ত্রাসের তিন চাকা/২
বদলেছে শুধু রং, ইউনিয়নের ‘দাদাগিরি’ চলছেই
টোর এই ‘সংগঠিত শক্তি’ কি হঠাৎ সৃষ্টি হয়েছে?
বাম জমানায় মূলত সিটু নিয়ন্ত্রিত ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অটোরিকশা অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর হাত ধরেই ‘অটো-রাজ’-এর জন্ম। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, প্রথমে কোনও অটো রুটেরই প্রশাসনিক অনুমোদন ছিল না। পরে সিটুর ‘প্রভাব’-এর কাছে নতি স্বীকার করে শহরের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য এলাকা ছেড়ে প্রায় ৭৫টি রুটকে বৈধতা দেয় পরিবহণ দফতর ও পুলিশ। সেই স্বীকৃতি মিলতেই শহরের যত্রতত্র গজিয়ে উঠতে থাকে অটো-রুট। কোন রুটে ক’টি অটো চলবে বা কোথায় কত ভাড়া হবে, তা স্থির করার দায়িত্ব সিটুর হাতেই থেকে যায়।
রাজ্যে ‘পরিবর্তন’-এর পরে রাতারাতি বেশির ভাগ অটোর গায়ে লাগানো লাল ঝান্ডা পাল্টে গিয়েছে তৃণমূলের পতাকায়। খোদ তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি দোলা সেনও পরিবর্তনের আবহে অনেক অটোর এই ‘শিবির বদল’-এর কথা স্বীকার করেছেন। একদা সিটু বেশির ভাগ অটোর ‘একচ্ছত্র অভিভাবক’-এর ভূমিকা পালন করলেও অটোকর্মীদের বেশির ভাগ এখন তাঁদেরই সদস্য বলে দোলাদেবী মেনেও নিচ্ছেন।
নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য, অটোচালকদের একাংশের হাবভাবে অবশ্য কোনও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) সুপ্রতিম সরকারের কথায়, “অটোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়াও যাত্রীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা বা ট্রাফিক আইন শেখানোর জন্য চালকদের তালিমের ব্যবস্থা করা হয়। দূষণ ছড়ানো রুখতেও অটোচালকদের সচেতন করা চলছে।” কিন্তু গত সেপ্টেম্বরেই যাদবপুর, বেহালার মতো বিভিন্ন অঞ্চল কলকাতা পুলিশের আওতায় আসার পরে ওই তল্লাটে অটোকে শাসনে বাঁধতে গিয়ে পুলিশ তাদের ক্ষমতার দৌড় টের পেয়েছে। পুলিশের দাবি, সর্বাধিক চার জনের বেশি যাত্রী না তোলার ব্যাপারে অটোচালকদের সতর্ক করা হয়েছিল। তাঁরা সেই ফরমান মানলেও সঙ্গে সঙ্গে রুটের ভাড়া বাড়িয়েছেন। যাত্রীদের অভিযোগ, ভাড়া বৃদ্ধির পরেও দক্ষিণ কলকাতা ও সংযোজিত এলাকার বিভিন্ন রুটে সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন অটোচালকেরা।
প্রশ্ন উঠছে, বছরের পর বছর ধরে পুলিশ বা পরিবহণ দফতরকে এড়িয়ে বাম বা ডান ইউনিয়নের হাতেই কেন থেকে যাবে অটোর ভাড়া নির্ধারণের অধিকার? অটোর ‘যথেচ্ছাচার’ নিয়ন্ত্রণেই বা কী ভাবছে প্রশাসন?
বিভিন্ন ইউনিয়নের কিন্তু দাবি, অটোর ভাড়া ঠিক করার বিষয়টি তারা রাজ্যের উপরে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। এত দিন যাঁরা অটোর বিষয়ে ‘শেষ কথা’ বলতেন বলে অভিযোগ, সেই সিটু নিয়ন্ত্রিত কলকাতা অটোরিকশা অপারেটর্স ইউনিয়ন-এর সভাপতি কিশোর ঘোষ বলেন, “সরকার যদি আমাদের মত জানতে চায়, তা হলে বলব পরিবহণ দফতরই বিভিন্ন রুটের ভাড়া বেঁধে দিক।” আইএনটিটিইউসি-র দোলা সেনেরও আশ্বাস, “আগামী দিনে সরকার যাতে অটোর ভাড়া ঠিক করে, সে ব্যাপারে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে নিশ্চয়ই কথা বলব।”
পরিবহণ সচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকাও বিষয়টি কার্যত এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি শুধু বলেন, “অটো নিয়ে সমস্যা হলে তার সমাধানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “আইনে যা লেখা রয়েছে, তা যথাযথ মেনে রাস্তায় অটো চালানোর ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট সতর্ক।” ভাড়া নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “যখন-তখন যে ভাবে খুশি ভাড়া বাড়ানো যাবে না। শুধু অটো-ই নয়, যে কোনও যানের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য।”
(শেষ)
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.