কিষান কংগ্রেস বামেদের সঙ্গে হাত মেলালে স্বাগত |
রাজ্যের কৃষকদের স্বার্থে কংগ্রেসের কৃষক সংগঠন বামেদের সঙ্গে ‘হাত মিলিয়ে’ আন্দোলনে নামলে তাদের ‘স্বাগত’ জানাবেন সিপিএমের কৃষক সভার রাজ্য সভাপতি মদন ঘোষ।
সিটু-সহ বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি সারা ভারতে শিল্প ধর্মঘট ডেকেছে কংগ্রেস-প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি। ধান-সহ ফসলের ন্যায্য দামের দাবিতে বুধবার বামেরা ‘কৃষি কাজ’ বন্ধের ডাক দিয়েছিল। বামেদের মূল অভিযোগ ছিল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। একই দাবিতে ধর্মতলায় জমায়েত করে রাজ্য সরকারকে সমালোচনায় বিঁধেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও। সেই সূত্রেই মদনবাবুকে জিজ্ঞাসা করা হয়, রাজ্যের কৃষকদের স্বার্থে কংগ্রেসের সঙ্গে কি যৌথ আন্দোলন করবেন? মদনবাবু বলেন, “আমরা কোনও রাজনৈতিক দলকে এই আন্দোলনে ডাকিনি। ডেকেছি কৃষক সংগঠনগুলিকে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কোনও কৃষক সংগঠন যদি আমাদের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে এগিয়ে আসে, তা হলে ভাল। তাদের স্বাগত জানাব। কিষাণ কংগ্রেসও আসতে পারে।”
তবে কিষান কংগ্রেস তাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আন্দোলন করবে কিনা, তা নিয়ে মদনবাবুর সন্দেহ রয়েছে। ফসলের ন্যায্য দাম ছাড়াও আরও যে দাবিতে চারটি বামপন্থী কৃষক সংগঠন গ্রাম বাংলা বন্ধের ডাক দিয়েছিল, তার মধ্যে কৃষি উপকরণের
মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিও আছে। যে জন্য কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ‘দায়ী’ বলেই অভিমত মদনবাবুর। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এই নেতার কথায়, “আমরা তো শুধু রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামিনি। কৃষকদের সঙ্কটের জন্য দায়ী কৃষি উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি। আর তার জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি। তা মেনে নিয়ে যদি কিষাণ কংগ্রেস আমাদের সঙ্গে আসে, তা হলে তাদের স্বাগত জানাই।”
বস্তুত, ২৮ ফেব্রুয়ারি সিটু, আইএনটিইউসি-সহ শ্রমিক সংগঠনগুলি একযোগে যে শিল্প ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে, তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতিরও বিরোধিতা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও শ্রমিকদের সামগ্রিক সমস্যার কথা বিবেচনা করেই বামেদের সঙ্গে একযোগে ধর্মঘটে নামছে কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করলেও বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে আন্দোলনে নামার ব্যাপারে এখনই কোনও সবুজ-সঙ্কেত দেবে না বলেই মনে করেন সিপিএম নেতারা। বিশেষত, যখন রাজ্যে দুই জোট শরিকের মধ্যে ইতিমধ্যেই চাপানউতোর শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, ধান-পাটের সহায়ক মূল্য কৃষকদের হাতে পৌঁছনো এবং সারের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলনে নামছে রাজ্য বিজেপি। আজ সব মহকুমাশাসক এবং ২০ জানুয়ারি জেলাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দেবে তারা। ১১ জানুয়ারি বিজেপি-র কিষাণ মোর্চা ধর্মতলায় সমাবেশ করবে।
মদনবাবু বলেন, “রাজ্য সরকার এ পর্যন্ত মাত্র ২ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কিনেছে। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ লক্ষ মেট্রিক টন।” তাঁর অভিযোগ, “রাজ্যের সর্বত্র চালকল না-থাকায় সমস্যা হচ্ছে। কোথাও ধান বিক্রির পরেও চাষিরা টাকা পাচ্ছেন না। তাঁদের হাতে চিরকুট ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” এ বার ধানের ন্যায্য দাম না পেলেও কৃষকরা যাতে কোনও ভাবেই বোরো চাষ বন্ধ না করেন, সেই আবেদন জানিয়ে মদনবাবু বলেন, “বোরো চাষ না-করলে রাজ্য খাদ্যে স্বয়ম্ভর থাকবে না।” মদনবাবু বন্ধ ‘সফল’ বলে দাবি করলেও বামেদের ‘দুর্বল’ সংগঠনের কারণেই দক্ষিণবঙ্গে বন্ধ তেমন সফল হয়নি। বহু চাষি ও খেতমজুর মাঠে গিয়েছেন। কিন্তু উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকা পুরোদস্তুর ‘বন্ধ’-এর চেহারা নেয়। |