চোলাই রুখতে আরও কড়া শাস্তির দাওয়াই চান মমতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
চোলাই মদের কারবারিদের জন্য আরও কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এর জন্য রাজ্যের আবগারি আইন সংশোধন করা হচ্ছে। মগরাহাটের সংগ্রামপুরে বিষাক্ত চোলাই খেয়ে ব্যাপক প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে মহাকরণ সূত্রে জানা গিয়েছে।
ডিসেম্বরে সংগ্রামপুরে চোলাই মদ খেয়ে ১৭৩ জনের মৃত্যু হয়। তার পরেই চোলাই মদের ঠেক ভাঙার অভিযান শুরু করে সরকার। আবগারি দফতর সূত্রের খবর, বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে বহু ভাটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কয়েক হাজার লিটার চোলাই মদ। এই অভিযান চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান আবগারি দফতরের এক মুখপাত্র। অভিযান চালানোর জন্য ওই দফতরের ইনস্পেক্টর থেকে কনস্টেবল পদমর্যাদার কর্মী-সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সেই সঙ্গেই খোদ মুখ্যমন্ত্রীর আগ্রহে শুরু হয়েছে আইন সংশোধন করার উদ্যোগ। চোলাই কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বেঙ্গল আবগারি আইনে কিছু শাস্তির বিধান রয়েছে। ওই আইনের ৪৬ এবং ৪৬এ ধারায় তার উল্লেখ আছে। এক সরকারি কর্তা জানান, বেআইনি চোলাই কারবারের সঙ্গে যুক্তদের ছ’মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের সংস্থান আছে আইনে। মহাকরণ সূত্রের খবর, আইনের এই অংশটুকুর প্রয়োজনীয় সংশোধন করে আরও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার কথা ভাবা হয়েছে। এই নিয়ে ইতিমধ্যে দফতরের কর্তাদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে। তবে এই আইন সংশোধনের বিল বিধানসভার আগামী বাজেট অধিবেশনের আগে আনা সম্ভব নয়।
কিন্তু আইন সংশোধন করে কঠোর শাস্তির বিধান দিলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?
এই বিষয়ে সংশয় রয়েছে আবগারি দফতরের কর্তাদের একাংশের মধ্যেই। তাঁদের মতে, প্রায় কুটির শিল্পের মতোই চোলাই মদের কারবার ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন জেলায়। শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে এর মোকাবিলা করা কঠিন। ওই সব আবগারিকর্তার প্রশ্ন, বর্তমান আইনে যে-বিধান রয়েছে, সেই অনুসারেই বা শাস্তি হয়েছে কত জনের? তাঁদের বক্তব্য, আরও কঠোর সাজার ব্যবস্থা করে চোলাই মদের ব্যবসা আটকানো যাবে না। সরকার এই সমস্যার সমাধানে আন্তরিক হলে এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে গ্রাহকেরা সহজেই দেশি মদ পেতে পারেন।
আবগারি দফতরের তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে দেশি মদের উৎপাদন চাহিদার থেকে ৩০ শতাংশ কম। ২০০৫ সালে লটারির মাধ্যমে দেশি মদের দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হলেও পরে দোকানের সংখ্যা আর বাড়ানো হয়নি। তার উপরে বিদেশি ও দেশি মদের দাম প্রায় প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে। এর জেরে বিশেষত গ্রামবাংলার গরিব মানুষ চোলাইয়ের দিকে ঝুঁকেছেন বলে মনে করছেন আবগারিকর্তাদের একাংশ।
মমতার সরকার মনে করে, মদ খাওয়া উচিত নয়। তাই দেশি মদের জোগান ও দোকান বাড়াতে তাদের প্রবল আপত্তি। কিন্তু দেশি মদের বিক্রি বাড়ানোর ব্যবস্থা না-করলে চোলাইয়ের রমরমা আটকানো মুশকিল। ফলে আবার যে-কোনও দিন অন্য কোথাও সংগ্রামপুরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আবগারিকর্তাদের একাংশের আশঙ্কা। |