|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
দুর্ভোগের যাত্রা |
ডুমুরের ফুল |
কৌশিক ঘোষ |
বেহালা চৌরাস্তা থেকে বজবজ। চৌরাস্তা থেকে বকুলতলা এবং ষষ্ঠীর মোড়। দীর্ঘ পথ। যাত্রী অনেক। কিন্তু বাস স্বল্প। দিনে দু’টি-একটির দেখা মিললেও রাতে প্রায় নেই। ভরসা বলতে অটো। রাতের দিকে তার সংখ্যাও কমে যায়। দীর্ঘ দিন পরিবহণের এই অব্যবস্থায় বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীরা নাজেহাল। যদিও বাসমালিকদের দাবি, যাত্রী থাকলেও বাস চালানোর খরচ বেড়ে যাওয়ায় রুটগুলিতে লাভ হচ্ছিল না। তাই কিছু রুটে বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে, আবার অনেক রুটে বাসের সংখ্যা কমে গিয়েছে।
বেহালা চৌরাস্তা থেকে সরশুনা যাওয়ার দীর্ঘ পথের অনেক জায়গাই ঘন জনবসতিপূর্ণ। গড়ে উঠেছে অনেক আবাসনও। বাসিন্দাদের জন্য এই রুটে একাধিক সরকারি এবং বেসরকারি রুটের বাস চলত। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, ক্রমেই বাসের সংখ্যা কমে গিয়েছে। কয়েকটি বাসরুট একেবারে উঠেই গিয়েছে। চৌরাস্তা থেকে বীরেন রায় রোড (পশ্চিম) বকুলতলার কাছে এসে দু’ভাগে ভাগ হয়েছে। একটি সরশুনার দিকে যায়। অন্যটি ষষ্ঠীর মোড়ের দিকে। এই এলাকায় সরকারি, বেসরকারি এবং মিনিবাস মিলিয়ে মোট ১৪টি বাসরুট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মাত্র দু’টি রুটের চারটি বাস চলাচল করে।
বেহালা চৌরাস্তার বাসিন্দা শুভঙ্কর ঘোষ বলেন, “বাস কমে যাওয়ায় যাতায়াত করা খুবই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। অটোর উপরেই মূলত নির্ভর করতে হয়।” শকুন্তলা পার্কের বাসিন্দা নন্দদুলাল পাড়ুইয়ের কথায়: “বাস না থাকার সুযোগ নিয়ে চলছে অটোর দৌরাত্ম্য। এক শ্রেণির অটোচালক নিজের খুশিমতো ভাড়া চাইছেন। বাধ্য হয়ে দিতে হচ্ছে।”
বাসরুট উঠে যাওয়ার কারণ কী? |
|
বিভিন্ন বাস সংগঠন সূত্রে খবর, বাসের রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে জ্বালানির খরচ অনেক বেড়েছে। তাই মালিকরা এই সব রুটে বাস বন্ধ করে দিয়েছেন। ২০০৪-এ রাজ্য পরিবহণ দফতর শহরের অনেক জায়গায় নতুন করে বাসের পারমিট দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এর পরে, ২০০৮-এ সরকারি নিয়মানুযায়ী, পনেরো বছর বা তার বেশি পুরনো বাস বাতিল হয়ে যাওয়ায় অনেকে আর নতুন বাস রাস্তায় নামাননি।
বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দীপক সরকার বলেন, “বাসমালিকেরা লোকসান করে বাস চালাতে চাইছেন না। এ ছাড়া শহরের মধ্যে নতুন করে পারমিট দেওয়া হচ্ছে না। শুধু নির্দিষ্ট কয়েকটি রুটেই নয়, সারা রাজ্য জুড়েই বাসের সংখ্যা কমেছে। নতুন যে ভি-৪ বাস চালানোর জন্য পরিবহণ দফতর অনুমতি দিচ্ছে সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণও খুব ব্যয়সাপেক্ষ।”
জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়: “আর্থিক ক্ষতির ফলেই বাস চালানো সম্ভব হচ্ছে না। কিছু বাস রুট একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অন্যান্য রুটেও বাসের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে।” যেমন, ১২সি/১ রুটেই ক’দিন আগে পর্যন্ত চলত ৩৫টি বাস। এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় অর্ধেক। |
|
পাবলিক মোটর ভেহিকল্স দফতরের সচিব তপন দাস বলেন, “অনেক রুটে বাস কমে যাচ্ছে ঠিকই। বেহালা চৌরাস্তা থেকে বজবজ এবং সরশুনা রুটে বাসের সংখ্যা কমে গিয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু এই বিষয়ে কেউ কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ এলে বিভিন্ন বাস সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে পারি। শহরে যেখানে বাস রুট ফাঁকা রয়েছে সেখানে এখন শর্তসাপেক্ষে বাসের পারমিট দেওয়া যেতে পারে। তবে সেখানে আধুনিক ভি-৪ বাস চালাতে হবে।”
কলকাতা পুরসভার ১২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শ্যামাদাস রায় বলেন, “বেহালা চৌরাস্তা থেকে সরশুনা হয়ে বজবজ পর্যন্ত বাস পাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সমস্যা আছে। সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করে স্থানীয় বিধায়ক এবং রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জানানো হয়েছে। এখানে নতুন একটি রুট তাড়াতাড়ি চালু হবে।”
রাজ্য পরিবহণ দফতরের সচিব বি পি গোপালিকা বললেন, “শহরের মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় বাস চালানোর অনুমতির ব্যাপারে কড়াকড়ি আছে। কিন্তু শহরতলির ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় বাস চালানোর ব্যাপারে পরিবহণ দফতর অনুমতি দিচ্ছে। বেহালার ক্ষেত্রে সমস্ত বিষয় পর্যালোচনা করে যে সমস্ত বাসরুট বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেখানে নতুন রুটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।”
|
বন্ধ বাসরুট |
কম চলছে |
• এস-২৬ (শকুন্তলা পার্ক-বিবাদী বাগ)
• এস-৩০ (সাতগ্রাম-হাওড়া)
• এস-২৮ (শকুন্তলা পার্ক-শিয়ালদহ)
• সি-৯ (কাঁকুড়গাছি-শকুন্তলা পার্ক)
• সি-৭ (হাজরা-সরশুনা)
• এল-৭বি (অক্সিটাউন-হাওড়া) |
• এস-২২ (সরশুনা-সল্টলেক)
• ৭৭ (অছিপুর-বজবজ-ধর্মতলা)
• ১৮ (সরশুনা-ধর্মতলা)
• ১৮এ (ডাকঘর-বিবাদী বাগ)
• ১৮বি (শকুন্তলা পার্ক-শিয়ালদহ)
• ব্যানার্জিহাট-মিল্ক কলোনি মিনি |
• ১৮এ/১ (ষষ্ঠীর মোড়-বিবাদী বাগ)
• ৭এ (সরশুনা-হাওড়া)
• ১২সি/১ (শিবরামপুর-হাওড়া)
• ১৮ডি (সরশুনা-হাওড়া)
• ১৮বি/১ (শিবরামপুর-রুবি)
• ১৮সি (সরশুনা-আনন্দপুর) |
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|