বিশেষ নজর পর্যটন ও উৎপাদন শিল্পে
দুই বণিকসভার চাহিদা জানতে বৈঠক মমতার
মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পর থেকেই বলে তিনি আসছিলেন ‘আপনারা আসুন। আমাকে সমস্যার কথা জানান।” এ বার সরাসরি তাঁদেরই মঞ্চ দুই বণিক সভাকে টাউন হলে ডেকে নিলেন মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘বেঙ্গল লিডস’ শেষ হওয়ার দু’দিনের মাথাতেই।
সোমবার টাউন হলে মন্ত্রিসভার সহকর্মী ও বিভিন্ন বিভাগীয় সচিবদের নিয়ে সিআইআই এবং ফিকি-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মমতা। উদ্দেশ্য, রাজ্যে লগ্নি টানার পূর্ব শর্ত, এ ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকা ও লগ্নিকারীদের চাহিদা জেনে নেওয়া। বণিক সভার পক্ষ থেকে এ দিন নির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া সম্ভব না হলেও আলোচনার জমি তৈরি করতে তাদের পক্ষ থেকে উৎপাদন শিল্প ও পর্যটনকেই লগ্নির অন্যতম গন্তব্য করার সুপারিশ করা হয়।
উৎপাদন শিল্পের মধ্যে যে ক’টি ক্ষেত্রের কথা এ দিন উঠে আসে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার-হার্ডওয়্যার। সিআইআই-এর আঞ্চলিক অধিকর্তা সৌগত মুখোপাধ্যায় পরে বলেন, “আমরা একটা সার্বিক ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনার খসড়া দিয়েছি।”
রাজ্যে কর্ম সম্ভাবনা বাড়াতে উৎপাদন ও পর্যটন শিল্পের ভূমিকার কথা বেশ কিছু দিন ধরে বলে আসছে দুই বণিকসভাই। আঞ্চলিক উন্নয়নে এই দুই ক্ষেত্রে ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়। বৈঠকের পরে ইয়েস ব্যাঙ্কের কর্তা তুষার পাণ্ডে জানান, পুরুলিয়ায় সমবায় ভিত্তিক পর্যটন প্রকল্প গড়তে তাঁরা স্কটল্যান্ড সরকারের সঙ্গে সাহায্যকারীর ভূমিকা নিয়েছেন। তিনি বলেন, “উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বেরে এই ধরনের প্রকল্প ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। স্কটল্যান্ড যা পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ, সেখানেও এই মডেল সফল।” ভারত হোটেলস-এর সংস্থাটির কর্ণধার ও ফিকি-র পর্যটন কমিটির চেয়ারপার্সন জ্যোৎস্না সুরিও উপস্থিত ছিলেন এ দিনের বৈঠকে। ইতিমধ্যেই গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল পুনরুজ্জীবন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে সংস্থাটি। এ রাজ্যে আরও বিনিয়োগে আগ্রহী তারা।
পর্যটন শিল্পের উন্নতিতে রাজ্যের আগ্রহের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রীও। কলকাতায় গঙ্গা-তীরের সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি রাজ্যের সার্বিক পর্যটন ক্ষেত্রের বিকাশের জন্যও শিল্পমহলের সহযোগিতা চান তিনি। উত্তরবঙ্গে পাহাড় ও ডুয়ার্সে দু’টি পর্যটন-সার্কিট গড়ার পাশাপাশি দিঘা-মন্দারমণি-শঙ্করপুর-তাজপুর-উদয়পুর, পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, শান্তিনিকেতন-জয়রামবাটি-কামারপুকুর, সুন্দরবন প্রভৃতি জায়গায় ৪টি পর্যটন-উন্নয়ন প্রকল্প তৈরির ভাবনা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। বৈঠকে তিনি বলেন, “এ সব জায়গায় আমাদের জমি আছে। আপনারা কোথায় কী করতে চান তার প্রস্তাব জমা দিন। দ্রুত ছাড়পত্র পেয়ে যাবেন।”
বস্তুত, প্রথম থেকেই লগ্নিকারীদের সঙ্গে প্রশাসনের একটা সংযোগ সেতু গড়তে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। যে কারণে টাউন হলের বৈঠকে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন তথা জনস্বাস্থ্য ইঞ্জিনিয়ারিংমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ, পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরী এবং দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলামন্ত্রী জাভেদ খানরাও। প্রশাসনের তরফে মুখ্য ভূমিকা নেন নগরোন্নয়ন সচিব তথা ‘হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন। পরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ১৯ জানুয়ারি ফের এ নিয়ে বৈঠক হবে এবং সেই দায়িত্বও দেবাশিসবাবুকে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত, পুরসভাগুলিরও সহায়তা নেওয়া হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
শিল্প প্রতিনিধিদের কথা শোনার পাশাপাশি ওই বৈঠকে আমলাদের কাছে তাঁদের দফতরের কাজ নিয়েও প্রকাশ্যেই কৈফিয়ৎ চান মুখ্যমন্ত্রী। তথ্য-সংস্কৃতি সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কী ব্যাপার! ফিল্ম সিটি-র কাজ কতদূর হল?” পূর্তসচিব অজিত বর্ধনকে তাঁর প্রশ্ন, “রাজ্য সড়কের পরিকল্পনা কত দূর? প্রস্তাব জমা পড়ল না কেন এখনও?”
সেচসচিব অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান, এখনও কেন শহরের ৩টি প্রধান খালের বেহাল অবস্থা। অর্থ, শিল্প, পর্যটন, বন, মৎস্য, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন, পুর-নগরোন্নয়ন, ভূমি ও ভূমি সংস্কার, পরিবহণ, পরিবেশ, বিপর্যয় মোকাবিলা প্রভৃতি দফতরের সচিবরাও সেখানে ছিলেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.