অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে তাঁরা যে কতটা মরিয়া, বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে সেটাই বোঝাতে চাইলেন ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে মৃতের তালিকা না-পাওয়ায় প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তাঁরা ক্ষতিপূরণ দিতে পারছেন না। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তাঁরা। আমরি-কর্তৃপক্ষের রিট আবেদনের ভিত্তিতে মামলাটি বিচারের জন্য গ্রহণ করলেও হাইকোর্ট এই বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করেনি। বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাস আমরি-কর্তৃপক্ষকে তাঁদের বক্তব্য ৩ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিয়ে হাইকোর্টকে জানাতে বলেছেন।
আমরি হাসপাতালের তরফে এ দিন হাইকোর্টে বলা হয়, রাজ্য সরকারের মতো তারাও অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের পরিজনকে ক্ষতিপূরণ দিতে চায়। মৃতদের পরিবার-প্রতি পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা হাসপাতালের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ঘোষণাও করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার মৃতের তালিকা না-দেওয়ায় তারা ক্ষতিপূরণ দিতে পারছে না। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চায় ঢাকুরিয়ার আমরি। তালিকা যদি পাওয়া না-যায়, সে-ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের টাকা রাজ্য সরকারের হেফাজতে দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে তারা। বলা হয়, প্রয়োজনে সরকার ওই টাকা বিলি করতে পারে।
আমরি-কর্তৃপক্ষের তরফে আইনজীবী সমরাদিত্য পাল বলেন, মৃতের তালিকা তাঁদের কাছে নেই। রাজ্য ইতিমধ্যেই মৃতের তালিকা তৈরি করে ক্ষতিপূরণের টাকা দিচ্ছে। কলকাতা পুলিশের কাছেও মৃতের তালিকা রয়েছে। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও রাজ্য বা কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে তাঁরা তালিকা পাননি। সেই জন্যই তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ। সমরাদিত্যবাবু বলেন, “আমরি-কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের টাকা রাজ্যের কাছে জমা রাখতে রাজি। সরকার মনে করলে সেই টাকা থেকে ক্ষতিপূরণ বিলি করতে পারে।”
আমরি-কর্তৃপক্ষের যুক্তি খারিজ করে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ওই হাসপাতালে যা ঘটেছে, তা এক কথায় খুন। আগুন যে লেগেছে, সেই ব্যাপারে দমকলকে সময়মতো খবরই দেওয়া হয়নি। রাজ্য সরকার খুনের মামলা রুজু করেছে। সরকার যাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা চালাচ্ছে, তাদের তো মৃতের তালিকা দিতে পারে না তারা। কল্যাণবাবুর মন্তব্য, তালিকা পেলে আমরি-কর্তৃপক্ষ সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে মৃতদের পরিবারকে নানা ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা কতে পারেন। মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট হয়ে যাক, এমন কাজ রাজ্য করতে পারে না। সমরাদিত্যবাবু জানান, আমরির ধৃত কর্তারা জেল-হাজতে রয়েছেন। তদন্ত চলছে। বিচারে যা হওয়ার, তা হবে। এ-সবের সঙ্গে ক্ষতিপূরণের সম্পর্ক নেই। দু’পক্ষের সওয়াল শুনে বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাস আমরি-কর্তৃপক্ষের হলফনামা তলব করেন। |