ত্রিপুরার হাওড়া ও গোমতী নদীর নাব্যতা বাড়িয়ে বাংলাদেশের কয়েকটি নদীর সঙ্গে যুক্ত করে জলপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। ভৌগোলিক কারণে স্বাভাবিক ভাবেই ত্রিপুরার সঙ্গে ভারতের অন্য অংশের যোগাযোগ ক্ষীণ। পূর্ব পাকিস্তান, পরে বাংলাদেশের আবির্ভাবের কারণেই এই ‘বিচ্ছিন্নতা’ ক্রমশ বেড়েছে। কিন্তু ত্রিপুরার গোমতী ও হাওড়া নদীর নাব্যতা বাড়িয়ে জলপথে আন্তর্জাতিক পরিবহণ ব্যবস্থার সুযোগ তৈরির মাধ্যমে এই ‘বিচ্ছিন্নতা’ দূর করতে চাইছে ভারত সরকার। পরিবহণ মন্ত্রী মানিক দে বলেন, রাজ্য সরকার গোমতী ও হাওড়া নদীর নাব্যতা বাড়িয়ে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে মালবাহী জলযান নিয়ে যাওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। জলপথের এই প্রকল্পটি তৈরি হবে ত্রিপুরার জিরানিয়া থেকে হাওড়া নদী হয়ে বাংলাদেশের তিতাস নদী পর্যন্ত এবং মহারানি ব্যারেজ থেকে গোমতী নদীর নাব্যতা বাড়িয়ে বাংলাদেশের মেঘনা
নদী পর্যন্ত।
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে রেলমন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা, রেল ইন্ডিয়া টেকনো ইকোনমিক সার্ভিসেস (রাইটস) এ বিষয়ে একটি প্রাথমিক সমীক্ষা চালিয়েছে। তারই ভিত্তিতে রাইটস তৈরি করছে একটি বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর)।
ডিপিআর খতিয়ে দেখে ভারত-বাংলাদেশ, দুই সরকার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ত্রিপুরার হাওড়া নদী হয়ে বাংলাদেশের তিতাস নদী পর্যন্ত এবং গোমতী নদী হয়ে বাংলাদেশের মেঘনা নদী যুক্ত করা যাবে কি না তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। ডিপিআরের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা যদি প্রকল্পটি রূপায়ণের পক্ষে মত দেন, সে ক্ষেত্রে আশা করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার এগিয়ে আসবে প্রকল্পটির বাস্তবায়নে। রাজ্যে পরিবহণ দফতরের সচিব কে আম্বুলি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রাথমিক স্তরে মালবাহী জলযান চালাবার ব্যবস্থা হবে, পরে সব ঠিকঠাক চললে যাত্রী-পরিবাহী জলযানও চলতে পারে। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মানিক দে জানান, ত্রিপুরার নদীর নাব্যতা বাড়িয়ে বাংলাদেশের তিতাস ও গোমতী নদীপথে আন্তর্জাতিক জলপথে যোগাযোগ তৈরি করা যাবে কি না তার সবটাই নির্ভর করছে ডিপিআর-এর উপর।
উল্লেখ্য, রাজ-আমলে ত্রিপুরার সঙ্গে এক সময়ে নদীপথে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে নদীগুলির নাব্যতা কমে যাওয়ায় এবং রাজনৈতিক কারণে দু’দেশের জলপথ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বলাই বাহুল্য, এ রাজ্যের বহু সমস্যা মিটতে পারে বাংলাদেশের সদিচ্ছায়। বাংলাদেশ যদি অনুমতি দেয় তবে বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতীয় মূল ভূখণ্ড, আরও কাছাকাছি আসতে পারে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও সহজ ও সম্প্রসারিত হয়। |