বিহারে জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউআল মিশনের (জেএনএনইউআরএম) প্রথম পর্যায়ের কাজের সময়সীমা শেষ হতে চলেছে। অর্থ বরাদ্দ করা নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু কাজ চলছে একেবারেই ঢিমে তালে। কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পে উন্নয়ন ঘটানোর জন্য ‘মিশন শহর’ হিসেবে বেছে নেওয়া হয় রাজধানী পটনা এবং তীর্থনগরী বুদ্ধগয়াকে। কিন্তু এই দুই শহরেই কাজের অগ্রগতি একেবারেই হতাশাজনক। দু’টি শহরের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ব্যয় ৭২৫ কোটি টাকার উপর ধরা হলেও অবস্থা এমনই যে, এর মধ্যে কেবল মাত্র ৫০০ কোটি টাকার কাজ কোথাও শুরু হয়েছে বা হতে যাচ্ছে। অথচ খাতায়কলমে এই প্রকল্পের কাজ আগামী বছরেই শেষ হওয়ার কথা।
অবস্থাটা যে আশাপ্রদ নয় তা প্রকারন্তরে কবুল করে নেন বিহারে নগরন্নোয়ন দফতরের প্রধান সচিব শশী শেখর শর্মা। শর্মা এই প্রকল্পের জাতীয় কার্যকরী কমিটিরও সদস্যও বটে। তাঁর কথায়, “রাজ্যে এই কাজের অগ্রগতি বিশেষ ভাল না।” আগামী বছর এই প্রকল্প শেষ হয়ে যাচ্ছে ঠিকই। তবে রাজ্য থেকে আমরা চেষ্টা করছি এর মেয়াদ বাড়ানো যায় কিনা।”
কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পে মোটা টাকা বরাদ্দ করা হয় পরিবহণ, সড়ক, নিকাশি ব্যবস্থা ও পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থার পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য। কিন্তু বিহারের ছোট শহরগুলিকে বাদ দিলেও ‘মিশন শহর’-এর যা হাল তাতে স্পষ্ট, পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্য এই প্রকল্পের রূপায়ণে অনেকটাই পিছিয়ে।
যেমন, রাজধানী পটনায় পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে এই প্রকল্পে ৪২৬ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছিল। তার মধ্যে বরাদ্দ হয়েছে ৩২০ কোটি টাকার মতো। কিন্তু আসল কাজ মোটেও এগোয়নি। সবে মাত্র টেন্ডার ডাকা হয়েছে। অন্য কাজে হালও একই রকম। রাজধানী শহর হওয়া সত্ত্বেও পটনায় চারিদিকে আর্বজনায় ভর্তি। বর্জ্য পদার্থ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রায় ৩৭ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছিল। বরাদ্দ হয়েছিল ২৩ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে কেবলমাত্র কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। কাজ শুরুই হয়নি।
হাল খারাপ পযর্টন কেন্দ্র তথা বিখ্যাত তীর্থস্থান বুদ্ধগয়ারও। দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভক্ত ও পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। এ শহরের পরিবহণ ব্যবস্থার পরিকাঠামো উন্নয়নে ৬৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা খরচ ধরা হয়। বরাদ্দ হয়েছে ৩৩ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। কিন্তু হাল এতটাই খারাপ যে টেন্ডারে কেউ অংশ নেননি। ফলে পুরো টাকাটাই রয়ে গিয়েছে। এখানকার নিকাশি ব্যবস্থার হাল ফেরাতে প্রায় ৯৬ কোটি খরচ ধরা হলেও বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় ৭২ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রেও কাজ করার জন্য দরপত্রের মাধ্যমে একটি সংস্থাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। পটনার ফুলওয়ারিশরিফে পানীয় জলের জন্য বরাদ্দকৃত ৬১ কোটি টাকার কাজ সবে শুরু হতে যাচ্ছে বলে নগরোন্নয়ন দফতর থেকে
জানানো হয়েছে।
নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব শর্মা এই অবস্থার কথা মেনে নিয়ে বলেন, “এই প্রকল্পে রাস্তা, পানীয় জলের মতো কাজ আমরা তেমন ভাবে করতে পারেনি। বেশিরভাগ কাজই শুরু হতে যাচ্ছে অথবা একেবারে প্রাথমিক স্তরে। অতীতে আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সড়ক অবরোধের সম্মুখীন হয়েছি। এ ছাড়া পরিবহণের ক্ষেত্রে চেষ্টা করেও কাজের বরাত দেওয়ার জন্য কাউকে পাইনি। পাশাপাশি, স্থানীয় পুরসভারগুলির গাফিলতিও আছে।”
শর্মা বলেন, “অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ বার আমরা চেষ্টা করছি যাতে এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়ে কাজ করতে পারি। এ জন্য আমরা কেন্দ্রকে লিখছি। আশা করছি, এই প্রকল্পের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ পাব।” দুই মিশন শহরকে বাদ দিয়ে ফতুয়া, নরকাটিয়াগঞ্জ, মুরলিগঞ্জ, বকতিয়ারপুরের মতো ছোট শহরগুলিতেও যাতে এই প্রকল্পের কাজ গুরুত্ব দিয়ে করা হয়, তা দেখা হবে বলে তিনি জানান। |