দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
মানে কে
বিধির বাঁধন
চেষ্টায় কোনও ত্রুটি নেই, অথচ একশ্রেণির পথচারীর অসহযোগিতায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে ট্রাফিক পুলিশের প্রয়াস মার খাচ্ছে। দড়ি দিয়ে রাস্তা আটকে পথচারীদের ভূগর্ভস্থ পথ ব্যবহার করার বা সিগন্যাল মেনে রাস্তা পারাপারের কথা বলছেন পুলিশকর্মীরা। কিন্তু কে কার কথা শোনে! পুলিশের সমস্ত অনুরোধ উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জোর করে দড়ি পেরিয়ে রাস্তা পারাপার করছেন পথচারীরা।
রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক রোড এবং যাদবপুর স্টেশন রোডের সংযোগস্থলে পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য প্রতি দিন এ ভাবেই চেষ্টা চালাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। সাধারণত কোনও পথ দুর্ঘটনার পরে প্রাথমিক ভাবে ট্রাফিক পুলিশের উদাসীনতাকেই দায়ী করা হয়ে থাকে। কিন্তু রাজা এস সি মল্লিক রোডে পথচারীদের একাংশের অসহযোগিতায় নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রীতিমতো নাজেহাল হচ্ছে পুলিশ।
দক্ষিণ শহরতলির একটি অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা রাজা এস সি মল্লিক রোড। যাদবপুর স্টেশন এবং এইট বি বাসস্ট্যান্ডের সংযোগস্থলে যানবাহন এবং পথচারীদের চাপ সারা দিনই খুব বেশি থাকে। এলাকাটি দুর্ঘটনাপ্রবণ বলেও চিহ্নিত। তাই পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য ১৯৯৫ সালে ওই এলাকায় রাজ্য পূর্ত দফতর একটি ভূগর্ভস্থ পথ নির্মাণ করে। পূর্ত দফতরের তরফ থেকে পথচারীদের বার বার ওই ভূগর্ভস্থ পথ ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। বড় বোর্ডে তা লিখেও রাখা হয়েছে। তবে তাতেও কোনও হেলদোল নেই পথচারীদের। ভূগর্ভস্থ পথ ব্যবহারের অভ্যাস করতে পারেননি তাঁরা। দড়ি দিয়ে পথ আটকে, হাত জোড় করে, কখনও নরম-কখনও বা একটু গরম সুর ব্যবহার করেও পথচারীদের ভূগর্ভস্থ পথ ব্যবহার করাতে পারছেন না কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ। তাঁদের কথায়: অনেক দিন ধরেই চেষ্টা চালানো হলেও পথচারীরা কথা শুনতেই চান না।
পথ দুর্ঘটনা প্রতিরোধ মঞ্চের আহ্বায়ক সবুজ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শহরের প্রতি দশটি জায়গার মধ্যে ন’টিতেই নিয়ম মেনে রাস্তা পার হওয়া যায় না। তাই যেখানে নিয়ম মেনে রাস্তা পার হওয়া যায় সেখানেও পথচারীরা নিয়ম ভেঙেই যাতায়াত করতে চান।” ভূগর্ভস্থ পথ ব্যবহার না করার পক্ষে অধিকাংশ পথচারীর যুক্তি, ওই পথে কোনও চলমান সিঁড়ি নেই। সিঁড়ি ভেঙে যাতায়াত করতে অনেক বেশি সময় লাগে। বরং রাস্তা পারাপার করা যায় অনেক সহজে, কম সময়ে। এই পথ দিয়েই নিয়মিত অফিসে যাতায়াত করেন সোনারপুরের বাসিন্দা ঝর্ণা সাহা। তাঁর মন্তব্য: ‘‘যাতায়াতের পথে অত ঝামেলা ভাল লাগে না, তাই সরাসরি রাস্তা পার হই।”
কিন্তু কেন নিয়ম মানতে চান না পথচারীরা? মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পথচারীদের এই ধরনের আচরণকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘মাস বিহেভিয়ার’, যা পরিবর্তন করা খুব কঠিন। তবে একটা চেষ্টা শুরু হয়েছে যা খুব ভাল। যদিও এই চেষ্টা বছরে দিন সাতেকের জন্য করে লাভ নেই। ধারাবাহিক ভাবে করতে পারলেই এত দিনের অভ্যাসে পরিবর্তন আসবে।”
রাজা এস সি মল্লিক রোড এবং যাদবপুর স্টেশন রোডের সংযোগস্থলটি এমনিতেই সঙ্কীর্ণ বলে জানান কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ওই পয়েন্ট দিয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য এস সি মল্লিক রোডে যানবাহনের গতি ব্যাহত হয়। এ ছাড়া, আমরা চাই পথচারীরা যাতে দুর্ঘটনার কবলে না পড়েন। তাই তাঁদের ভূগর্ভস্থ পথ ব্যবহার করাতে উদ্যোগী হয়েছি। নিরাপদে যাতায়াতের জন্য পথচারীদের উচিত ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করা।”

ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.