গুরুতর অসুস্থ রোগীরা দীর্ঘক্ষণ দুপুরের খাবার না-পেয়ে ছটফট করলেন। অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীকে ওটি-তে নিয়ে যাওয়ার লোক জুটল না। লিফ্ট বন্ধ। দেখা মিলল না ট্রলি ঠেলা বা জেনারেটর চালানোর লোকেরও। কলকাতার একাধিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সোমবার দিনভর এটাই ছিল স্বাস্থ্য-পরিষেবার ছবি। কারণ, ধর্মঘট করেছেন অস্থায়ী ঠিকাকর্মীরা। রোগীদের এমন চরম দুর্ভোগ দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিজনেরা। হাসপাতালের মতো জরুরি পরিষেবার জায়গায় কী ভাবে এমন আন্দোলন চলতে পারে, সেই প্রশ্ন উঠেছে সব মহলে। যদিও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে স্বয়ং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “বাড়াবাড়ি কিছু করলে তখন কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা যাবে।” আর তাতেই ফের প্রশ্ন উঠছে, ঠিক কতটা ‘বাড়াবাড়ি’ হলে ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য দফতর?
অস্থায়ী ঠিকাকর্মীদের অসন্তোষ হঠাৎ এক দিনে তৈরি হয়নি। অনেক দিন থেকেই ন্যূনতম বেতনের দাবি জানাচ্ছিলেন তাঁরা। গত শনিবার রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে সোমবার ধর্মঘটের হুমকি দেওয়া হয়। ধর্মঘটের কথা আগাম জানা থাকতেও স্বাস্থ্যকর্তারা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে ব্যবস্থা নেননি কেন? জবাবে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা নিতান্ত দায়সারা ভাবে বলেছেন, “শনিবার হুমকি দিলেই কি সোমবার ব্যবস্থা নিয়ে ফেলা যায়! সব কিছু কি ম্যাজিক নাকি? এ সব অনেক জটিল অঙ্কের ব্যাপার।”
সমস্যাটা ঠিক কী, জানতে চাওয়া হলে সুশান্তবাবুর বক্তব্য, “একটা দুষ্টচক্র ডায়েট ও অন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে সক্রিয়। ডায়েট কন্ট্রাক্টরেরা মামলা করে বসে আছেন। বলছেন, সরকার থেকে যে টাকা তাঁরা পান, তাতে ঠিকাকর্মীদের ছ’-সাত হাজার টাকা মাইনে দেওয়া সম্ভব নয়। এক দিনে এই সমস্যার সমাধান হবে না।”
স্বাস্থ্য দফতরের একাংশই কিন্তু বলছেন, রাজ্য জুড়েই সরকারি হাসপাতালে এ দিন এই ধর্মঘট হওয়ার কথা ছিল। ঠিক ভাবে সংগঠিত করা যায়নি বলে শুধু কলকাতার তিনটি মেডিক্যাল কলেজে এক বেলার ধর্মঘট হয়। ফলে, অনেক বড় পরিষেবা-বিপর্যয় এড়ানো গিয়েছে। ব্যাপক হারে আন্দোলন হলে স্বাস্থ্যকর্তারা সামলাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
এ দিন মূলত এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে অস্থায়ী কর্মীদের কয়েক ঘণ্টার ধর্মঘটে খিদেয় ছটফট করেছে শিশু রোগীরাও। বেলা সাড়ে বারোটার বদলে আড়াইটে পেরিয়েও দুপুরের খাবার না-আসায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অন্তঃসত্ত্বারা। শরীর আরও খারাপ হয়েছে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের। খাবার দিতে দেরি হওয়ায় এ দিন এসএসকেএমে রোগীদের আত্মীয়েরা সুপারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। পেডিয়াট্রিক সার্জারিতে চিকিৎসকেরা ওটি-তে অপেক্ষা করলেও রোগীকে তৈরি করে সেখানে নিয়ে যাওয়ার লোক মেলেনি। মেডিক্যাল কলেজে সার্জারি, গাইনি ও পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডের রোগীদের আত্মীয়েরা বারবার সুপারের কাছে গিয়ে খাবার দেওয়ার জন্য অনুনয় করেছেন। আর জি করেও দুপুর পেরিয়ে যাওয়ার পরে খাবার না-আসায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীরা।
ধর্মঘটে হাসপাতালের পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ও রোগীদের অসুবিধা সম্পর্কে ‘সারা বাংলা হাসপাতাল রোগীকল্যাণ ও অস্থায়ী ঠিকাকর্মী সংগঠন’-এর সভাপতি বরুণ দাস বলেন, “আমরা রোগীদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু আমাদের উপরে বঞ্চনা এত বাড়ছিল যে, এ ছাড়া উপায় ছিল না। দেড় থেকে দু’হাজার টাকা মাসে দেওয়া হচ্ছে। এত কম টাকায় সংসার চলছে না।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “জরুরি পরিষেবায় কোনও প্রভাব পড়েনি। একটু দেরি হলেও দুপুরের খাবার দেওয়া হয়েছে।” |