পুরপ্রধান-সহ রিষড়া পুরসভায় কংগ্রেসের আরও চার কাউন্সিলর সোমবার যোগ দিলেন তৃণমূলে। তবে তাঁদের দলে যোগ দেওয়ার প্রতিবাদে তৃণমূলেরই একাংশ এ দিন বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। ঠিক এক সপ্তাহ আগে চার কংগ্রেস কাউন্সিলর দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। এ দিন নতুন করে আরও চার জন দল ছাড়ায় ওই পুরসভায় কংগ্রেসের হাতে রইল একটি মাত্র আসন।
হুগলির ১৩টি পুরসভার মধ্যে একমাত্র রিষড়াতেই পুরপ্রধান ছিল কংগ্রেসের। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্য জুড়ে জোট-জটিলতার আবহে কংগ্রেস কাউন্সিলরদের দলে নিয়ে কংগ্রেসকেই ‘বার্তা’ দিল তৃণমূল। তবে এ দিন ওই কাউন্সিলরদের যোগদান মসৃণ হল না। তাঁদের দলে না নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠী। সভাস্থলে চেয়ার উল্টে দেওয়া হয়। রীতিমতো হুলুস্থূল বেধে যায়। কোনও রকমে পরিস্থিতি সামলান দলীয় নেতৃত্ব। সভা কাটছাঁট করে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে কে পুরপ্রধান হবেন, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।
গত পুরসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট করে লড়াই করে। ২৩টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৯টি ও তৃণমূল ৮টি আসনে জেতে। বামফ্রন্টের হাতে রয়েছে ৬টি আসন। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পুরবোর্ড গঠন করে। পুরপ্রধান হন কংগ্রেসের শঙ্কর সাউ। কংগ্রেসের ৮ জন দলে যোগ দেওয়ায় তৃণমূলের আসন সংখ্যা বেড়ে হল ১৬। গত কয়েক দিন ধরেই শঙ্করবাবুদের দলে টানার চেষ্টা করছিল তৃণমূল। দলীয় সূত্রের খবর, রবিবার রাতে শঙ্করবাবুরা তৃণমূল ভবনে গিয়ে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করে আসেন। দলে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে ‘সবুজ সঙ্কেত’ দিয়ে মুকুলবাবু তাঁদের ‘ভাল করে কাজ’ করার পরামর্শ দেন। |
সোমবার বিকেলে রিষড়া রবীন্দ্রভবনে সভা করে তৃণমূল। সেখানেই শঙ্করবাবু এবং বাকি তিন জন বিজয় মিশ্র, মায়া গুপ্তা এবং ঊষাদেবী সাউ দলে যোগ দেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক সুদীপ্ত রায় এবং তপন মজুমদার। হলের ভিতরে-বাইরে হাজারের উপর তৃণমূল কর্মী ছিলেন। সাংসদ হলে ঢুকতেই এক দল কর্মী চেঁচামিচি আরম্ভ করে দেন। শঙ্করবাবুকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের হাতে পোস্টারে লেখা ছিল, ‘প্রোমোটার, জমি মাফিয়া পুরপ্রধান শঙ্কর সাউয়ের তৃণমূলে যোগদান মানছি না।’ একই কারণে বিজয় মিশ্রকে দলে নেওয়াতেও আপত্তি জানান তাঁরা। কল্যাণবাবু ধমক দিয়ে বিক্ষোভকারীদের থামান।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাংসদ বলেন, “আমাদের দলের ঘোষিত নীতি প্রোমোটিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কাউকে দলে নেওয়া হবে না।” প্রসঙ্গত, শঙ্করবাবু নিজে প্রোমোটিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কল্যাণবাবুর বক্তব্য শেষ হলে ফের হট্টগোল শুরু হয়। কোনও রকমে যোগদান প্রক্রিয়া শেষ হয়। কল্যাণবাবু চলে যাওয়ার সময়েও কর্মীরা বলতে থাকেন, “এ জিনিস মানব না।” মঞ্চের চেয়ার উল্টে ফেলা হয়। শঙ্করবাবুর মন্তব্য, “যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাঁরা দলের কর্মী নন। রিকশাচালকেরা এমন করেছেন।” তাঁর দাবি, “রিষড়ার মানুষের কথা ভেবে এই শহরের উন্নয়ন করতেই তৃণমূলে এলাম।” গত ৯ তারিখে তিনি অবশ্য জানিয়েছিলেন, তিনি কংগ্রেস ছাড়ার কথা ভাবছেন না।
রিষড়ার তৃণমূলের একাংশের অবশ্য ক্ষোভ, এ দিনের সভায় স্থানীয় নেতাদের সভায় বক্তব্য রাখার কোনও সুযোগ দেওয়া হয়নি। যদিও, দলের শহর সভাপতি শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা মহিলা তৃণমূলের পাপিয়া দত্ত-সহ অন্যান্য নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। গত ৯ জানুয়ারি পুরপ্রধান শঙ্করবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় তৃণমূল। ওই দিন দলে যোগ দেওয়া চার কাউন্সিলর ওই চিঠিতে সই করেন। সেই শঙ্করবাবুই দলে যোগ দেওয়ায় ওই চার কাউন্সিলর এবং তাঁদের দলবল এখন যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। ওই গোষ্ঠীর এক নেতা বলেন, “যাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে আমরা দলবদল করলাম, তাঁকেই দলে নেওয়া হল। এ কেমন বিচার? এ ভাবে আমাদের অপমান করা হল।” সভা শেষ হওয়ার পরেও অনেক জায়গায় তৃণমূল কর্মীদের জটলা ছিল। সভায় তাঁদের ‘কথা শোনা হল না’ বলে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রিষড়ার তৃণমূল নেতা সাকির আলি অবশ্য বলেন, “কিছু দুষ্কৃতী আমাদের সভায় ঢুকে পড়েছিল। কংগ্রেস-সিপিএমের লোকও ঢুকেছিল। তারাই বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ওরা আমাদের দলের কেউ নয়।”
কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দিলীপ নাথের প্রতিক্রিয়া, “তৃণমূলের সাংসদ এবং বিধায়ক কাউন্সিলরদের দু’টি গোষ্ঠী করে বাঁদর নাচ নাচাচ্ছেন। এটা ধান্দার খেলা চলছে। এতে কংগ্রেসের কোনও ক্ষতি হবে না।” |