|
|
|
|
আলুতে ধসার লক্ষণ কালনায় |
লিফলেট ছড়াল কৃষি দফতর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কালনা |
মহকুমার কয়েকটি গ্রামে আলুর নাবি ধসা রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিয়েছে বলে জানাল কালনা মহকুমা কৃষি দফতর। চাষিদের থেকে খবর পেয়ে কালনা ১ ব্লক কৃষি আধিকারিক বেগপুর পঞ্চায়েত এলাকা পরিদর্শনের পরে যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে এমনই জানা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন মহকুমা কৃষি আধিকারিক স্বপনকুমার মারিক। তা যাতে বড় আকার না নেয় সে জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। বর্ধমানের কৃষি উপ-অধিকর্তা শ্যামল দত্ত জানান, সার্বিক ভাবে না হলেও জেলার কিছু কিছু এলাকায় রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সে কারণে কালনা, কাটোয়া, জামালপুরের মতো যে সব এলাকায় আলু চাষ বেশি হয় সেখানে কৃষকদের কী করণীয় জানাতে প্রচুর লিফলেট বিলি করা হয়েছে। |
|
আলুর জমিতে ছড়ানো হচ্ছে কীটনাশক। কালনায় তোলা নিজস্ব চিত্র। |
কালনা মহকুমায় রবি মরসুমে প্রচুর আলু চাষ হয়। এ বছর মহকুমায় এই চাষ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে কালনা ১ ও ২ ব্লকেই চাষ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টরে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত প্রায় দশ দিন টানা আবহাওয়া মেঘলা রয়েছে। সঙ্গে ছিল ঝিরঝিরে বৃষ্টি। টানা বৃষ্টি ছাড়ার পরে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। স্বাভাবিক আবহাওয়া না থাকায় ছত্রাকঘটিত নাবি ধসা রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। এই রোগের প্রাথমিক লক্ষ্মণ হল প্রথমে পাতার তলার ধারের দিকে ভেজা দাগ হয়। পরে ওই দাগ বাদামি বা কালো রঙ ধারণ করে। পাতার ধার থেকে নীচের দিকে এগোতে থাকে সেই দাগ। প্রতিকূল পরিবেশ চলতে থাকলে পাতার বৃন্ত ও ডাঁটাতেও অল্প বাদামি বা কালো দাগ দেখতে পাওয়া যায়। রোগের প্রকোপ বাড়লে আক্রান্ত পাতা ও ডাঁটা পচে নীচে পড়ে যায়। এমনকী রোগের প্রকোপ খুব বেশি হলে মাটির তলায় আলু পচে যায়। বছর তিনেক আগে বর্ধমান জেলায় এই রোগ বড় আকার নিয়েছিল। তাতে নষ্ট হয়ে যায় বহু আলু। ক্ষতিগ্রস্ত হন চাষিরা।
গত দু’তিন দিন ধরেই আকাশ মেঘলা ছিল। সেই সঙ্গে কুয়াশা। এই পরিস্থিতিতে নাবি ধসা রোগের প্রকোপের শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। বেলেরহাট, ভৈরবনালা, ন’পাড়া, দেয়াড়া, বাঘনাপাড়া, আনুখাল-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় খেতে চাষিদের ওষুধ স্প্রে করতে দেখা গিয়েছে। তবে ওষুধের প্রয়োগ নিয়ে অবশ্য চাষিদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। আকন্দপুকুর এলাকার চাষি খোকন মল্লিকের দাবি, “ঠান্ডা যত কমে আসছে, আলু গাছ তত ঝিমিয়ে পড়ছে। আমাদের অভিজ্ঞতা হল, এ রকম পরিস্থিতিতে ধসা বড় আকার নেয়। তাই ওষুধ দিচ্ছি।” এ বছর আলু চাষের গোড়াতেই সার, জমি তৈরির খরচ-সহ নানা খরচ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে কীটনাশক কিনে জমিতে স্প্রে করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন বহু চাষি। আলু চাষি ফিরোজ শেখ বলেন, “গাছ বাঁচাতে মহাজনের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তো আর বিপর্যয় দেখতে পারি না।”
চাষিদের দাবি, শুধু নাবি ধসা নয়, রাতে এক ধরনের পোকা আলু গাছের পাতা, কাণ্ড-সহ নানা অংশ কেটে দিচ্ছে। কৃষি দফতর জানিয়েছে, এখনকার আবহাওয়া ওই ধরনের পোকার বংশবিস্তারের সহায়ক। তবে ক্লোরোপাইফম জাতীয় ওষুধ আড়াই মিলিলিটার জলে গুলে স্প্রে করলে পোকার হাত থেকে নিষ্কৃতি মেলে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানান। মহকুমা কৃষি আধিকারিক স্বপনবাবু বলেন, “দিনে তাপমাত্রা যেখানে ১৪ ডিগ্রির কম থাকা উচিত, সেখানে থাকছে ১৬ ডিগ্রির কাছাকাছি। রাতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নীচে থাকার কথা হলেও থাকছে তার উপরে। সঙ্গে রয়েছে মেঘলা আবহাওয়া। চাষিদের ধসা রোগ নিয়ে সতর্ক হতে হবে।” তিনি জানান, এই পরিস্থিতিতে চাষিদের প্রতিষেধক দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়াও খেতে জমা জল বের করে দেওয়া, জমি পরিচ্ছন্ন রাখা, নাইট্রোজেন ঘটিত চাপান সার, অনুখাদ্য প্রয়োগ বন্ধের ইত্যাদি পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। প্রতিরোধক হিসেবে ম্যাগকোজেব, প্রপিনেব, মেটিরাম, ক্লোরোথ্যালোনিল জাতীয় ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি লিফলেটও বিলি করা হচ্ছে এলাকার পঞ্চায়েতগুলিতে। |
|
|
|
|
|