কলকাতার কাছাকাছি ‘ব্যাক আপ’ কেন্দ্র গড়তে এ বার আসানসোলের মতো শহরের দিকে ঝুঁকছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। ঠিক যেমন বেঙ্গালুরুর কাছে এ ধরনের কেন্দ্র গড়ে উঠেছে মহীশূরে। বস্তুত, বড় শহরে সংস্থার বড় কেন্দ্র কোনও কারণে আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলেও যাতে কাজ চালু থাকে, সে জন্যই তৈরি হয় ‘ব্যাক আপ’ বা বিকল্প কেন্দ্র। তাই আকারে বড় না হলেও, সঙ্কট সামলানোর নিরিখে কেন্দ্রগুলি গুরুত্বপূর্ণ।
আর তথ্যপ্রযুক্তির এই চাহিদাকে নিশানা করেই এ বার নিজেদের প্রকল্প পরিকল্পনা করছে নির্মাণ শিল্পমহল। উদাহরণ, বেঙ্গল সৃষ্টি। ছোট শহরে লগ্নি টানতে ওই বিকল্প কেন্দ্র গড়ার তাগিদকেই কাজে লাগাতে চাইছে তারা। তাই আসানসোলে ১০ লক্ষ বর্গফুট জুড়ে তারা গড়ছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের পরিকাঠামো। সংস্থার দাবি, লগ্নির অঙ্ক প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের পাশেই হচ্ছে আবাসন, স্কুল, হাসপাতাল-সহ সামাজিক পরিকাঠামোও। সংস্থার প্রধান হেমন্ত কানোরিয়া বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের চাহিদা যাচাই করেই এই প্রকল্পে হাত দিয়েছি। প্রথম দফায় তৈরি হবে ৫ লক্ষ বর্গফুট। পরে বাকি ৫ লক্ষ বর্গফুট।”
প্রধানত দক্ষ মানবসম্পদের ভরসাতেই দুর্গাপুর-আসানসোল এলাকায় দ্বিতীয় কেন্দ্র গড়তে চায় বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বিকল্প কেন্দ্র গড়তে কগনিজ্যান্ট এবং আইবিএম দক্ষ-এর মতো সংস্থার নজরও আসানসোলে। নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনাও চলছে তাদের। তবে এ নিয়ে বেঙ্গল সৃষ্টির তরফে কেউ মুখ খোলেননি। ন্যাসকমের পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা সুপর্ণ মৈত্র বলেন, “দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের শহরে লগ্নি টানতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের এই চাহিদা নতুন দিশা দেখাবে। ওই সব জায়গায় দক্ষ কর্মী পাওয়া ও ধরে রাখাও তুলনায় সহজ।”
সেক্টর ফাইভ ও রাজারহাটে জমি পাওয়ার সমস্যা বিগত সরকারকে যথেষ্ট বিপাকে ফেলেছে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে জমি দিতে হয়েছে ইনফোসিস ও উইপ্রোকে। তাই তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে কলকাতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা তৈরি হলেও বাদ সেধেছে পরিকাঠামোর অভাব। সেই খামতি দূর করার লক্ষ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেই জানিয়ে দেয় জেলায় জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা। শিল্পমহলের সঙ্গে প্রথম বার মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানান, বিভিন্ন জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি হাব গড়বে তাঁর সরকার।
রাজ্যের পরিকল্পনায় সায় দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারও। সল্টলেক, শিলিগুড়ি, হলদিয়া, দুর্গাপুর ও খড়্গপুরে তিন একর করে জমি আছে টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের। রাজ্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে (পিপিপি) পরিকাঠামো তৈরির প্রস্তাবে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে কেন্দ্র। |