আগুন প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে শো-কজের পরে নার্সিংহোমগুলির উত্তরে সন্তুষ্ট নয় জলপাইগুড়ি পুরসভা। যথাযথ আগুন প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় তিনটি নার্সিংহোমকে শোকজ করা হয়। এর জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠিয়ে সরাসরি জবাব চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। বুধবার পুরসভা তিনটি নার্সিংহোমের কর্তৃপক্ষকে পুরসভায় হাজির হওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছে। পুরসভা সুত্রে জানা গিয়েছে, তিন ক্ষেত্রেই যে শোকজের যে উত্তর জমা পড়েছে তা অত্যন্ত দায়সারা গোছের। বিষয়টি খতিয়ে দেখে নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ। আইনি জটিলতা এড়াতে শাস্তির নির্দেশ জারির আগে নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠিয়ে সরাসরি তাদের জবাব শোনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কলকাতায় আমরি কাণ্ডের পরে গত ডিসেম্বর মাসে জলপাইগুড়ি শহরের বেসরকারি নার্সিংহোমগুলিতে আগুন প্রতিরোধ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে যৌথভাবে পরিদর্শন করে পুরসভা, দমকল, পুলিশ এবং বিদ্যুৎ পর্ষদ কর্তৃপক্ষ। পরিদর্শনের পরে দমকল, বিদ্যুৎ পর্ষদের রিপোর্ট এবং পুরসভার নিজস্ব রিপোর্টও পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসুর কাছে জমা পড়ে। অগ্নিনিরোধক ব্যবস্থা না থাকায় কলকাতায় আমরি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকার অনড় রয়েছে বলে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী এই কঠোর প্রশাসনিক নীতিই অনুসরণ করছে জলপাইগুড়ি পুরসভা। পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “শোকজের উত্তরগুলি মোটেই সন্তোষজনক নয়। সেই কারনেই তিনটে নার্সিংহোমের কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যথাযথ আগুন প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এবিষয়ে কোনও নরম মনোভাব দেখানো হবে না।” পুরসভা সূত্রে খবর, বাবুপাড়া, হাসপাতাল পাড়া এবং রাজবাড়িপাড়ার তিনটি নার্সিংহোমের কোনটিতেই ফায়ার লাইসেন্স নেই। এ ছাড়া বিপজ্জনক বিদ্যুতের তারের ওয়ারিঙ ব্যবস্থা ছাড়াও আগুন লাগলে তা নেভানোর প্রাথমিক ব্যবস্থা নেই। কার্যকর সর্তকঘন্টি না থাকা, পৃথক জলাধার, জরুরি অবতরন ব্যবস্থা, আইসিইউ ইউনিটে স্প্রিংকলার না থাকা সহ কোনও ধরণের কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় পুরসভা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে শোকজ করে। সেখানে জানতে চাওয়া হয়, কেন তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে না।তবে তিনটে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষই শোকজের উত্তর দিয়েছে তা এক রকম। প্রতি ক্ষেত্রে, শোকজের উত্তরে ‘ফায়ার লাইসেন্সের’ আবেদন করা হয়েছে, আগুন প্রতিরোধের কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, পুরসভার নির্দেশমতো বাকি কাজ করা হবে, চেষ্টা চালানো হচ্ছে, এমন জবাব পাওয়া গিয়েছে বলে পুরসভা সুত্রে জানানো হয়েছে। চেয়ারম্যান মোহনবাবু বলেন, “শোকজের উত্তর চালাকি করে দেওয়া হয়েছে। সে কারনেই কর্তৃপক্ষদের তলব করা হয়েছে।” শহরের রাজবাড়ি পাড়ার বেসরকারি নার্সিঙহোমের কর্ণধার কুমার সরকার বলেন, “সাতদিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগুন প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। বাকি নির্দেশগুলিও মেনে চলা হবে বলে জানানো হয়েছে।” অন্য দুটি নার্সিংহোমে পরিচালন সমিতির মুখপাত্র প্রদীপ কুমার বর্মা বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য তা শোকজের উত্তরে দেওয়া হয়েছে। আমরা আন্তরিক ভাবেই কাজ করছি।” পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা অগ্নিপ্রতিরোধ পরিদর্শন কমিটির প্রধান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “পরিস্থিতি কিছু মাত্র বদলায়নি। সাধারন রোগীদের নিরাপত্তা না থাকলে নার্সিংহোমগুলিকে কাজ চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে না।” |