রামপুরহাটে ৭ ছাত্রের আত্মসমর্পণে বিভ্রান্তি
রামপুরহাট কলেজে গত মঙ্গলবার ছাত্র-সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযুক্ত ৭ জন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) এবং ছাত্র পরিষদ সদস্য সোমবার রামপুরহাট এসিজেএম আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন। তাঁদের জামিনও মঞ্জুর হল। আর তা নিয়েই দেখা দিল ‘বিভ্রান্তি’।
কারণ, এ দিন জামিন পাওয়া সাত জনের মধ্যে তিন জন ওই কলেজেরই অধ্যক্ষ-নিগ্রহের ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। জামিন মঞ্জুর হতেই কোনও কোনও মহল থেকে বলা হতে থাকে, অধ্যক্ষ-নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত টিএমসিপি সদস্যেরা জামিন পেয়ে গেলেন পুলিশ ‘লঘু’ ধারায় মামলা করায়। যদিও ঘটনা হল, অধ্যক্ষ-নিগ্রহের সময় উপস্থিত ওই তিন জন-সহ ৬ জন এ দিনই ওই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণের আবেদন করলেও বিচারক তা খারিজ করে দেন। কারণ, অধ্যক্ষের দায়ের করা অভিযোগে কোনও ছাত্রের নাম নেই। অভিযোগ ছিল সংগঠনগত ভাবে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ কেন অধ্যক্ষ-নিগ্রহের মামলায় অভিযুক্তদের চিহ্নিতকরণে ‘তৎপর’ হল না, সে প্রশ্নে সরব নানা মহল।
রামপুরহাট আদালত চত্বরে আত্মসমর্পণকারী ছাত্ররা। সোমবার সব্যসাচী ইসলামের তোলা ছবি।
রামপুরহাট কলেজের অধ্যক্ষ শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “পুলিশ দ্বিচারিতা করছে। ভিডিও ফুটেজে সবই দেখা গিয়েছে। পুলিশ চাইলেই ওই ছাত্রদের ধরতে পারত কিংবা থানায় ডেকে ‘আর কোনও দিন এই ধরনের অপরাধ করব না’ মর্মে মুচলেকা লিখিয়ে নিতে পারত। পুলিশ কোনওটাই করেনি। এতে তো ওই ছাত্রেরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। আমি যে আবার হেনস্থার শিকার হব না, তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?” ‘রাজনৈতিক অঙ্গুলিহেলনে’ পুলিশ এমন ভূমিকা নিয়ে থাকতে পারে বলেও অধ্যক্ষের অভিযোগ। তাঁর কথায়, “মাজদিয়া কলেজে অধ্যক্ষ-নিগ্রহের ঘটনায় পুলিশি রিপোর্টের ভিত্তিতেই ছাত্রদের জেল-হাজত হয়েছে। আর রামপুরহাটের ক্ষেত্রে পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নিল না।” তবে নিজের অভিযোগে কেন কোনও ছাত্রের নাম দেননি, তার উত্তরে এ দিনও তিনি বলেছেন, “ছাত্রদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেছি।” অন্য দিকে, জেলা টিএমসিপি সভাপতি সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “অধ্যক্ষ টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে তাঁকে হেনস্থা বা নিগ্রহের যে অভিযোগ তুলেছেন, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ওই দিন আমাদের সংগঠনের কেউই অধ্যক্ষকে হেনস্থা করেননি।”
অধ্যক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ৩২৩ (ছোটখাটো নিগ্রহ) এবং ৩৪২ (ঘেরাও) ধারায় মামলা করেছে। এই দু’টি ধারাই জামিনযোগ্য। ‘রাজনৈতিক চাপ’-এর কথা অবশ্য অস্বীকার করেছেন বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা। তাঁর দাবি, “আমরা নিয়মমাফিকই তদন্ত চালাচ্ছি। বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমের কাছে ওই দিনের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ চেয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমাদের হাতে তা আসেনি। তবুও আমরা কিছু অন্য সূত্র থেকে ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে তাঁদের বাড়িতে হানা দিই। কিন্তু তাদের পাওয়া যায়নি।”
