যিকারের গৃহহীন তার তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে।”
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, গ্যালিফ স্ট্রিট এবং চেতলা হাট রোডের নৈশাবাসের পরিকাঠামো করতে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা। এই দু’টি নৈশাবাস ছাড়া পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটাতেও একটি নৈশাবাস নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য
সমাজকল্যাণ দফতর।
সেখানে মহিলা ও শিশু ছাড়া বৃদ্ধেরাও থাকতে পারবেন। বেলেঘাটার এই নৈশাবাসও খুব দ্রুত চালু হবে বলে এই দফতরের এক আধিকারিক জানান। রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “বেলেঘাটায় রাজ্য সরকারের যে ভবঘুরেদের আবাস রয়েছে সেখানেই আমরা একটি নৈশাবাস নির্মাণ করছি। কাজও চলছে।”
|
|
কলকাতা পুরসভার যুগ্ম কমিশনার শাহিদুল ইসলাম জানান, নিয়মানুযায়ী নৈশাবাসের পরিকাঠামো ও আসবাব তৈরির জন্য পুরসভা ও রাজ্য সরকার যৌথ ভাবে অর্থবরাদ্দ করবে। রক্ষণাবেক্ষণ করবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তিনি বলেন, “এই দুই নৈশাবাস নির্মাণের ক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ দফতরের সঙ্গে ইতিমধ্যেই অর্থবরাদ্দের বিষয়ে কথা হয়েছে। শহরে আরও ছ’টি নৈশাবাস নির্মাণের ব্যাপারেও আবাসন দফতরের কাছে অর্থ সাহায্য চেয়েছি।”
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে প্রশান্ত বারুই জানান, গ্যালিফ স্ট্রিটে গৃহহীনদের রাখার ব্যাপারে এই অঞ্চলে একটি সমীক্ষা করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী এই অঞ্চলে যে সমস্ত মহিলা গৃহহীন তাঁদের একটি তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা থেকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এখানে থাকতে দেওয়া হবে। অন্য দিকে, চেতলা হাটের নাইট শেল্টার যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অধীন, সেই সংস্থার পক্ষে সর্বাণী দাস রায় বলেন, “এই নাইট শেল্টারের পুরো পরিকাঠামোই কলকাতা পুরসভার। আমরা এটি রক্ষণাবেক্ষণ করি। এখানে গৃহহীন যে মহিলারা থাকেন তাঁদের অনেকেই মানসিক ভাবে অসুস্থ। আমাদের সংস্থা থেকেই তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। এখানে খাবারেরও ব্যবস্থা করি। তবে, আরও বেশি সংখ্যক গৃহহীন যাতে এখানে থাকতে পারেন তার জন্য ঘর বাড়ানো হচ্ছে।”
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|