নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়নাগুড়ি |
একে যানজট। তার উপরে পথ অবরোধের জেরে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌছেছে। বুধবারেও গজলডোবা হয়ে শিলিগুড়িতে রওনা হয়ে দূরপাল্লার প্রচুর বাস অবরোধের মুখে পড়ে। তিস্তা ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকার পড়ুয়া ও সাধারণ মানুষ ভাঙা রাস্তায় ভারী যান চলাচল বন্ধের দাবিতে এ দিন সকাল ন’টা থেকে প্রায় দু’ঘন্টা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি সামাল দেন। এ দিকে তিস্তা সেতুর দু’পাড়ে জাতীয় সড়কে এ দিনও যানজটে জেরবার হতে হয়েছে যাত্রী ও পথচারীদের। বুধবারের ঘটনায় উদ্বিগ্ন জলপাইগুড়ির জোলাশাসক স্মারকি মহাপাত্র বলেন, “এ ভাবে অবরোধ চললে মুশকিল। সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করতে হবে। না-হলে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। যে ভাঙাচোরা রাস্তার জন্য এ দিন অবরোধ হয়েছে সেটা দ্রুত মেরামতের জন্য জেলা পরিষদ উদ্যোগী হয়েছে।” পাশাপাশি, এদিন প্রদেশ তৃণমূল যুব কংগ্রেস নেতা সৌরভ চক্রবর্তী তিস্তা সেতু নিয়ে সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানান। মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য পূর্ত দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রত সাহাকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সৌরভবাবু জানিয়েছেন, তিনি বলেন, “সুব্রতবাবু আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব সেতু মেরামতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গজলডোবায় বিকল্প রাস্তা খোলার জন্য রেলের যে সাহায্য চাওয়ার আর্জি এসেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই সমীক্ষা হবে।” বাসিন্দারা জানান, কখনও যুব কংগ্রেস। আবার কখনও আরএসপি নেতা কর্মীরা দ্রুত তিস্তা সেতু সংস্কারের দাবিতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ আন্দোলনে নেমেছেন। ওই অবরোধ এড়িয়ে অন্য রাস্তায় দিয়ে বাস গন্তব্যে পৌছবে উপায় নেই। যানজট এড়াতে প্রশাসনের তরফে যে বিকল্প সড়কে যাতায়াতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বুধবার সকাল থেকে সেখানেও অবরোধ আন্দোলন শুরু হয়ে গেল। শিলিগুড়িগামী কোচবিহার, অলিপুরদুয়ার, মাথাভাঙার বাসগুলি ময়নাগুড়ি পৌছনোর পরে আর এগোতে পারেনি। যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। বিভ্রান্ত বাস কর্মীরাও। অনেকে নিরুপায় হয়ে ফের ঘুরে এসে জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ফেরত বাসকর্মীরা জানান, গজলডোবার তিস্তা ব্যারেজ থেকে নেমে প্রায় ৪ কিলোমিটার ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে বাসগুলি আমবাড়ি-ফালাকাটায় যায়। গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে ওই রুটে দূরপাল্লার প্রচুর বাস যাতায়াত করছে। ফলে রাস্তার পরিস্থিতি আরও বেহাল হয়েছে। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকার ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষ বুধবার সকাল ন’টা নাগাদ ভাঙাচোরা রাস্তায় বাস চলাচল বন্ধ করার দাবিতে পথ অবরোধ আন্দোলনে নামে। ফলে ডুয়ার্স থেকে সড়ক পথে শিলিগুড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। জাতীয় সড়ক ছেড়ে বিকল্প রাস্তায় চলাচলে বাধার সৃষ্টি হওয়ায় বাস কর্মী সংগঠনের নেতৃত্ব উদ্বিগ্ন। সিটু নিয়ন্ত্রিত নর্থ বেঙ্গল বাস অ্যাণ্ড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, “বুধবার গজলডোবার রাস্তায় দু’ঘন্টা অবরোধ হয়েছে। চারদিক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে কত দিন রাস্তায় গাড়ি চলতে পারবে জানি না। সকালে রওনা হয়ে বাস রাতে গন্তব্যে পৌছচ্ছে।” জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশেষ রাসায়নিকের সাহায্যে সংস্কারের কাজ চলায় গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে তিস্তা সেতুতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে গজলডোবা হয়ে শিলিগুড়িতে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বুধবারের ঘটনার পরে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে বিকল্প রাস্তায় অবরোধ চললে যাত্রীরা কেমন করে গন্তব্যে পৌছবে! জেলা প্রশাসনের কাছে ওই প্রশ্নের উত্তর নেই। জেলাশাসক বলেন, “বিকল্প ভাল রাস্তা রাতারাতি তৈরি করা সম্ভব নয়। বিকল্প ভাল রাস্তার খোঁজ থাকলে কেউ যদি জানায় নিশ্চই ভেবে দেখা হবে।” |