সনিয়ার বার্তাতেই স্থগিত কংগ্রেসের আন্দোলন
মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জোট অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে, কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কাছ থেকে এই বার্তা পেয়ে জেলায় জেলায় কৃষি-আন্দোলনের কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে এলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
ধান-পাটের সহায়ক মূল্যের দাবিতে জেলাশাসকদের দফতর ঘেরাও করে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু আজ দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র নেতা শাকিল আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। সিদ্ধান্ত হয়, রাজ্য সরকার বিরোধী এই আন্দোলন আপাতত স্থগিত রাখা হবে। বস্তুত, গত কালই ১০ জনপথে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে শাকিলের বৈঠক হয়েছিল। কংগ্রেস সূত্রের খবর, সেখানেই সনিয়া জানিয়ে দেন যে, রাজ্যে মমতার সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করেই এগোতে হবে কংগ্রেসকে। আজ তাই শাকিল বলেছেন, “জোট ছিল, আছে, থাকবে।” গত কয়েক দিনে কংগ্রেস বা তৃণমূলের কোনও নেতাই যে পরস্পরের বিরুদ্ধে ‘কটু শব্দ’ ব্যবহার করেননি, আজ তাতেও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শাকিল। তিনি বলেন, “কোথাও সমস্যা থাকলে আলোচনার মাধ্যমেই তার সমাধান করা যায়।”
জোট অক্ষুণ্ণ রাখতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এখনই আন্দোলনে না গেলেও, পুরোপুরি এই কর্মসূচি থেকে সরে আসার পক্ষপাতী নন কংগ্রেস নেতৃত্ব। অধীর চৌধুরীর মতো নেতারা জেলাভিত্তিক সমস্যা নিয়ে যে সব আন্দোলন করতে চাইছেন, তাতেও আপত্তি নেই দলের। মন্ত্রিসভায় কাজকর্ম নিয়ে কোনও সমস্যা থাকলে তা নিয়েও মুখ খুলবেন কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু তার আঁচ যাতে জোটে না পড়ে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। এআইসিসি মনে করছে, মমতার সরকারের কাছে মানুষের যে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হচ্ছে না।মানুষের সেই ক্ষোভকে কাজে লাগাতে দলকে আন্দোলনে নামতেই হবে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ কংগ্রেসের দিকেই মুখ ঘোরাবে বলেও আশা করছেন এআইসিসি নেতৃত্ব। গত নভেম্বরে কলকাতায় কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সম্মেলনে অপ্রত্যাশিত ভিড় দেখেও উজ্জীবিত কংগ্রেস নেতারা। আজ প্রদীপবাবু তাই যুক্তি দেন, তাঁরা আন্দোলনে করবেন বলে জানিয়েছিলেন, কিন্তু দিনক্ষণ ঘোষণা করেননি। কাজেই আন্দোলন থেকে পিছিয়ে আসার কোনও প্রশ্ন নেই। তিনি বলেন, “দলকে শক্তিশালী করার দু’টো পথ আছে, আন্দোলন ও সংগঠনকে মজবুত করা। মানুষের স্বার্থে আন্দোলন করতে হবে। কিন্তু সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, সংগঠনকে মজবুত করা।”
সংগঠনকে মজবুত করতে প্রদেশ নেতৃত্বের দাওয়াই হল, একশো দিনের কাজের মতো কেন্দ্রীয় সরকারের বড় সামাজিক প্রকল্পগুলির অগ্রগতির উপর নজরদারি চালাতে জেলায় জেলায় কমিটি গঠন করা হবে। একই সঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তার পরে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক হলে প্রয়োজনে ফের আন্দোলনে নামার রাস্তা খোলা রাখছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, জোট রাখতে গিয়ে যেমন দলীয় সংগঠন তুলে দেওয়া উচিত নয়, তেমনই দলকে শক্তিশালী করতে গিয়ে জোটে ফাটল ধরানোটাও সঠিক কৌশল নয়। দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখেই চলতে চান সনিয়া গাঁধী। কংগ্রেস নেতৃত্ব জোট অক্ষুণ্ণ রাখা বা ভারসাম্য বজায় রাখার যে চেষ্টা করছেন, তাতে কিন্তু নতুন অস্বস্তি তৈরি করেছেন গনিখান চৌধুরীর ভাই আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু)। রাজ্যসভায় যেতে আগ্রহী এই নেতা গত কালই সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। এ দিন রাজ্য মন্ত্রিসভায় রদবদলের সময় কংগ্রেসেরই প্রতিমন্ত্রী মনোজ চক্রবর্তীর হাত থেকে নিয়ে তাঁকে পরিষদীয় দফতরের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়। কংগ্রেস নেতারা কেউ কেউ বলছেন, লেবুবাবুকে এই ভাবে ‘পুরস্কৃত’ করা হল। দলের ‘সরকারি’ বক্তব্য অবশ্য অন্য। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্য, “আমার সঙ্গে লেবুবাবুর কথা হয়েছে। উনি জানিয়েছেন, অন্য কোনও দলে যাওয়ার পরিকল্পনা তাঁর নেই।” কাল লেবুবাবু যা বলেছেন, সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রদীপবাবুর বক্তব্য, উনি বাইরে যা-ই বলুন, দলের মধ্যে কী বলছেন, সেটা দেখতে হবে। তাই তাঁকে বহিষ্কার করার প্রশ্নও অযৌক্তিক বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রদীপ। সরকারি ভাবে এ কথা বলতে হলেও এআইসিসি তথা প্রদেশ নেতৃত্ব মনে করছে, লেবুবাবু তৃণমূলে যোগ দিলে মানুষের কাছে এই বার্তাই যাবে যে, তিনি রাজ্যসভার সদস্যপদের লোভেই তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.