সুপারম্যান কী পারে, আর কী পারে না, তাহা বলা কঠিন। তবে, রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নিশ্চিত, সরকারি হাসপাতাল হইতে শিশু চুরি যাওয়া ঠেকানো সুপারম্যানেরও অসাধ্য। কিন্তু, হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিবার দায়িত্বটি তো সুপারম্যানের উপর ন্যস্ত করা হয় নাই। ফলে, আলোচনাটি অবান্তর। প্রশ্ন হইল, সরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তার এমন দশা কেন? আমলারা যাহা বলিয়াছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উত্তরও তাহা অপেক্ষা পৃথক হইবার কথা নহে হাসপাতালে এমনই ভিড় যে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা কার্যত অসম্ভব। কথাটি আপাতদৃষ্টিতে মিথ্যা নহে। হাসপাতালে রোগী এবং তাঁহাদের আত্মীয়দের সংখ্যার অনুপাতে পুলিশকর্মীর সংখ্যা হাস্যকর ভাবে কম। কিন্তু, হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষার কার্যে পুলিশ প্রয়োজন পড়ে কেন? আর পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতাল, অফিস, ব্যবসাকেন্দ্রের নিরাপত্তারক্ষার দায়িত্ব যেমন বেসরকারি সংস্থার হাতে ছাড়া থাকে, সরকারি হাসপাতাল কোন যুক্তিতে তাহার ব্যতিক্রম হইবে? কেহ বলিতেই পারেন, হাসপাতালও সরকারি, পুলিশও সরকারি সেই কারণেই এই ব্যবস্থা। অর্থহীন যুক্তি। বাণিজ্যের পরিভাষা ধার করিলে বলিতে হয়, পুলিশ এবং হাসপাতাল রাজ্য সরকারের ‘সেপারেট বিজনেস ইউনিট’ পৃথক ‘ব্যবসা’। ‘মালিক’ এক হইলেও একটি ‘ব্যবসা’ অন্যটির সহিত সম্পর্কহীন। কাজেই, সরকারি হাসপাতাল বলিয়াই পুলিশের হাতে নিরাপত্তার ভার সঁপিয়া দিতে হইবে, এই যুক্তি অসার। বস্তুত, বিশ্বের বেশির ভাগ উন্নত দেশেই এই জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার উপর ন্যস্ত থাকে। তাহার খরচ সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বহন করে। আর, বিশেষ ক্ষেত্রে পুলিশি নিরাপত্তা প্রয়োজন হইলে তাহার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করিতে হয়।
হাসপাতালে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীর প্রসঙ্গটি নিশ্চিত ভাবেই ব্যয়বৃদ্ধির প্রশ্নটিকে টানিয়া আনিবে। পুলিশ মোতায়েন রাখিবার জন্য বাড়তি খরচ নাই, কিন্তু বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীর ক্ষেত্রে তাহা আছে। সরকারি হাসপাতাল যদি সেই বাড়তি ব্যয় বহন করিতে বাধ্য হয়, তবে চিকিৎসার খরচও বাড়িবে। নিতান্ত দরিদ্র রোগীকেও সেই বাড়তি বোঝা বহন করিতে হইবে? এই পরিস্থিতিই কি কাম্য? দরিদ্র মানুষের উপর বাড়তি আর্থিক চাপ অবশ্যই কাম্য নহে, কিন্তু ভর্তুকিতে স্বচ্ছতা কাম্য বটে। হাসপাতালের নিরাপত্তার কাজে পুলিশকর্মী নিয়োগ করিয়া সরকার একটি ভর্তুকি দেয়। কিন্তু, এই ভর্তুকিটি অস্বচ্ছ। নিরাপত্তাকর্মী বাবদ হাসপাতালের যে খরচ হইবার কথা, তাহা সরকার করিয়া দেয়। তাহা কত টাকা, জানিবার উপায় নাই। সেই ভর্তুকিতে শুধু যে দরিদ্র মানুষেরই লাভ হইতেছে, তাহা নহে এস এস কে এম-এ চিকিৎসাধীন আমরি-কর্তা হইতে রামা কৈবর্ত, হাসিম শেখ, ভর্তুকি সকলের ক্ষেত্রেই সমান। তাহা হওয়ার কোনও কারণ নাই। বরং, নিরাপত্তাকর্মীর জন্য যে খরচ, হাসপাতাল তাহা সরাসরি বহন করুক। তাহাতে চিকিৎসার খরচও বাড়ুক। সরকার যদি দরিদ্রের স্বার্থরক্ষার কথা ভাবে, তাহা হইলে যাঁহারা দুঃস্থ, আর্থিক ভাবে অসমর্থ, তাঁহাদের জন্য ছাড়ের ব্যবস্থা থাকুক। সেই ব্যয় সরকার বহন করুক। এই ব্যবস্থায় ভর্তুকিটি স্পষ্ট হয় সুবিধাটি কাহার নিকট পৌঁছাইতেছে, তাহা দেখা যায়। যে কোনও সুস্থ প্রশাসন এই ভাবেই চলে। আর, এই ব্যবস্থায় হাসপাতালের নিরাপত্তাও বজায় থাকিবে। স্বাস্থ্যসচিবকে আর সুপারম্যানের দ্বারস্থ হইতে হইবে না। |