ফসল বাঁচাতে গিয়ে হাতির হানায় মৃত্যু হল এক চাষির। মৃতের নাম শ্যামল ঘোষ (৩৮)। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার ধানশোল গ্রামে।
এ নিয়ে নতুন বছরে দলমার দলের আক্রমণে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে বড়জোড়ার লক্ষ্মীনারায়ণপুরে এক ব্যক্তিকে পিষে-আছড়ে মেরেছিল হাতির দল। শুক্রবার ভোরে দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে বিষ্ণুপুর ও গড়বেতা সীমান্তের গ্রাম ধানশোলে। স্থানীয় সূত্রের খবর, বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহ রেঞ্জ এলাকার পিয়ারডোবা নাচনগ্রাম থেকে ৫০টি হাতির দল গড়বেতার ধাদিকা বিটের ধানশোল গ্রামে ঢুকতে গেলে জমির ফসল বাঁচাতে চাষিরা কার্যত ‘ব্যারিকেড’ গড়ে তোলেন। তখনই একটি দাঁতাল শ্যামলবাবুকে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে। বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই শ্যামলবাবু মারা যান।
হাসপাতাল সুপার রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “শুঁড়ে তুলে আছাড় মারায় ৪২ বছর বয়সী শ্যামল ঘোষের সারা শরীরের হাড় কার্যত গুঁড়ো হয়ে গিয়েছিল। আমরা তাঁর চিকিৎসার সুযোগই পাইনি। ময়না-তদন্তের পর দেহটি পরিবারের লোকজনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।” মৃতের কাকা বলরাম ঘোষ এ দিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “দু’ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নাগাতার হাতির দলটা হামলা করছে। বিঘার পর বিঘা ধান আলু-সব্জি গিয়েছে হাতির পেটে। সামান্য যেটুকু আলু জমিতে ছিল আমরা তা বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু জ্বলন্ত মশালকেও ভয় না পেয়ে একটা দাঁতাল আমাদের দিকে তেড়ে আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শ্যামলকে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারল। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ওকে বাঁচাতে পারলাম না।” পশ্চিম মেদিনীপুরের রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “১৫ দিনের মধ্যে হাতির দলকে পুরুলিয়া হয়ে দলমায় ফেরানোর জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তাতেও হাতির দলকে সরানো সম্ভব না হলে বিকল্প পরিকল্পনা নেওয়া হবে।”
এ বার দলমা থেকে প্রায় ১২৫টি হাতির দল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ঢুকেছে। দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে হাতিগুলি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তাণ্ডব চালাচ্ছে। কখনও পৌঁছে যাচ্ছে বাঁকুড়া জেলাতেও। বিঘার পর বিঘা জমির ফসল নষ্ট করছে। বাড়ি ভাঙছে। সঙ্গে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা হিসাবে ধরলে কেবলমাত্র রূপনারায়ণ বনবিভাগ এলাকাতেই ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল চলতি মরসুমে। এর আগে হুমগড় ও আমলাগোড়ায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে হাতির হামলায়। আহত হয়েছেন প্রায় ৮ জন। জেলা জুড়ে কয়েকশো একর জমির ফসল নষ্ট করেছে দলমার পাল। আগে মাঠে ধান ছিল, সেই ধান খেয়েছে। এখন মাঠে রয়েছে আলু, আখ ও বিভিন্ন সব্জি। সেই সমস্ত খেয়ে সাবাড় করছে হাতির দল। শস্যহানি ও একাধিক প্রাণহানির ঘটনার মানুষের ক্ষোভ চরমে উঠেছে। মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে দেখে যৌথ অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন দফতর। মেদিনীপুর, রূপনারায়ণ ও বাঁকুড়া দক্ষিণ বন বিভাগের কর্মীদের পাশাপাশি পেশাদার হুলাপার্টির সদস্যরাও থাকবেন যৌথ অভিযানে। সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য ও গ্রামবাসীদেরও থাকার আবেদন জানাবে বন দফতর। ডিএফও বলেন, “এক সঙ্গে বহু মানুষ হুলা জ্বালিয়ে, পটকা ফাটিয়ে হাতির দলকে তাড়াবে। একটানা অভিযানে সোজা পুরুলিয়া হয়ে দলমায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারপরেই শেষ হবে অভিযান।” ডিএফও আরও বলেন, “জঙ্গল লাগোয়া এলাকার মানুষজনদের সতর্ক করা হবে। যাতে অভিযান চলাকালীন সন্ধের পর ওই সব এলাকার মানুষ বাইরে না বেরন।” এর আগে বারবার চেষ্টা চালিয়েও হাতির দলকে নড়ানো যায়নি। এ বারও যদি বিফল হতে হয়? ডিএফও বলেন, “সেক্ষেত্রে কুনকি নিয়ে আসার পাশাপাশি দলের দাঁতাল হাতিকে ঘুমপাড়ানি গুলি দিয়ে অজ্ঞান করে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে নিয়ম মেনে সরকারের অনুমতিও নেওয়া হবে। এ ভাবে বিরক্ত করলে হাতির দল কিছুতেই থাকবে না। তবে, প্রথমে সাধারণ অভিযান চালানো হবে। তাতে নিতান্তই কাজ না হলে, বিকল্প পথ নেওয়া হবে।” |