ফাইবারে আগুন, টেলি-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
চার দিন ধরে টেলি-যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে রয়েছে নবদ্বীপ।
শুক্রবার রাতে নদিয়ার ওই প্রাচীন জনপদে টেলিফোন এক্সচেঞ্জের কাছে গৌরাঙ্গ সেতুর উপরে অপটিক্যাল ফাইবারের কেবলে আগুন ধরে যায়। সাধারণত ওই কেবল মাটির নিচ দিয়েই গ্রাহকদের কাছে পৌঁছয়। তবে নদী পারাপারের সময়ে ওই কেবল আর মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপায় ছিল না। আগুন লাগে সেখানেই।
তবে আগুন লাগার কারণ অবশ্য সোমবারও স্পষ্ট হয়নি। নবদ্বীপে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধধারে ইতিমধ্যেই বর্ধমান থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল রবিবার থেকেই এলাকায় কাজ করছে। তবে লাইন অবশ্য চালু করা যায়নি। সোমবার সন্ধ্যেতেও নবদ্বীপে টেলিফোনে যোগাযোগ অসম্ভব হয়ে পড়ে রয়েছে।
বিএসএনএলের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সমরেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, “শুক্রবার রাতের দিকে আগুন লাগে। সম্ভবত কেবলের তার চুরি করতে এসেই আগুন লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা।” কিন্তু তা কবে ফের চালু করা যাবে সে ব্যাপারে কোনও ভরসার কথা শোনা যায়নি সমরেন্দ্রবাবুর মুখে। তিনি মনে করেন, আগুন ‘ইচ্ছাকৃত’ ভাবেই লাগানো হয়েছে। কেন? টেলিকর্তাদের ব্যাখ্যা, ফাইবারের মধ্যে তামা আছে বলে মনে করেছিল দু,্কৃতীরা। তা না পেয়ে ক্ষোভেই আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। পুলিশ অবশ্য এখনই তেমন কোনও সিদ্ধান্তে আসছে না। সমরেন্দ্রবাবুও জানান, “আমাদের প্রথম লক্ষ্য লাইন চালু করা। পরে এ ব্যাপারে তদন্ত করা যাবে। তবে লাইন কবে চালু হবে তা বলা সম্ভব নয়।”
এ অবস্থায়, নবদ্বীপের হাসপাতাল থেকে দমকল, পুলিশ থেকে সরকারি দফতর এমনকী রেলের স্বয়ংক্রীয় বুকিং ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। দমকলে ফোন করেও লাইন না পাওয়ায় ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি এলাকায় আগুন লাগার ঘটনা দমকলে জানানোই যায়নি বলে জানা গিয়েছে।
পাশাপাশি স্থানীয় থানায় ফোনে অন্তত কেউ ‘বিরক্ত’ করছেন না। থানা থেকেও প্রয়োজনে জেলা সদর কিংবা অন্য মহকুমায় ফোন করা যাচ্ছে না। স্থানীয় থানার আইসি শঙ্কর রায়চৌধুরী বলেন, “সেই পুরনো সময়ে ফিরে গিয়েছি মশাই! দত তিন দিন ধরে ফোন নেই। তাই সদরে খবর পাঠাতে হলে মেসেঞ্জার দিয়েই তা পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া উপায় কী?” তিনি জানান, ১০০ ডায়াল থমকে যাওয়ায় অনেকেই হয়তো অভিযোগো করতে পারছেন না।পাঠিয়ে অন্য থানৈায় খবর পাঠাতে হচ্ছে।
যোগাযোগহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালও। হাসপাতালের সুপার স্বপনকুমার দাস বলেন, “কী অসম্ভব অসুবিধার মধ্যে রয়েছি বলে বোঝাতে পারব না। তেমন গুরুতর কোনও রোগীকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠাতে হলে সেখানে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া রীতি। কিন্তু গত তিন দিনে তা করব কী করে! ফলে রোগী পাঠাচ্ছি আগাম খবর না দিয়েই।” দমকলের ওসি হরলাল সরকার বলেন, “আগুন লাগলে ফোনই মানুষের এক মাত্র ভরসা। আমরাও দিনে অন্তত ত্রিশ-চল্লিশটা ‘কল’ পেতাম। গত তিন দিনে একটাও পাইনি।” দমকল সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে, শহরে তিনটি ঘটনা ঘটলেও দমকলে খবর দিতে পারেননি স্থানীয় বাসিন্দারা।
বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রেলও। নবদ্বীপ স্টেশন ম্যানেজার কার্তিকচন্দ্র মণ্ডল মণ্ডল বলেন, “শুক্রবার রাতে রিজার্ভেশন এবং অন্যান্য বুকিং থমকে গিয়েছিল। তবে আমাদের একটি হেভি-পাওয়ারফুল ইনভার্টার থাকায় তা দিয়েই সাময়ীক কাজ চলছিল।” কিন্তু প্রায় ৫০ ঘণ্টা ব্যাকআপের সেই ইনভার্টারও বসে গিয়েছে রবিবার থেকে। ফলে রবিবার থেকে কম্পিউটারাইজড টিকিট দেওয়া বন্ধ। এখন রেলের একটিই বুকিং কাউন্টার থেকে মান্ধাতার আমলের পাঞ্চ করা টিকিট দেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সমস্যা অনেক। কার্তিকবাবু বলেন, “একে তো টিকিটের পরিণাণ কম, তা ছাড়া সব স্টেশনের টিকিটও দেওয়া যাচ্ছে না। টিকিট পেতেও দেরি হচ্ছে যাত্রীদের। ফলে গত দু’দিন ধরে নবদ্বীপ স্টেশনে ট্রেনগুলি দাঁড় করিয়ে রেখে ফলে পাঞ্চ করা টিতকিট দেওয়া হচ্ছে।” তিনি জানান, গড়ে নবদ্বীপ থেকে টিকিট বাবদ রেলের আয় ছিল প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। গত দু’দিনে তা কমে এক লক্ষেরও নিচে নেমে গিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.