জেল-ফেরত অপরাধীদের মূল স্রোতে ফেরার পথ বন্ধ করতে বিহার সরকারের ‘ফরমান’ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রাজ্যের মানবাধিকার কমিশন থেকে শুরু করে আইনজীবী সকলেই মনে করছেন একবার অপরাধ করলেই সেই ব্যক্তি সারা জীবনের জন্য অপরাধী হয়ে যায় না। বেঁচে থাকা মানুষের মৌলিক অধিকার। তাঁর আইনি বা সাংবিধানিক অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না।
প্রশ্ন উঠছে সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে সেই ব্যক্তিকে কি অপরাধের দিকে আরও বেশি করে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না? অপরাধ কমাতে গিয়ে সরকার কি পরোক্ষে অপরাধী বাড়িয়ে তুলছে না? রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এস এন ঝা স্পষ্টই বলেছেন, “শাস্তি পাওয়ার পরে যে কোনও ব্যক্তিকেই সুযোগ দেওয়া উচিত। এটা সরকার কি করছে তা বুঝে নিয়ে আমাদের এই ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” তবে তিনি মনে করছেন, সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত বিতর্কিত। তাঁর কথারই রেশ ধরে পটনা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি যোগেশ চন্দ্র বর্মা বলেন, “শাস্তি পাওয়ার পরে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের সাহায্য করা উচিত। তাঁকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে সরকারের ভূমিকা থাকা প্রয়োজন।” প্রবীণ আইনজীবী বলেন, “কোনও সরকার সাংবিধানিক, আইনগত এবং মৌলিক অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করতে পারে না। সাজা প্রাপ্ত ব্যক্তিকে জেল থেকে ছাড়ার অর্থ হচ্ছে সরকার তাকে মুক্তি দিচ্ছে। তা হলে কেন ফের তাকে শাস্তি পেতে হবে।”
প্রশ্ন তুলেছে বিহারের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। ‘প্রয়াস ভারতী’ নামে একটি সংস্থার তরফে সুমন লাল বলেন, “এক ব্যক্তি তার অপরাধের জন্য দু’বার সাজা পাবে কেন? সামাজিক বয়কট করে তাকে তো সামাজিক শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আর এটা করছে এক নির্বাচিত সরকার!” বিষয়টি নিয়ে নীতীশের বিরুদ্ধে আসরে নেমেছে কংগ্রেস, আরজেডিও। কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা প্রেম চাঁদ মিশ্র বলেন, “আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্ত মানতে পারছি না। জেল এখন সংশোধনাগারে পরিণত হয়েছে। তাঁর মতে,“সরকারের দেখা উচিত শাস্তি পাওয়ার পরে তারা যেন সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে পারে। অপরাধ করার পরেও অনেকেই ভাল হয়েছে।” রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল আজেডি-র রাজ্যসভার সদস্য রামকৃপাল যাদব মনে করেন, “সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যে অপরাধের সংখ্যা আরও বাড়বে। শাস্তি পাওয়ার পরে জেল থেকে বেরিয়ে এসে যদি কোনও ব্যক্তি কিছুই করতে না পারে তা হলে সে আবার অপরাধের জগতেই ফিরবে। নীতীশ কুমার আসলে এটাই চাইছেন।”
রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আমির সুভানি অবশ্য বলছেন, “আইন মেনেই আমরা যা করার করছি। কোনও সাজা প্রাপ্ত ব্যক্তি সরকারি কোনও সুযোগ পাবে না। এটা আইনেই আছে।” তা হলে সরকারকে নতুন করে এটা কেন বলতে হচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, “সকলকে অবহিত করানো হচ্ছে। এই সব অপরাধীদের চেনার জন্য ওয়েবাসাইটে তাদের ছবি দেওয়া হয়েছে।” এই প্রশ্নে তাঁর মন্তব্য, “সরকার কাউকে নিষেধ করবে না। ব্যাঙ্ক যদি এরকম কোনও ব্যক্তিকে ঋণ দিতে চায় তা তাদের ব্যাপার।” তবে সরকার তাদের পাশে থাকবে না। |