ঘড়িতে রাত ১২টা। আচমকা গুলির শব্দে শীতের আয়েসি ঘুম ভেঙে গেল বাসিন্দাদের। একটা, দুটো নয়। একেবারে নাগাড়ে গুলি চলছে। তবে কি পুলিশ আর দুষ্কৃতীদের মধ্যে গুলির লড়াই চলছে? কেউ ভেবেছিলেন গরু পাচারকারীদের ধরতে বিএসএফ গুলি চালাচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার সুটিয়া বাজার এলাকার মানুষের কাছে অবশ্য গুলির শব্দ নতুন নয়। কখনও দুই দুষ্কৃতীদলের মধ্যে কখনও পুলিশ ও দুষ্কৃতীদের মধ্যে গুলির লড়াই তাঁদের কাছে পরিচিত। কিন্তু আজকেরটা যেন অন্যরকম। কৌতূহল নিয়ে আর সাহসে ভর করে অনেকেই বেরিয়ে এসেছিলেন ঘরের বাইরে। কিছুক্ষণ পর অবশ্য বোঝা গেল আসল ঘটনা।
সুটিয়াবাজারে পুলিশের একটি ক্যাম্প রয়েছে। জানা গেল ওই ক্যাম্প থেকেই ভেসে আসছে গুলির শব্দ। কী হয়েছে তা জানতে এবং ঘটনাটা জানাতে সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন ফোন করলেন গাইঘাটা থানায়। খবর পেয়ে শেষে হাজির হলেন গাইঘাটা থানার ওসি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। জানা গেল এতক্ষণ ধরে যে গুলি চলছে তা চালাচ্ছেন ফাঁড়িরই এক কনস্টেবল। কোনওরকম প্ররোচনা ছাড়াই। শেষ পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে গিয়ে কোনওমতে ওই কনস্টেবলকে নিরস্ত করেন অবিন্দমবাবু। স্বস্তি পান সকলেই।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে ওই ঘটনায় সংশিষ্ট কনস্টেবলকে দোলতলা পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শুরু করা হয়েছে বিভাগীয় তদন্তও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ত্রিশের ওই কনস্টেবলের নাম, সাগর রায়। তাঁর বাড়ি নদিয়ার নবদ্বীপে। কয়েক বছর আগে তিনি চাকরিতে যোগ দেন। গাইঘাটা থানার অধীনে সুটিয়া বাজারে যে পুলিশ ক্যাম্পটি রয়েছে, সেখানে তিনি কর্মরত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ওই ক্যাম্পে আরও দু’জন কনস্টেবল থাকতেন। ওসি অরিন্দমবাবু যখন ৬ পুলিশ কর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান তখনও গুলি চলছিল। ক্রমাগত গুলি চলতে থাকায় কী ভাবে কী হবে তা প্রথমে ভেবে পাননি তাঁরা। একটু পরে সন্তর্পণে অন্য পুলিশকর্মীদের নিয়ে ফাঁড়ির পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকেন অরিন্দমবাবু। দেখেন রাইফেল উঁচু করে গুলি ছুড়ছেন সাগরবাবু। তিনি কোনওমতে আড়াল করে পিছন দিক থেকে গিয়ে তাঁকে জাপটে ধরে ফেলেন। এর পরে অন্য পুলিশকর্মীরা এগিয়ে গিয়ে রাইফেলটি ছিনিয়ে নেয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন কনস্টেবলের প্রত্যেকের কাছেই ৩০ রাউন্ড করে গুলি ছিল। রাইফেলে ৫টি থাকে। জানা গিয়েছে, নিজের রাইফেল থেকেই সাগরবাবু সমস্ত গুলি ছোড়েন। ২০ রাউন্ডেরও বেশি গুলি ছোঁড়া হয়। অরিন্দমবাবু জানান, গুলিতে কেউই হতাহত হননি। তবে ক্যাম্পের দেওয়াল ও ছাদ গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফাঁড়ির অন্য দুই কনস্টেবল জানিয়েছেন, রবিবার সন্ধ্যায় স্ত্রী সঙ্গে ফোনে উত্তপ্ত কথাবার্তা হয় সাগরবাবুর। এর পরে রাতে ওই ভাবে সাগরবাবুকে গুলি ছুড়তে দেখে তাঁরা ভয়ে পালিয়ে যান। পুলিশকেও সাগরবাবু জানিয়েছেন, পারিবারিক কারণে কিছুদিন ধরেই তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছেন। এ দিন থাকতে না পেরে এ দিন রাতে গুলি ছুড়ে অবসাদ কাটাতে চেয়েছিলেন। |