পূর্ব কলকাতা
দুই চিত্র
বেহাল সংযোজন
যে রাস্তা তৈরি হয়েছিল তা এখন ভাঙাচোরা। বর্ষাকালে হাঁটু-জলের মধ্য দিয়ে আধ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে বড় রাস্তায় পৌঁছতে। পর্যাপ্ত আলো নেই। এই রাস্তা পেরিয়েই কলেজে যেতে হয় পড়ুয়া ও শিক্ষকদের। অভিযোগ উঠেছে, এখানকার পরিকাঠামোর উন্নয়নের বিষয়ে প্রশাসন উদাসীন। অথচ, সল্টলেকে বছরভর রাস্তা মেরামত হয়।
এমন অভিযোগ শুধু মহিষবাথানের কলেজ ছাত্রী সুনয়নী মণ্ডলেরই নয়, উন্নয়নের প্রশ্নে বিধাননগর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ১ নম্বর ওয়ার্ডই নয়, ১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড অর্থাৎ, সব ক’টি সংযুক্ত এলাকার উন্নয়ন নিয়েই অভিযোগ উঠেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ষোলো বছর পার হয়ে গেলেও সংযুক্ত এলাকায় আজও পর্যাপ্ত পরিকাঠামো তৈরি হল না। আজও ঘরে ঘরে জল, বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। রাস্তার অবস্থা তথৈবচ। যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে সাইকেল বা রিকশা। স্বাস্থ্যব্যবস্থাও অনুন্নত। অথচ তার পাশেই ঝাঁ-চকচকে বিধাননগর ও ক্রমবর্ধমান নিউটাউন। প্রশাসনিক পরিচিতিতে বিধাননগর পুরসভার সংযোজিত এই অংশটি ১৯৯৫-এর আগে পর্যন্ত রাজারহাট ও ভাঙর বিধানসভা এলাকার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত নয়াপট্টি, মহিষবাথান, সর্দারপাড়া, পোলেনাইট এলাকায় গেলেই পরিকাঠামোর অভাব স্পষ্ট। অথচ তার মধ্যেই বেড়ে চলেছে বসতির সংখ্যা। আবার ১৭ থেকে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত সুকান্তনগর থেকে কুলিপাড়াতেও ছবিটা স্পষ্ট। কুলিপাড়ার রাজু মণ্ডলের কথায়, “এক ঘণ্টা হেঁটে ই এম বাইপাসে পৌঁছনো যায়। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে।”
মহিষবাথান, সর্দারপাড়া, পোলেনাইট, কুলিপাড়া, নাওভাঙা, উত্তর গরুমারা, ছয়নাবি এলাকা মূলত গ্রামীণ, বলা ভাল ভেড়ি-অধ্যুষিত। এখনও সর্বত্র নিকাশির ব্যবস্থা হয়নি। জল বা বিদ্যুৎ এলাকায় পৌঁছলেও বাড়ি বাড়ি তা সরবরাহ করা হয়নি বলেই অভিযোগ। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, সেই সুযোগে হুকিং চলছে লাগাতার।
বাসিন্দাদের কথার সারবত্তা কোথায়? একটি ছোট্ট তথ্যেই তার প্রমাণ মেলে। সংযুক্ত এলাকা, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের ইলা নন্দী। সে ওয়ার্ডে বার্ষিক সাধারণ সভাই করতে পারেনি ওয়ার্ড কমিটি। তাঁদের অভিযোগ, গত এক বছরে পুরসভা অনুমোদন করলেও কোনও কাজই হয়নি সে ওয়ার্ডে।
একই পুরসভার মধ্যে এক দিকে পরিকল্পিত উপনগরী, অন্য দিকে কার্যত গ্রামীণ এলাকা। বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষ জানান, ওই এলাকার পরিকাঠামোর উন্নয়নে কাজ শুরু হয়েছে। নগরোন্নয়ন দফতর কাজ করছে। জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন প্রকল্পের আওতায় কাজ শুরু হয়েছে।
বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (পূর্ত) অনুপম দত্ত অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, “রাস্তা বেহাল, কারণ স্যুয়ারেজের কাজ হয়েছে। সেই কাজের সঙ্গে রাস্তাও মেরামত করবে বলেছিল নগরোন্নয়ন দফতর। অনেক বার পুরসভার তরফে তাঁদের বলা হয়েছে। কিন্তু রাস্তা মেরামত হয়নি। ফের ওই দফতরের সঙ্গে আলোচনা করব।”
পুরসভায় বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের ইলা নন্দী বলেন, “বাম পুরবোর্ড রাস্তা তৈরি, বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহের কাজ করেছিল। এখন বাড়ি বাড়ি তা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। মূলত ওভারহেড ট্যাঙ্কের প্রকল্পটির কাজ এগোয়নি বলেই সমস্যা।” তিনি আরও বলেন, “মূলত ভেড়ি ও গ্রামীণ এলাকা। রাস্তা আয়তনে খুব চওড়া নয়। ফলে অটো কিংবা রিকশা ছাড়া বড় গাড়ির যাতায়াত করা মুশকিল।”
বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর কথায়: “সংযুক্ত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বেশি করে কাজ করতে হবে। রাতারাতি হবে না। পর্যায়ক্রমে উন্নয়নে কাজ করা হবে।” পাশাপাশি, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “রাস্তার কাজ দ্রুত করতে হবে। কারণ, মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। উন্নয়নের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.