|
|
|
|
হাওড়া জেলায় ১০০ দিনের কাজ |
মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জেরে গতি এলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সংশয় |
নুরুল আবসার • উলুবেড়িয়া |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের পর হাওড়া জেলায় গতি এসেছে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে। অন্তত সরকারি তথ্যে সেটাই জানা গিয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে যত টাকার কাজ হয়েছে তার তুলনায় ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে টাকা খরচের পরিমাণ বেড়েছে অনেকটাই। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী নভেম্বর মাসের শেষে জেলা ও ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে তিনি অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে গতি আনার জন্য উদ্যোগী হতে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের এই অগ্রগতি মুখ্যমন্ত্রীর ওই সফরের ফল বলেই জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের অনুমান।
গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত জেলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে টাকা খরচের হার ছিল শোচনীয়। ওই মাস পর্যন্ত মজুরেরা গড়ে কাজ পেয়েছিলেন মাত্র ১১ দিন। মাসে গড়ে দেড় কোটি টাকার মতো খরচ হচ্ছিল। চিত্রটি পাল্টে যায় ডিসেম্বর থেকে। এক লাফে বেড়ে ওই মাসে জেলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প খরচ হয়েছে ৩ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। জানুয়ারি মাসের প্রথম ১৫ দিনে খরচ হয়েছে ১ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা। মাসের শেষে খরচের পরিমাণ চার কোটিতে পৌঁছাবে বলে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের ধারণা। এই হারেই যাতে টাকা খরচ করা যায় সেই মতো বিভিন্ন ব্লককে প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
যদিও জেলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেল-এর এক আধিকারিক জানান, এই জেলায় ২০১১-১২ অর্থ বছরের জন্য ৪২ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। যেহেতু অর্থ বছরের শুরুতে টাকা খরচের হার আশানুরূপ ছিল না, তাই শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো সম্ভব হবে না। তবে ওই আধিকারিকের দাবি, চলতি আর্থিক বছরে ২৪ কোটি টাকা খরচ করা সম্ভব হবে। এটা হলেও তা হবে গত বছরের তুলনায় অনেকটা বেশি। গত বছর খরচ হয়েছিল প্রায় ২০ কোটি টাকা।
ডিসেম্বর থেকে আরও বেশি জবকার্ডধারী যাতে কাজ পান সেইমতো করে প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। এর আগে যে সব প্রকল্প তৈরি হচ্ছিল সেগুলি ছিল কংক্রিটের ঢালাইভিত্তিক। তাতে উপকরণের ভাগ ছিল বেশি। শ্রমিকেরা কাজ কম পাচ্ছিলেন। বর্তমানে নদী বাঁধ মেরামত, খাল কাটা প্রভৃতি কাজ অনেক বেশি করা হচ্ছে। ফলে এইসব প্রকল্পের পুরোটাতেই শ্রমিকেরা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, চলতি আর্থিক বছরের বাকি মাসগুলিতে এমনভাবে কাজ করাতে হবে যাতে বর্তমান গড় ১৯ দিন বেড়ে অন্তত ৫০ দিনে দাঁড়ায়। হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তার অবশ্য বক্তব্য, গোড়ার দিকে শ্রমদিবস এতটা কম ছিল যে সেই ঘাটতি পূরণ করে শ্রমদিবসের গড় ৫০ দিনে পরিণত করা কার্যত অসম্ভব। তবে যে হারে কাজ হচ্ছে তাতে শ্রমদিবস বর্তমান গড় থেকে অনেকটাই বাড়বে। মূলত যে সব ব্লক বেশ ভাল কাজ করছে সেগুলি হল, শ্যামপুর ১ এবং ২, বাগনান ২, উলুবেড়িয়া ২, আমতা ২ এবং উদয়নারায়ণপুর। অন্য দিকে হাওড়া সদর মহকুমার মধ্যে ভাল কাজ করছে পাঁচলা এবং জগৎবল্লভপুর।
বিডিওরা অনেকেই সরাসরি প্রকল্প এলাকায় চলে যাচ্ছেন। কাজের তদারকি করছেন। একদিকে তাঁরা যেমন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে টাকা দিয়ে দিচ্ছেন, তেমনই পরবর্তী কিস্তির টাকা যাতে জেলা প্রশাসন থেকে চলে আসে সে বিষয়েও তদ্বির করছেন। আগে এই বিষয়গুলিতে প্রশাসনিক গাফিলতি ছিল বলে জেলার ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘সেল’ সূত্রের খবর।
তবে এ সব সত্ত্বেও কিছু অসুবিধা অবশ্য রয়েছে। বহু গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রয়োজনের তুলনায় নির্মাণ সহায়ক, সহায়ক এবং সচিব নেই। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প তৈরি থেকে শুরু করে কাজের তদারকি, মজুরদের বেতন ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রভৃতি কাজ এই সব কর্মীরাই করে থাকেন। এই পদগুলি শূন্য থাকায় কাজের ক্ষেত্রে বেশ অসুবিধা হচ্ছে বলে বিডিও-রা জানিয়েছেন। কর্মীর অভাব না-থাকলে কাজের অগ্রগতি আরও ত্বরাম্বিত হত বলে তাঁরা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলাশাসক সংঘমিত্রা ঘোষ বলেন, “প্রকল্পে গতি এসেছে। তবে কর্মীর অভাবও রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কিছু করার নেই। পঞ্চায়েত সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পদগুলি পূরণ করবে রাজ্য সরকার।” |
|
|
|
|
|