এডমিলসনকে পরে নামানোর চিন্তা
মর্গ্যানের মাথায় নতুন অঙ্ক, চোখে নতুন স্বপ্ন
ট্রেভর জেমস মর্গ্যান ইস্টবেঙ্গল মাঠে তখন ইয়ার্কি করছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। রেড রোডের ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে কণিকার গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত ভেসে আসে। “আমি কেবলই স্বপন করেছি বপন।”
মর্গ্যানও স্বপন বপন করে চলেছেন বাতাসে।
শেষ পাঁচ ম্যাচের পরিসংখ্যান তিতকুটে। তিনটে হার, একটা ড্র, একটা জয়। ১১ গোল হজম। সমর্থকরা দমে যেতে পারেন, লাল-হলুদ কোচ নন।
চাপের কথা শুনে মাঝপথে থামিয়ে মর্গ্যানের পাল্টা প্রশ্ন, “কেন চাপে থাকব? এখনও কলকাতা লিগে আমরাই এক নম্বর। আই লিগে যুগ্ম দু’নম্বর। আগামী এক মাসে ওখান থেকে সরে গেলে চাপে পড়ার কথা ভাবা যাবে।” তাঁর মুখ ভর্তি কৌতুক শীতের রোদের মতোই ঝলমলে।
অথচ ঝলমলে হওয়ার মতো পরিস্থিতি সত্যিই নেই। এডমিলসনকে দেখে কিশোরও বুঝবে, তিনি ফিট নন। পাঁচ মিনিট প্র্যাক্টিস, পাঁচ মিনিট বিশ্রাম এই ফর্মুলায় চলল তাঁর দিন। “এখনও তৈরি নয়। প্র্যাক্টিসে নেই। কাল শেষ পনেরো-কুড়ি মিনিট দেখা যেতে পারে।” মর্গ্যানই বলে দিলেন। এ দিনই হঠাৎ চোট পেয়ে বাইরে বলজিৎ সাহনি। নওবা সিংহ, রবীন সিংহ, রাজু গায়কোয়াড় এখনও আলাদা ট্রেনিংয়ে। এডমিলসন যাঁর উপর দু’বছর আগে চড়াও হয়ে সাসপেন্ড হয়েছিলেন, সেই সৌমিক দে কার্ড দেখে নেই। চোটের জন্য নেই নির্মল ছেত্রী।
অনুশীলনে এডমিলসন। সোমবার। ছবি: উৎপল সরকার।
তা হলে সাহেব কোচ এত হাসিখুশি মেজাজে কী করে? তাঁর ছাত্রদের প্র্যাক্টিসে উপচে পড়ছে চিৎকার, হইচই, স্ফূর্তি। বেশ শীতের পিকনিকের মেজাজ। তারকারা চলে যাওয়ার পরে কোচেরাই গোল করার প্র্যাক্টিসে মেতে উঠলেন।
দুটো কারণ মনে হল। সামনের দুটো প্রতিপক্ষই সবচেয়ে নীচের দল পৈলান অ্যারোজ আর হ্যাল। এডমিলসনকে পরের দিকে দেখে নেওয়ার আদর্শ যুদ্ধক্ষেত্র।

দ্বিতীয় কারণটা আরও গুরুত্বপূর্ণ। আই লিগে কেউ এ বার ধারাবাহিক নয়। খারাপ খেলতে খেলতে ভাল, ভাল খেলতে খেলতে খারাপ সব দল দাদরা-কাহারবা-চৌতাল ভুলে এই তালে। সবাই আজ ফকির তো কাল রাজা। মর্গ্যান জানেন, দুটো ম্যাচ জিতলে এক নম্বরেও চলে যাওয়া যায়। তখন লোকে সব ভুলে যাবে। থুতু দেওয়া, মাঠে আটকে রাখা, গালাগাল, জোড়া চার গোল। এমনিতেই লোকের স্মৃতি কম। কলকাতার বড় ক্লাবের সমর্থকদের স্মৃতি আরও কম।
