বকেয়া চেয়ে আন্দোলন ‘চাক্কা জ্যাম’ তিন জেলায়
কেয়া পেনশনের দাবিতে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের ‘চাক্কা-জ্যাম’ আন্দোলনের জেরে বুধবার দুই দিনাজপুর এবং মালদহের যাত্রী পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল। ভোর থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, মালদহ, চাঁচল-সহ বিভিন্ন ডিপোয় অবরোধ করেন। ফলে ওই সমস্ত ডিপো থেকে কোনও যাত্রীবাহী বাস বার হতে কিংবা ঢুকতে পারেনি। একই ভাবে রাজ্যের অন্যান্য জেলার ডিপো থেকে আসা নিগমের দূরপাল্লার বাসও ঢুকতে পারেনি। ফলে বিপাকে পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের। নিত্যযাত্রীদের বেসরকারি বাসে যাতায়াত করতে হয়। লোকসানে চলা এই সংস্থাটিকে এদিনের আন্দোলনের জেরে কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে। কেবলমাত্র বালুরঘাট ডিপোয় এদিন ক্ষতি হয়েছে লক্ষাক্ষিক টাকার আয়। আন্দোলনকারী কর্মীদের এদিনের ‘চাক্কাজ্যাম’ সিপিএমের মদতে বলে অভিযোগ করেছেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “কিছুদিন আগেই দু’মাসের পেনশন দেওয়া হয়েছে। বাকিটাও বিলি হবে। অহেতুক আন্দোলনের নামে যাত্রী পরিষেবা ব্যাহত করা এবং নিগমকে আর্থিক সঙ্কটে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। এই আন্দোলনের পিছনে সিপিএমের মদত রয়েছে।” আন্দোলনকারী নর্থ বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন রিটায়ার্ড এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার ফোরামের অভিযোগ, তিন হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী গত অক্টোবর মাস থেকে পেনশন পাচ্ছেন না। এ ছাড়াও ২০০৮ সাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা গ্র্যাচ্যুইটি, লিভ স্যালারি ও পেনশন বিক্রি বাবদ প্রায় ৩৫ কোটি টাকা পাচ্ছেন না। গত দু’মাস ধরে বহু বার সমস্যার কথা নিগম কর্তৃপক্ষ, মুখ্যমন্ত্রী এবং পরিবহণ মন্ত্রীকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে এদিন ফোরামের তরফে অভিযোগ করা হয়। পাশাপাশি, ২০১১ সালের ২৯ মার্চ কলকাতা হাইকোর্ট কর্মরত অবস্থায় মৃত নিগমের ১১৪ জন কর্মীর স্ত্রীদের পেনশন দেওয়ার নির্দেশ দিলেও নিগম কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ মানছেন না বলেও অভিযোগ করা হয়। ফোরামের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “গত তিন মাস ধরে পেনশন না পেয়ে অবসরপ্রাপ্ত কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছেন। অনেকে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানোর পরেও ব্যবস্থা না-হওয়ায় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি।” নিগম কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করে মামলার হুমকি দেন তিনি। আন্দোলনকারী অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “একটা দীর্ঘ সময় কেউ সরকারি চাকরি করার পরে পেনশন কিংবা অবসরকালীন সুবিধা পাবেন না, এটা হতে পারে না। রাজ্য সরকার নিগম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হওয়ায় এ রকম ঘটনা ঘটছে। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সমস্ত দাবি অবিলম্বে পূরণ করার জন্য আমরাও রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানাচ্ছি।” ফোরামের আন্দোলনে সামিল হন রায়গঞ্জের মিলনপাড়া এলাকার বাসিন্দা গোপালকৃষ্ণ মহাজন, শিবপ্রসাদ গুপ্ত, রমেন্দ্রপল্লি এলাকার বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন চক্রবর্তীর মতো অবসরপ্রাপ্ত অনেকেই। গোপালকৃষ্ণবাবু বলেন, “২০০৮ সালে অ্যসিস্ট্যান্ট ক্লিনার পদ থেকে অবসর নিয়েছি। বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছি। পেনশন না পাওয়ায় ওষুধ কিনতে পারছি না।” শিবপ্রসাদবাবু ডায়াবিটিসে এবং চিত্তরঞ্জনবাবু শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তাঁরা জানান, পেনশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরাও চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ফ্যামিলি পেনশন না-মেলায় সমস্যায় পড়েছেন রায়গঞ্জের মিনতি ধর, আভারানি পাল, আরতি গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তি কর্মকার, মিনতি দাস ও চন্দ্রকলা দেবীরা। বালুরঘাটে এদিন কয়েকশো অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ডিপো ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। তার জেরে কোনও বাস এদিন বালুরঘাট ডিপো থেকে বার হতে পারেনি। বিপাকে পড়তে হয় নিত্যযাত্রীদের। ফেরামের জেলা নেতা অরূপ রায় বলেন, “যাত্রীদের এই কষ্টের জন্য আমরা দুঃখিত। এ ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।” ওই পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, ২০০৮ সাল পর্যন্ত কর্মীরা ঠিকঠাক ভাবেই পেনশন পেয়েছেন। তারপর থেকে অনিয়মিত হয়ে পড়ে পেনশন ব্যবস্থা। নিগমের পরিচালন সমিতির সদস্য বিপ্লব খাঁ বলেন, “নভেম্বর পর্যন্ত যাঁদের লাইফ সার্টিফিকেট জমা পড়েছে, তারা খুব শীঘ্রই পেনশন পেয়ে যাবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.