গত ১০ জানুয়ারি রামপুরহাট কলেজে এসএফআই-টিএমসিপি মারামারি হয়। এসএফআই পরিচালিত ছাত্র সংসদ কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি এবং ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। দু’পক্ষই পরস্পরের ১১ জনের (এসএফআই ৪, টিএমসিপি-ছাত্র পরিষদ ৭) বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেছিল। অধ্যক্ষ পুলিশের কাছে সেই অভিযোগ পাঠালে তার ভিত্তিতে মামলা হয়। ওই সংঘর্ষের জেরেই ১১ জানুয়ারি অধ্যক্ষকে কলেজেরই কিছু ছাত্র, টিএমসিপি-র সদস্যেরা মানসিক নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ।
সংঘর্ষের মামলায় এসএফআইয়ের চার জন গত শুক্রবার রামপুরহাট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান। এ দিন অন্য পক্ষের সাত জন আত্মসমর্পণ করেন। এসিজেএম আনন্দকুমার তিওয়ারি তাঁদের জামিনও মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি ৭ জনকে ফের ৩০ জানুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক।
এ দিন যাঁরা জামিন পেলেন, তাঁদের মধ্যে ছাত্র পরিষদের এক জনই সদস্য, ওই কলেজের ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ আলম শেখ রয়েছেন। বাকি ছ’জন হলেন ওই কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের প্রাক্তন সভাপতি সভাপতি অমিত ঘোষাল, রবিউল হাসান, রহিম শেখ, হাসনাৎ শেখ, ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী এবং জসিম শেখ। গত গত বছর ছাত্র সংসদ নির্বাচনে টিএমসিপি এবং ছাত্র পরিষদ জোট করে এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে লড়েছিল। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে অমিত, ইন্দ্রনীল ও রবিউল টিএমসিপি-র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আলম ছিলেন ছাত্র পরিষদের।
কিন্তু ‘বিভ্রান্তি’ দেখা দেয় অধ্যক্ষ-নিগ্রহের পৃথক মামলায় এ দিন এসিজেএমের কাছে ছ’জন টিএমসিপি সদস্যকে তাঁদের আইনজীবী আত্মসমর্পণ করানোর আবেদন করায়। বিচারক ওই আবেদন গ্রহণ করেননি। সরকারি আইনজীবী ফজলুর রহমান বলেন, “ওই মামলার এফআইআরে কোনও ব্যক্তিবিশেষের নামের উল্লেখ নেই, সে জন্য কারও আত্মসমর্পণ করার প্রশ্নও ওঠে না। বিচারক সেই যুক্তিতেই তাঁদের আবেদন গ্রহণ করেননি।” সরকারি আইনজীবীর মতে, পুলিশ যদি অধ্যক্ষ-নিগ্রহের ঘটনার তদন্ত করে কাউকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করায়, একমাত্র তবেই ওই মামলা শুরু হবে।
প্রশ্ন উঠেছে, অধ্যক্ষের এফআইআরে যখন কোনও ছাত্রের নামই নেই, তখন ওই ছ’জনকে কেন তাঁদের আইনজীবী আত্মসমর্পণ করাতে গেলেন? আইনজীবী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, “ওই ছাত্রেরাই আমার কাছে এসে অনুরোধ করেন যে, অধ্যক্ষের সঙ্গে বাদানুবাদের সময় ভিডিও ফুটেজে তাঁদের ছবি দেখা গিয়েছে। সেই ভয়েই তাঁরা আগাম আত্মসমর্পণ করকে চান। সেই মতো ওই মামলায় এ দিন বিচারকের কাছে আমি ওঁদের আত্মসমর্পণ করানোর আবেদন করি।”
ঘটনাচক্রে অভিষেকবাবু যে ছ’জনের আত্মসমর্পণের আবেদন করেন এ দিন, তাঁদের মধ্যে অমিত, রবিউল, রহিম শেখ এসএফআইয়ের দায়ের করা মামলাতেও অভিযুক্ত। বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল মূলত এই তথ্যকে ঘিরেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.