সম্পাদকীয় ১...
উন্নয়ন, না জাতপাত?
ঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর ও গোয়া সহ উত্তরপ্রদেশেও বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। তাহার মধ্যে হিন্দি বলয়ের হৃদয়পুর উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এই রাজ্যের নির্বাচনী প্রচার ও প্রস্তুতিপর্বে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কোনও দলেরই বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নাই। সকলেই জাত-পাত ও সম্প্রদায়ের হিসাব কষিতে ব্যস্ত। ইহা ভারতীয় গণতন্ত্রের এক অদ্ভুত বিকৃতি যে উন্নয়ন নয়, সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং অর্থাৎ কোন সম্প্রদায় বা জাতকে কাছে টানিয়া কাহাকে নিরপেক্ষ করিয়া দেওয়া দরকার, এই হিসাব-নিকাশই নির্বাচনী প্রস্তুতির মূল বিষয় বলিয়া গণ্য হইয়া থাকে। ইহা দুর্ভাগ্যজনক যে, যে-কোনও উপায়ে ক্ষমতা দখল করার জন্য মরিয়া রাজনীতিকরা ক্ষমতারোহণের সোপান হিসাবে এই সংকীর্ণ বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠিতে পারেন না, সে জন্য কোনও চেষ্টাও করেন না।
প্রসঙ্গত অনেকেরই প্রতিবেশী রাজ্য বিহারের গত বিধানসভা নির্বাচনের কথা মনে পড়িবে। সে সময় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার উন্নয়নের প্রশ্নটিকে এমন ভাবে ভোটদাতাদের সামনে তুলিয়া ধরেন যে, বিজলি-পানি-সড়ক-এর প্রাপ্তি ও প্রতিশ্রুতিই হইয়া ওঠে মুখ্য নির্বাচনী আলোচ্য। অথচ বিহারও হিন্দি বলয়ের রাজনীতি ও সংস্কারের বাহিরে নয়। জাত-পাতের ভেদাভেদ এ রাজ্যেও প্রবল। এখানে বিভিন্ন জাতের সামন্ত ভূস্বামী শ্রেণির নিজস্ব পাইক-বরকন্দাজও রহিয়াছে, যাহারা ভূমিসেনা, লোরিক সেনা, ব্রহ্মর্ষি সেনা ইত্যাদি নামে পরিচিত। লালুপ্রসাদ যাদব এই জাত-ভেদকে কাজে লাগাইয়াই যাদব-মুসলিম জোটের ভিত্তিতে দীর্ঘ কাল রাজ্যে ক্ষমতা ভোগ করিয়াছেন। কিন্তু নীতীশ কুমার তাঁহার শাসনকালে উন্নয়নের প্রশ্নটিকেই শাসনব্যবস্থার মুখ্য প্রশ্ন করিয়া তোলেন। ফলে কুর্মি, যাদব, মহাদলিত ইত্যাদি জাতের আনুকূল্যে তাঁহারও জনসমর্থন পুষ্ট হইলেও নির্বাচনী প্রচারে তিনি সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা অনগ্রসরদের সংরক্ষণকে সামনে আনেন নাই। ক্রমে বিহারের রাজনৈতিক এজেন্ডাই পরিবর্তিত হইয়া গিয়াছে। উত্তরপ্রদেশ কিন্তু এখনও জাত-পাতের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠিতে পারে নাই। কোনও রাজনৈতিক দলও সেখানে জাতের আত্মপরিচয়ের রাজনীতি অনুশীলন হইতে বিরত হয় নাই।
মায়াবতী যে তাঁহারা ক্ষমতা অটুট রাখিতে সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েই আস্থা রাখিবেন, তাহা স্বাভাবিক। বহুজনসমাজ হইতে সর্বজনসমাজে উত্তরণের তাঁহার প্রয়াসও আসলে দলিত ভোটের পাশাপাশি উচ্চবর্ণ ও অনগ্রসরদের ভোট আকৃষ্ট করারই পন্থা। তাই তাঁহার প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হইতেই তাহাতে কত জন ব্রাহ্মণ, কত জন ঠাকুর, কত দলিত মনোনয়ন পাইয়াছে, সেই গবেষণা শুরু হইয়া যায়। তবে অন্যান্য দলও প্রার্থী মনোনয়নের সময় জাত-পরিচয়কেই একমাত্র যোগ্যতা রূপে গণ্য করার অভ্যাস রপ্ত করিয়া ফেলিয়াছে। সেই সঙ্গে যে-সকল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হইতেছে, তাহাতেও জাত-ভেদের ভাবনা প্রবল। কংগ্রেস যদি মুসলিমদের জন্য ওবিসি কোটা ভাঙিয়া সাড়ে চার শতাংশ আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব দেয়, সমাজবাদী পার্টি তবে দশ শতাংশ সংরক্ষণের, যদিও ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ অসাংবিধানিক এবং মুখ্য নির্বাচন কমিশনারও কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতিকে নির্বাচনী বিধির পরিপন্থী বলিয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করিয়াছেন। বারাণসীর মুসলিম তাঁতি এবং বুন্দেলখণ্ডের চাষিদের জন্য রাহুল গাঁধীর রকমারি প্রতিশ্রুতির মধ্যেও আত্মপরিচয়ের রাজনীতির তোষণ অস্পষ্ট নয়। কোনও দলই বিজলি-পানি-সড়ক-এর কথা বলিতেছে না, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ উৎপাদন, গ্রামীণ হাসপাতাল, শিক্ষাবিস্তার, কলকারখানা তৈয়ারির কথা বলিতেছে না। কেবল সংরক্ষণের কোটা ধরাইয়া দেওয়ার প্রতিযোগিতা, ভোটে জিতাইলে বিশেষ সম্প্রদায় বা জাতকে রকমারি সুযোগসুবিধা দিবার আশ্বাস। সমগ্র রাজ্যবাসী উপকৃত হয়, জাত-উপজাত-সম্প্রদায়নির্বিশেষে রাজ্যবাসীর সার্বিক কল্যাণ হয়, এমন কোনও প্রতিশ্রুতি কি রাজনীতিকরা ভাবিয়া উঠিতে পারেন না?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.