মানুষ এখনও বিরক্ত, মানছে দল
মমতা-বিরোধিতায় সতর্ক সিপিএম
রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর আট মাস অতিবাহিত। বিরোধী দল সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, রাজ্যের মানুষ যে ভাবে তিতিবিরক্ত হয়ে তাঁদের রাজ্যপাট থেকে সরিয়েছিল, এখনও সেই মনোভাবে বিরাট কোনও পরিবর্তন আসেনি। বিশেষত গ্রাম বাংলার মানুষের এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে মোহভঙ্গ হয়নি। সিপিএম-কেও বিকল্প হিসেবে কাছে টেনে নেননি।
সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, গত আট মাসে যা হয়েছে তা হল, মমতার কাছ থেকে গগনচুম্বী প্রত্যাশায় একটু চিড় ধরা। সেই প্রশ্নগুলিকে মূলধন করে আপাতত গোটা রাজ্য জুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলাই সিপিএমের লক্ষ্য।
আগামিকাল কলকাতায় দলের তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শুরু হতে চলেছে। এপ্রিল মাসের পার্টি কংগ্রেসের আগে এই দীর্ঘ বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও এ বারের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান আলোচ্য মতাদর্শগত দলিল এবং রাজনৈতিক প্রস্তাব। দীর্ঘ কুড়ি বছর পর সিপিএম আবার মতাদর্শগত প্রশ্নে দলীয় খোলনলচে বদলানোর কথা বলছে। কিন্তু এই তাত্ত্বিক আলোচনার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে ভবিষ্যৎ পথনির্দেশিকা নিয়েও কথা হবে।
পলিটব্যুরোর এক সদস্য বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সব নীতি গ্রহণ করছেন, আমরা তার বিরোধিতা করব। কৃষকদের আত্মহত্যা থেকে ভ্রান্ত জমি ও শিল্প নীতি নিয়ে মানুষের কাছে যাব। কিন্তু আপাতত ব্যক্তি আক্রমণ পরিহার করে মূলত নীতির বিরোধিতা করাই আমাদের কৌশল। আর আন্দোলনও গড়ে তুলতে হবে ধাপে ধাপে। কারণ যে সমস্ত মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁদের একাংশের মনে তৃণমূল সরকার সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন তৈরি হলেও আমাদের দলের গ্রহণযোগ্যতা নতুন করে বেড়ে গিয়েছে, এমন নয়। তাই আত্মতৃপ্তি বিসর্জন দিয়ে এখন অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে।”
সিপিএম নেতাদের একাংশের ধারণা, বিরোধী দলনেতা হিসেবে সূর্যকান্ত মিশ্রকে যে ভাবে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাতে তাঁকে পলিটব্যুরোতে নিয়ে আসা হতে পারে। দল মনে করছে, তিনি বিধানসভায় যথেষ্ট সফল।
কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক পরিস্থিতিতে সে ভাবে কোনও বদল আসেনি। জেলাওয়াড়ি সংগঠনেও তেমন কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। কয়েকটি ক্ষেত্রে জেলা সম্পাদক বদল হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরানো জেলা সম্পাদকেরাই থেকে গিয়েছেন। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, বেশ কিছু জেলায় কিছু দিন আগেই নতুন সম্পাদক এসেছেন। এত তাড়াতাড়ি বদল করা হবে কেন? অনেকে বলছেন, কেন্দ্রীয় স্তরে সাধারণ সম্পাদকের পদের মেয়াদের সীমা সর্বাধিক তিন বার করে দেওয়ায় আপাতত ভোট বিপর্যয়ের জন্য প্রকাশ কারাটকে সরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারাটের পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে তিনটি মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ইস্তফা দিলে তিনিই হবেন সব চেয়ে কম সময়ের সাধারণ সম্পাদক।
কিন্তু পাল্টা যুক্তি হল, কারাট থেকে যাওয়ার ফলে রাজ্য সম্পাদক বদলের সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। আবার রাজ্য সম্পাদকের পরিবর্তন না হওয়ায় জেলা সম্পাদক পদগুলিতেও কোনও বড় মাপের পরিবর্তন হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরেও সাংগঠনিক কাঠামো কার্যত একই থেকে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সিপিএম নেতাদের একাংশের প্রশ্ন, জেলাওয়াড়ি সাংগঠনিক পরিবর্তন না হলে দলের ক্ষতিগ্রস্ত গণভিত্তি কী ভাবে ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে। বিমান বসু ও রাজ্যস্তরের নেতারা বারবার বলছেন, শুধু দলীয় সমর্থক নয়, সাধারণ জনসমষ্টির যে বড় অংশ সিপিএম-কে পরিত্যাগ করেছেন, তাঁদের অভিমান ঘুচিয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু সেটা হবে কোন পথে? মারমুখী জঙ্গি আন্দোলন আর করতে চাইছে না সিপিএম। সূর্যকান্তের স্টাইলে এখন রাজ্য জুড়ে সরকারের বিচ্যুতিগুলি তুলে ধরতে তারা আগ্রহী। সিপিএম নেতৃত্ব বলছেন, এখনও মানুষ বিকল্প হিসেবে সিপিএম-কে ভাবতে পারছে না। আর তাই বিমানবাবু বলেছেন, “আত্মসমীক্ষা করুন। কেন আমরা জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হলাম, কেনই বা সেই জনবিচ্ছিন্নতা বুঝতে পারলাম না।” সিপিএম নেতারা মনে করছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন আগামী বছরের গোড়ার দিকে হয়ে যেতে পারে। এবং সেই ভোটে যদি তৃণমূল আবার জয়ী হয়, তা হলে ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের পক্ষে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠবে। কাজেই এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সিপিএম নেতৃত্ব দলীয় কর্মীদের সতর্ক করে বোঝাতে চান যে, রাজ্যে মমতা ‘মিথ’ অটুট। ফলে একশো মিটার নয়, দলকে আপাতত ম্যারাথন দৌড়তে হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.