ট্রেভর জেমস মর্গ্যান শুক্রবার সকালে অনুশীলন শুরু করার সময় প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রস্তুতি সেরে ফোর্ট উইলিয়ামের সেনা ছাউনিতে ফিরছিল যুদ্ধ বিমান।
ইস্টবেঙ্গলের ‘বিমান’ অবশ্য আই লিগের খেতাবের দৌড়ে সবে ‘টেক অফ’ করতে শুরু করেছে। আজ শনিবার তাদের ডানা মেলে আকাশে ওড়ার সুবর্ণ সুযোগ। হেরে, ড্র করে হঠাৎ-ই ঝড়ের মুখে পড়ে যাওয়া টোলগে-পেনরা একটা মেঘমুক্ত আকাশ চাইছিলেন। পেয়েও গিয়েছেন। দুর্বল পৈলান অ্যারোজের বিরুদ্ধে জেতার পর আজ লিগ টেবিলের সব থেকে নীচের দল হ্যাল সামনেএর চেয়ে স্বস্তিদায়ক আকাশ লাল-হলুদের ‘পাইলট’ মর্গ্যান পাবেনই বা কোথায়?
তবুও সুব্রত ভট্টাচার্যর জুতোয় পা গলাতে চাইছেন না ট্রেভর জেমস মর্গ্যান। বৃহস্পতিবার মারগাওতে স্পোর্টিং ক্লুবের বিরুদ্ধে হঠাৎ-ই স্ট্র্যাটেজি বদলে ডুবেছিলেন মোহনবাগান টিডি। ব্রিটিশ কোচ সেই পথে হাঁটতে নারাজ। ঝলমলে রোদ্দুর পেয়েও নিজের অঙ্কেই এগোতে চাইছেন তিনি। ফলে যে টিমকে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে গোলের মালা পরিয়েছিলেন সেই দলের বিরুদ্ধেও তাঁর ছক অপরিবর্তিত৪-৪-১-১। পুণে, পৈলান ম্যাচের মতোই ঘুঁটি সাজাচ্ছেন মর্গ্যান। সামনে টোলগে ওজবে, অস্ট্রেলীয়র পিছনে নাইজিরিয়ান পেন। হঠাৎ হঠাৎ বিপক্ষ রক্ষণে ঢুকে আগুন জ্বালিয়ে ছারখার করার জন্য। তারপর মেহতাব-সঞ্জু-ভাসুম-পাইতে। আগের ম্যাচের দলে বদল মাত্র দু’টো। স্টপারে এ বারের আই লিগে অভিষেক ঘটছে সুনীলকুমারের। লেফট ব্যাকে সৌমিক দে। “বাধ্য হয়েই ওই বদল ঘটাতে হচ্ছে টিমে। উপায় নেই,” কপালে চিন্তার বলিরেখা ফুটিয়ে বলে দিলেন লাল-হলুদ কোচ। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, যে টিমকে আট গোল দিয়েছেন কয়েক সপ্তাহ আগে তাদের এ বার ক’গোল মারতে চান? “এক গোল হলেই যথেষ্ট। চাই তিন পয়েন্ট। সেটা হলেই হল।”
|
গত উনিশ মাসের মর্গ্যানকে যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানেন পেশাদারি মোড়কে নিজেকে মুড়ে রাখতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। চেপে ধরলে রেগে যান। তবে সেটাও মনে হয় আরোপিত। কড়া প্রশ্নের দিক বদলে দেওয়ার জন্যই এই রাগ। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রশ্ন জাগছিল যে টিম এ বারের লিগে পনেরোটি ম্যাচের মধ্যে একটিও জেতেনি, তিনটি ড্র-র বাইরে কোনও পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারেনি, তাদের বিরুদ্ধে এই বাড়তি সতর্কতা কেন? টিমের অন্দর মহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পরের তিনটি মহা গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধচার্চিল ব্রাদার্স (মারগাও) ও ঘরের মাঠে প্রয়াগ ইউনাইটেড এবং মোহনবাগান ম্যাচের আগে সামান্যতম ঝুঁকি নিতে নারাজ তিনি। আলু, পটল, কপির মতোই মর্গ্যানের হাতে বিশাল চোটের ফর্দ! বলজিৎ, নওবা, রবিন, গুরবিন্দর, রবিন্দর, রবার্ট, রাজু..। তবে লাল-হলুদ কোচকে বেশি ভাবাচ্ছে উগা ওপারার একটা হলুদ কার্ড! আর একটা হলুদ কার্ড দেখলেই পরের ম্যাচে খেলতে পারবেন না বড় চেহারার নাইজিরিয়ান স্টপার। আর উগা নেই মানেই বেটো, ইয়াকুবু বা ওডাফার সামনে লাল-হলুদ রক্ষণের হাল কী হবে তা তো সবারই জানা।
ব্রিটিশরা যুদ্ধে নামার আগে কখনও নিজের অন্দর মহলের খবর বাইরে বেরোতে দেন না। মর্গ্যান তাঁর ব্যতিক্রম হন কী করে? কিন্তু তাঁর অধিনায়ক সঞ্জু প্রধান আবেগ চেপে রাখবেন কী করে? “মোহনবাগান ম্যাচ হেরে যাওয়ায় আমাদের এখন জেতাটা খুব দরকার। যে করেই হোক জিততে হবে। সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে।” মর্গ্যানের না বলা স্বপ্ন বেরিয়ে আসে সিকিম মিডিওর মুখ থেকে। ঘিরে রাখা মিডিয়া যখন সঞ্জুর ‘জবানবন্দি’ ক্যামেরাবন্দি করছে, তখন তা আবার ক্যামেরায় তুলে রাখতে দেখা গেল সোমবাড়িয়া গ্রাম থেকে আসা সঞ্জুর পরিবারের লোকজনদের। সিকিমের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা তাদের ছেলের আলোর নীচে দাঁড়ানো দেখে সে কী উচ্ছ্বাস। চাপ থেকে বেরিয়ে আসার পর ইস্টবেঙ্গল অনুশীলনেও ফুরফুরে মেজাজ। হেয়ার স্টাইল বদলাবার পর অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির উত্তমকুমারের মতো দাড়ি রাখতে শুরু করেছেন টোলগে। বেঙ্গালুরুতে হ্যালের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক-সহ চার গোল করেছিলেন। এ বারও সে রকম কিছু করার প্রত্যাশায় তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন “ওয়ান স্ট্রাইকারে খেলাটা বেশ উপভোগ করছি। গোলও পাচ্ছি। ”
টোলগেরা যখন ‘সফল’ হওয়ার জন্য মরিয়া, তখন সবার অজান্তেই পাশের মহমেডান মাঠে অনুশীলন করে ফেললেন হ্যালের ফুটবলাররা। আই এফ এ তাদের যুবভারতী দিতে চেয়েছিল অনুশীলনের জন্য। কিন্তু অবনমনে চলে যাওয়া ত্যাগরাজের দল সেই সুযোগটাই নিল না। আসলে অফিস ক্লাবটি ধরেই নিয়েছে আর কিছু হওয়ার নেই। পরের বার নেমে যেতেই হবে। হ্যাল কোচ ত্যাগরাজের গলাতেও তারই ছোঁয়া। বলেও দিলেন, “ইস্টবেঙ্গল খুবই ভাল দল। দেখি এক পয়েন্ট পাওয়া যায় কি না।”
মর্গ্যানও ধরে নিয়েছেন, পায়ের জঙ্গল তৈরি করে এক পয়েন্টের খেলাই খেলবে হ্যাল। সে জন্যই তা ভাঙার নানা মুভ অনুশীলনও হল এ দিন। কারণ টোলগেদের কোচ জানেন, এখন পয়েন্ট নষ্ট মানেই আবার চাপ। আবার বিক্ষোভ। আবার ঝামেলা।
|
শনিবারে আই লিগ
ইস্টবেঙ্গল: হ্যাল
(যুবভারতী ২-০০) |