সকলের নজর যখন উত্তরপ্রদেশে, সদ্ভাবনার বার্তা নিয়ে গোধরায় অনশনে বসলেন নরেন্দ্র মোদী। দশ বছর আগে এই গোধরা থেকেই দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। আর আজ নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে হিন্দু-মুসলমান-সহ প্রায় দশ হাজার মানুষের উপস্থিতিতে, গোধরায় উন্নয়নের তাস খেললেন মোদী। গোটা জেলার উন্নয়নের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করলেন তিনি।
২০০২ সালে গুজরাতে গুলবর্গা সোসাইটি গণহত্যা মামলা বিচারের দায়িত্ব নিম্ন আদালতের উপরেই ছেড়ে দিয়েছিল সুপ্রিম কোট। গত সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে দেওয়া রায়ে শীর্ষ আদালত বলেছিল, মোদীর বিরুদ্ধে দাঙ্গার সময় নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগের বিচারও নিম্ন আদালতই করবে। বিজেপি নেতৃত্বের কথায়, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে নিজের ‘জয়’ হিসাবে তুলে ধরে মোদী গত সেপ্টেম্বরে যে ‘সদ্ভাবনা মিশন’ শুরু করেছিলেন, তার মূল উদ্দেশ্যই ছিল সংখ্যালঘুদের মন জয় করা। গোধরার কলঙ্ক ঘুচিয়ে নিজের নেতৃত্ব জাতীয় স্তরেও প্রতিষ্ঠা করা। সে দিক থেকে ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া দাঙ্গার ভরকেন্দ্রে সদ্ভাবনার বার্তা নিয়ে যাওয়াই ছিল তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। গত চার মাস ধরে রাজ্যের বাইশটি স্থানে অনশনে বসে সেই প্রেক্ষাপট রচনা করেছেন তিনি। আজ গোধরায় সেই বৃত্তটি সম্পূর্ণ করলেন। এমন একটি সময়, যখন গোধরা দাঙ্গার দশ বছর পূর্ণ হচ্ছে। আর এমনই এক সময়, যখন গোটা রাজনৈতিক শিবির উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। সেই সময় মোদী নিজের ঘরটি গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। |
বিরোধীরাও সহজে জমি ছেড়ে দিতে রাজি নন। মোদীর অনশনের প্রতিবাদে ‘বিচারের আশায়’ নামে এক কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন শবনম হাসমির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। মোদী-বিরোধী মিছিলের আয়োজন করেছিলেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা তথা দীনদয়াল সেবা সংঘর্ষ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা নলিন ভট্টও। মোদীর নির্দেশে সকলকেই আটক করে পুলিশ। নিরাপত্তার চাদরেও মুড়ে ফেলা হয় গোটা গোধরা শহর। পাশাপাশি বিরোধী দল হিসাবে কংগ্রেস রাজনৈতিক হুঙ্কার দিয়েছে বটে, কিন্তু উত্তরপ্রদেশ নিয়ে সকলে ব্যস্ত থাকায় এখনই বিষয়টি উচ্চগ্রামে নিয়ে যাওয়ার ফুরসত নেই তাদের।
গুজরাতের মোদীকে কটাক্ষ করে কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “গোধরায় কেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী অনশন করছেন জানি না। হতে পারে তিনি প্রায়শ্চিত্ত করতে চান।” মোদীর অনশনকে ‘রাজনৈতিক নাটক’ অ্যাখ্যা দিয়ে পাল্টা অনশনে বসার পরিকল্পনা করেছেন কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শঙ্করসিন বাঘেলা।
রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি শক্তিসিন গোহিলের বক্তব্য, “জনগণের টাকা অপচয় করে রাজনৈতিক নাটক করছেন মোদী। দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে তিনি দেখা করছেন না কেন?”
আর গোধরায় বিপুল জনসমাবেশে উৎসাহিত মোদী কংগ্রেসকেই পাল্টা এক হাত নিয়েছেন। তিনি বলেন, “কেন্দ্রে যে সরকার আছে, ক্ষমতায় আসার একশো দিনের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্ত মূল্যবৃদ্ধির হার শীর্ষে পৌঁছেছে। গুজরাতে উন্নয়নের মডেল গোটা বিশ্বে আলোচিত বিষয়। উন্নয়নের বিষয়ে কোনও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করা উচিত নয়। আজ যে প্যাকেজ ঘোষণা করলাম, তা দিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করা হবে।” |