জিটিএ বাতিলের দাবিতে বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও কমিটির ২৪ ঘণ্টা বনধ উপেক্ষা করে সোমবার রাস্তায় নামলেন বহু মানুষ। রাজ্য তো দূরের কথা, উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির একাংশ ছাড়া অন্যত্র বন্ধের তেমন প্রভাব পড়েনি। উত্তরবঙ্গের সর্বত্র ট্রেন চলাচল ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তবে বেসরকারি যানবাহন তেমন চলেনি। সিটি অটোর সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা। সরকারি বাস ঠিকঠাক চলেছে। ওদলাবাড়ি, ফালাকাটা, ধূপগুড়ি ও বীরপাড়ার সরকারি ও বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অবশ্য সব বনধ ছিল। ব্যাঙ্ক ছাড়া অন্যান্য সরকারি দফতর খোলা ছিল। সরকারি দফতরে হাজিরা অন্যান্য দিনের তুলনায় কম। বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও কমিটির সভাপতি মুকুন্দ মজুমদার অবশ্য দাবি করেছেন, বন্ধে তাঁরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। তাঁদের দাবির সমর্থনে গোটা রাজ্যেই বহু মানুষ
পথে নেমেছিলেন।
এ দিন সকালে শিলিগুড়িতে বনধ সমর্থনকারীরা তিনবাতি এলাকায় ট্রেন অবরোধের চেষ্টা করেন। সেখানে পুলিশ ২ জনকে গ্রেফতার করে। শহরের রাজা রামমোহন রায় রোড এলাকায় বন্ধে সমর্থনকারীরা বিমল গুরুংয়ের কুশপুতুল দাহ করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও কমিটির সভাপতি-সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে। ওই ঘটনার পরে শহরে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা বেড়ে যায়। অটো, রিকশা স্বাভাবিক চলাচল করেছে। |
কথায় কথায় বন্ধের রাজনীতি যে আমজনতা সহ্য করছে না সেটা মানুষ রাস্তায় নেমে বুঝিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে মতবিরোধ থাকতেই পারে। আলোচনা হতে পারে। তা বলে সুযোগ পেলেই বনধ ডেকে সব স্তব্ধ করে দেওয়ার দিন ফুরিয়েছে। আমাদের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী বনধ ডাকার বিরোধী। মানুষ আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।”
শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকার ব্যবসায়ীরা দোকানপাট, অফিস খোলেননি কেন? ফেডারেশন অব চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গল-এর (ফোসিন) সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “কোনও
বন্ধেই আমরা পক্ষে কিংবা বিপক্ষে রাস্তায় নামি না। এটাই আমাদের সংগঠনের সিদ্ধান্ত। তবে বনধ-সংস্কৃতি যে বনধ হওয়া দরকার এটা আমরাও মনে করি।” ফোসিন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের বন্ধে কেবল শিলিগুড়িতেই প্রায় ৮ কোটি টাকার ব্যবসায়িক লেনদেন মার খেয়েছে। উত্তরবঙ্গে এই হিসাব ১২ কোটি টাকার উপরে বলে বিশ্বজিৎবাবু জানিয়েছেন।
ডুয়ার্সের ওদলাবাড়িতে এ দিন বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও কমিটির ডুয়ার্স শাখার সভাপতি জীবন মিত্রের নেতৃত্বে সমর্থকেরা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে পিকেটিং করেন। ওদলাবাড়ির বাইরে মালবাজার, লাটাগুড়ি কিংবা নাগরাকাটায় বন্ধের তেমন প্রভাব পড়েনি। স্বাভাবিক ছিল রেল পরিষেবাও। ফালাকাটা, ধূপগুড়ি ও বীরপাড়ায় দোকানপাট আংশিক বনধ ছিল। বেসরকারি গাড়ি চলাচলও কম ছিল। বীরপাড়ায় স্কুল বনধ ছিল।
আলিপুরদুয়ারে কম সংখ্যায় হলেও যানবাহন চলাচল করেছে। শহরের অধিকাংশ দোকানপাট ছিল বনধ। আলিপুরদুয়ার চৌপথিতে বিমল গুরুংয়ের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। তবে জলপাইগুড়ি শহরে জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। বেসরকারি বাস চলেনি। জীবনবাবু বলেন, ‘‘জিটিএ পাহাড়ে হোক, আমরা বাধা দেব না। ১৩৫টি জনজাতির বসবাসের এলাকা ডুয়ার্সে এসব মানব না।” আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসু জানান, যে কারণেই ডাকা হোক না কেন, তাঁরা এই কর্মনাশা বনধকে সমর্থন জানাননি। |