মানুষ স্বেচ্ছায় এগিয়ে এলেও কর্মীর অভাবে রক্ত নিতে পারছে না শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। বরাক জুড়ে বিভিন্ন সংস্থা রক্তদান শিবির করতে চাইছে। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজের রিজিওনাল ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এত রক্ত নেওয়া সম্ভব নয়।
কেন এই অনাগ্রহ? ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, টেকনিশিয়ানের বড়ই অভাব। ব্লাড কমপোনেন্ট সেপারেটর ইউনিট তৈরি করে ব্লাড ব্যাঙ্কটিকে রিজিওনাল ব্লাড ব্যাঙ্কে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু কর্মী-সংখ্যা বাড়েনি। বরং অবসর গ্রহণের দরুন সংখ্যাটি প্রতিনিয়ত কমছে। এখন মাত্র তিন জন নিয়মিত ও পাঁচ জন ঠিকাভিত্তিক টেকনিশয়ান দিয়ে চলছে তিন শিফটের কাজকর্ম। চলতি মাসেই অবসর নেবেন মাখনলাল রায় নামে একজন সিনিয়র টেকনিশিয়ান। ওই জায়গা কবে যে পূরণ হবে, তা অনিশ্চিত। কারণ এর আগেও একজন বছর দেড়েক আগে, আর একজন মাস ছয়েক আগে অবসর নিয়েছেন। ওই সব শূন্য পদে এখনও নিযুক্তি ঘটেনি বা এখনও কাউকে বদলি করেও আনা হয়নি। এর ওপর রূপক চন্দ নামে এক টেকনিশিয়ান অনেক দিন থেকে মেডিক্যাল কলেজেই চিকিৎসাধীন।
এখানে নেই একজন নিয়মিত বিভাগীয় প্রধানও। বর্তমানে এই দায়িত্বে রয়েছেন ডি দত্ত। তিনি আদতে প্যাথলজি বিভাগের। এ ছাড়াওএক বড় সমস্যা হল ব্লাড ব্যাঙ্কের কোনও নিজস্ব গাড়ি নেই। ফলে বাইরের রক্তদান শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহের কথা এলেই তাঁরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। অন্যান্য বিভাগ থেকে ধার চেয়ে গাড়ি নিয়ে তাঁদের শিবিরস্থলে যেতে হয়।
বরাক ভ্যালি ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম-এর সম্পাদক আশু পালের অভিযোগ, এত দিন সচেতনতার অভাবকে রক্ত সঙ্কটের জন্য দায়ী করা হত। দশ বছর ধরে প্রচার করে তাঁরা এখন মানুষকে সচেতন করেছেন। বহু লোক রক্তদানে এগিয়ে আসছেন। সংস্থাগুলি শিবির করতে চাইছে। কিন্তু রক্ত সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “কাল বদরপুর থিয়েটার ওয়ার্কশপ ২৬ ইউনিট রক্ত দিয়েছে। এর আগে ৩০ ডিসেম্বর দক্ষিণ অসম অখণ্ড সংগঠনের আহ্বানে ২৬৭ জন রক্ত দেন। এ মাসে মোট দশটি শিবিরের আয়োজন করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ একে ছয়ে নামিয়ে আনে।”
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট মৃণালকান্তি দে বলেন, কর্মী-স্বল্পতার কথা সরকারকে জানানো হয়েছে। ক’জন অবসর নিয়েছেন, আগামী তিন মাসে আরও ক’জন অবসর নেবেন। এক দিনে একাধিক শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ আরও টেকনিশিয়ান থাকলেও সম্ভব হবে না তাঁর কথায়, “রক্ত সংগ্রহ করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। এগুলিকে স্ক্রিনিং, গ্রুপিং করতে হয়। এর পর রয়েছে স্টোরেজের ব্যাপার।” |