নতুন রূপ দেওয়া হচ্ছে বলে ইস্টবেঙ্গল তাঁবু জুড়ে ভাঙাচোরার চিহ্ন। তারই মধ্যে চলছে কাজ। মর্গ্যানের ট্রেনিং দেখে মনে হচ্ছিল, সেখানেও নতুন কিছু তৈরির কাজ চলছে। নওবা-ভাসুমের দৌড় যে দিন থেকে নেই, সে দিন থেকে ইস্টবেঙ্গলও জবুথবু। মর্গ্যান মঙ্গলবারের ম্যাচটায় চেষ্টা করছেন চার্চিল থেকে আসা আর এক জুটি রবার্ট ও পাইতেকে দিয়ে নতুন কিছু করার। ডিফেন্সিভ স্ক্রিন মেহতাবকে নীচ থেকে অনেকটা উপরে তুলে আনার চেষ্টা চলল। যদি স্ট্রাইকারের অভাব ঢাকা যায়। হরমনজিৎ খাবড়া মাঝমাঠ থেকে রাইট ব্যাকে। পুণে ম্যাচের মতোই ৪-৪-১-১ ছকে সামনে শুধু টোলগে। একটু পিছনে পেন।
পৈলান অ্যারোজের তিরে বেশি বিষ নেই। যত পারো, পরীক্ষা করে নেওয়ার এটাই সুযোগ।
অ্যারোজের কোন তির সবচেয়ে বিষাক্ত? সুখবিন্দর সিংহের সঙ্গী দুই বাঙালি কোচ তনুময় বসু এবং সুজিত চক্রবর্তীকে প্রশ্নটা করলে, জনা চারেক নাম উঠে আসছে। ফরোয়ার্ড সাবিথ, গোলকিপার নবীন কুমার, মিডফিল্ডার জীবন সিংহ, প্রবীর দাস, শাহনাজ সিংহ। এঁদের মধ্যে সাবিথ ও নবীনকে পরের বার পেতে বড় ক্লাব লোক লাগিয়েছে এখন থেকেই।
অ্যারোজের নামের পাশে একটাও জয় না থাকতে পারে, কিন্তু ১৪টি ম্যাচে ৭টি তারা ড্র করেছে। ঠিক এক মাস আগে যুবভারতীতেই অ্যারোজ ড্রয়ের তির বিঁধিয়েছে মর্গ্যানের পায়ে। লাল-হলুদ কোচের মাথায় আছে সেটা, “ওরা ডিফেন্সে লোক বাড়িয়ে জমাট করছিল। ওটা মাথায় রাখতে হবে আমাদের।”
এডমিলসন মার্কুয়েজ পার্দালের মাথায় কী আছে? এমনিতে প্র্যাক্টিসে তাঁকে বিচ্ছিন্ন দেখাচ্ছিল। মর্গ্যান তাঁকে দেখলেন একেবারে শেষ দিকে। ইস্টবেঙ্গল তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়ার পরে গত দু’বছরে এডমিলসনের নাম কাগজে বড় করে বেরিয়েছে দু’বার। এক বার ইস্টবেঙ্গলকে হারান জোড়া গোল করে, সাদার্ন সমিতির হয়ে। অন্য বার এক গোল করে, চিরাগ ইউনাইটেডের হয়ে। গোলটা চেনেন। মনের জোর বেশ ভাল। ছোট বক্সে বা ফ্রি-কিকে তাঁর পা কথা বলত একটা সময়। যে কোচের কোচিংয়ে এডমিলসন ইস্টবেঙ্গলে শেষ দিন অসভ্যতা করে ছিটকে যান, সেই সুভাষ ভৌমিক অকপট, “ও বক্স স্ট্রাইকার। ব্রিলিয়ান্ট শুটার। সুব্রতর কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গলে যে সব গোল করেছে, দারুণ। সেট করতে পারলে টোলগে-এডমিলসন বোঝাপড়া ভাল হবে। দু’জনেরই গতি ভাল।” তার পরে একটু সংশয়ী গলা, “তবে জানি না, ও কতটা ফিট। তা ছাড়া টোলগে, এডমিলসনের মধ্যে নীচে নেমে আসবে কে?”
প্রশ্ন ওটাই। খ্যাপাটে এডমিলসন কতটা ফিট? কতটা নীচে নেমে আসতে পারবেন?
মর্গ্যানের ‘স্বপন বপন’ এর রাজপথে ওই প্রশ্নই একঝাঁক তির হয়ে গেঁথে রয়েছে।

মঙ্গলবারে আই লিগ
ইস্টবেঙ্গল: পৈলান অ্যারোজ (যুবভারতী, ২-০০)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.