নিজস্ব সংবাদদাতা • শামুকতলা |
বিচারাধীন মামলায় পুলিশকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল শামুকতলার এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। এলাকার এক বধূকে অর্ধনগ্ন করে গাছে বেঁধে পেটানোর মামলায় এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার না-করার জন্য ওই নেতা হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। ওই অভিযুক্ত সম্পর্কে নির্যাতিতা
বধূর খুড়শ্বশুর। তাঁর নাম সুভাষ দেবনাথ। তৃণমূল নেতার নাম পরেশ দেবনাথ। তিনি মহাকালগুড়ি অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি।
শামুকতলা থানার পুলিশকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, পরেশবাবু ‘প্রকৃত দোষী’দের সাজা চাইলেও ‘নির্দোষ’ সুভাষবাবুকে গ্রেফতার করলে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে বলে হুমকি দিয়েছেন। ক্ষুব্ধ পুলিশকর্মীরা বিষয়টি আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনুপ জয়সোয়ালকে জানিয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেছেন, “কেউ কাউকে নির্দোষ বলে দাবি করতেই পারেন। তার বিচার আদালতে হবে।”
পরেশবাবু অবশ্য জানান, তিনি কোনও বেআইনি কাজ করেননি। তাঁর যুক্তি, “আমি গ্রামে খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি, ঘটনার সময়ে সুভাষবাবু মাঠে ছিলেন। তাঁর নাম ওই বধূ জড়িয়ে দিয়েছেন। সে জন্য সুভাষবাবু যে নির্দোষ তা থানায় গিয়ে জানিয়ে পুলিশকে দেখেশুনে এগোনোর অনুরোধ করেছি।” |
কিন্তু, যে মামলা বিচারাধীন তাতে তৃণমূল নেতা কী ভাবে হস্তক্ষেপ করছেন? পাশাপাশি, তাঁর কথা যদি সত্যি বলে ধরা যায়, তা হলে বধূটির উপরে অমানবিক অত্যাচারের পরে কেন খুড়শ্বশুর সুভাষবাবু আজ পর্যন্ত প্রতিবাদ করেনননি? পরেশবাবুর জবাব, “বিচার তো এখনও হয়নি। তাই আগে সুভাষবাবুকে দোষী ভেবে নেওয়াটা ঠিক নয়। তবে সুভাষবাবু আজ পর্যন্ত কেন বধূ নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হননি তা বলতে পারব না। সেটা খোঁজ নিতে হবে।”
গত মঙ্গলবার শামুকতলা থানার ওই বধূ কবিতাদেবীকে খুঁটিতে বেঁধে, রাস্তায় ফেলে অর্ধনগ্ন করে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁর ‘অপরাধ’, তিনি বাড়ির গাছের কয়েকটি সুপারি বিক্রি করেছেন। ২৫ বছর বয়সী কবিতা ৩ বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ির ভিটের এককোণে থাকেন। একসময়ে স্বামীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানান কবিতা। স্বামী গ্রেফতার হন। সেই থেকে কিছুটা একঘরে হয়ে থাকেন বধূটি। স্বামী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ভিন্ রাজ্যে কর্মরত। কবিতা দিনমজুরি করেন। আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবিতা বলেন, “খুড়শ্বশুরই আমার গলায় গামছা পেঁচিয়ে ঘর থেকে টেনে
বার করে খুঁটিতে বাঁধেন। তার পরে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে শরীরে বিছুটি পাতা দেওয়া হয়। জল চাইলে মুখে প্রস্রাব করে দেন ভাসুর। আমি ওঁকে বলি, শ্বশুর হয়ে বৌমার উপরে অত্যাচার দেখতে লজ্জা করে না? তখন উনি চলে যান। এর পরেও উনি নির্দোষ?”
সুভাষবাবুর ভাইপো সন্তোষ তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী। তৃণমূল সূত্রের খবর, সন্তোষ পরেশবাবুর অনুগামী হওয়ায় তিনি আসরে নেমে পড়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা অজিত দেবনাথ, পরিতোষ বিশ্বাসরা জানান, সে দিন সুভাষবাবুর কী ভূমিকা ছিল তা তাঁরা অনেকেই দেখেছেন। আলিপুরদুয়ারের প্রবীণ আইনজীবী তথা তৃণমূলের প্রদেশ কমিটির সহ-সভাপতি জহর মজুমদার বলেন, “বিচারাধীন বিষয়ে কাউকে নির্দোষ বলাটা ঠিক নয়। বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।” তৃণমূল জেলা সভাপতি কিসান কল্যাণী জানান, তিনিও আলিপুরদুয়ার ২ নম্বর ব্লক সভাপতির কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন। |