উখরুলে ঘাসফুলের বীজ
বুনছেন ময়দানের সোসো
গোলপোস্ট আর মাত্র দশ দিন দূরে। বিপক্ষে দেশের অন্যতম বড় জঙ্গি সংগঠন। দলের ক্যাপ্টেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী! কিন্তু তাঁর পায়ে বল নেই। বরং পুরো খেলার দখল এক লক্ষ ৯৮ হাজার৭৭ জন খেলোয়াড়ের হাতের আঙুলে।
কলকাতা ময়দানের পরিচিত নাম ‘সোসো’-র কাছে আপাতত এটাই কঠোর বাস্তব। খেলার মাঠের হিসেব আর গজে নয়, দিন গুণে চলছে। পায়ের শট নয়, হার-জিত ঠিক করে দেবে ‘ইভিএম’। তিনি তো আর চার্চিল ব্রাদার্সের অধিনায়ক নন, এখন সোমাতাই সাইজা, উখরুলের ৪৪ নম্বর বিধানসভা আসনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী।
পনেরো বছর আগে কলকাতায় ডায়মন্ড সিস্টেম নিয়ে তীব্র উত্তেজনা। মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ দেখতে হাজির ছিল এক লক্ষ তিরিশ হাজার লোক। ইস্টবেঙ্গলের সোসোকে ‘শসা’, ভাইচুংকে ‘চুংচুং’ বলে মাঠ তাতিয়েছিলেন মোহন-কোচ অমল দত্ত। ম্যাচ জেতার পরে ড্রেসিংরুমে ভাইচুংকে যে জলের ধারায় স্নান করিয়ে দিয়েছিলেন বন্ধু সোসো, সে দৃশ্য মনে আছে অনেকেরই। সোসো তখন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো, কিন্তু মাটির মানুষ। ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে চার্চিল ব্রাদার্সে যাওয়ার পরে গোয়ার সব চেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলার হয়ে গেছিলেন।
বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন গোয়ায়। তখন থেকেই মাটির সঙ্গে যোগাযোগ। ভাইচুংয়ের সব চেয়ে কাছের বন্ধু বলে তাঁকে চিনত ময়দান। বহু দিন পরে সেই সোসো ফের আলোচনায়।

সোসো
এমন এক জেলা থেকে দাঁড়িয়েছেন সোসো যেখানে ১৭৯টির মধ্যে ১৪৪টি বুথই স্পর্শকাতর বা অতি-স্পর্শকাতর। তাঁর বিপক্ষে রয়েছেন গত দশ বছরের বিজয়ী বিধায়ক তাঁর নিজেরই খুড়তুতো দাদা ড্যানি সাইজা। ড্যানি আবার রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়াংমাসো সাইজার ছেলে। রয়েছে আরও বড় গেরো। নাগা অধ্যুষিত মণিপুরে এই প্রথম লড়তে নেমেছে নাগা পিপল্স ফ্রন্ট (এনপিএফ)। তাঁদের প্রার্থী স্যামুয়েল রাইসম। টাংখুল নাগাদের বাসভূমি উখরুল এনএসসিএম (আইএম)-এর নেতা মুইভার জন্মভূমি। মুইভাকে গত বছর উখরুলে ঢুকতে না দেওয়ায় নাগারা ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছেন। তাই এ বার নাগাদের সমর্থন ও এনএসসিএন (আইএম) জঙ্গি বাহিনীর বাহুবল এনপিএফ প্রার্থীর বড় হাতিয়ার। এমনিতে কংগ্রেসের দুর্গ হিসেবে পরিচিত উখরুলে এ বার কংগ্রেস প্রার্থী দিল্লির সেন্ট স্টিফেন-এর প্রাক্তনী আলফ্রেড কে আর্থার। তবে মাঠের মতোই ভোটযুদ্ধেও প্রতিপক্ষকে ‘ওয়াক ওভার’ দিতে রাজি নন সোসো। বরং আত্মবিশ্বাসী প্রাক্তন ফুটবলার। তাঁর কথায়, “মাঠের খেলার মতোই এখানেও আমি ঠিক মতো অনুশীলন করেই লড়তে নেমেছি। আমায় হারানো সহজ হবে না।”
ড্যানির প্রতি প্রবীণদের আনুগত্য অটুট থাকলেও, দল বিতর্কে নবীনদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তায় ধাক্কা লেগেছে। কংগ্রেস প্রার্থী করছে ধরে নিয়ে ডিসেম্বর অবধি জোর প্রচার চালিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস টিকিট না দেওয়ায় এখন বিজেপির হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন গত বারের নির্দল বিধায়ক ড্যানি।
কার্যত উখরুল ও সইজা পরিবার এখন ড্যানি ও সোমতাইয়ের মধ্যে সমানে ভাগে বিভক্ত। লড়াইটা অভিজ্ঞতা বনাম তারুণ্যের। পরিবারের বয়স্করা ড্যানির পক্ষে, আর উখরুলের নব প্রজন্ম ক্যাপ্টেনের দলে। এমনকী ড্যানি-ঘনিষ্ঠরাও মিষ্টি ব্যবহার ও গোটা দেশ ঘুরে আসা উদারমনা সোসোকে এগিয়ে রাখছে। যে পরিবর্তনের স্লোগানকে হাতিয়ার করে তৃণমূল নেত্রী বঙ্গবিজয় সেরেছেন, সেই ‘পরিবর্তন’-ই সোসোরও তুরুপের তাস। সেই সঙ্গে নিজে টাংখুল নাগা হওয়ায় মণিপুরের সবচেয়ে বড় নাগা সংগঠন, ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিলের সমর্থনও সোসোরই দিকে।
৩৮ বছরের সোসো ১৯৯২-৯৩ ও ১৯৯৭-৯৮ সালে নেহরু কাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
গোয়ার হয়ে খেলেছেন সন্তোষ ট্রফিও। ইস্টবেঙ্গল, চার্চিল ও মহীন্দ্রায় খেলার পরে ২০০৬ সালে ফুটবলকে বিদায় জানান তিনি। কিন্তু মমতার ডাকে সাড়া দেওয়ার পরে ময়দানের হিসেবই মণিপুরের ভোটে কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। ২৮ জানুয়ারির ‘বড় ম্যাচ’-এর আগে বিপক্ষ দলগুলির শক্তি ও দুর্বলতাগুলির চুলচেরা বিচার করছেন। কলজের জোর অটুট। তাই খোদ মুইভার গ্রাম সোমদালে জনসভা করেই ভোট প্রচার শুরু করেছেন সোসো। ময়দানের সোসো বলছেন, “মাঠ হোক বা ভোট, তারুণ্যেরই জয় হবে। দম রয়েছে যার, দৌড়ে সেই জিতবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.