টানাপোড়েন দুই দফতরে
শিবিরে ধান নিয়ে যেতে
ভাড়া মেটাবে সরকারই

খাদ্য দফতর ধান কেনার জন্য শিবির করছে ঠিকই। কিন্তু সেই শিবিরে ধান নিয়ে যাওয়ার জন্য বাসভাড়া গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। সেই জন্য অনেক কৃষকই শিবিরে ধান বেচতে যাচ্ছেন না। ফলে ধান সংগ্রহ আশানুরূপ হচ্ছে না। তাই এ বার কৃষকদের বাসভাড়া মেটাতে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার। কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মহাকরণে এমন ঘোষণা করলেও টাকাটা কে মেটাবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
ধান কেনার শিবিরের আয়োজক খাদ্য দফতর জানিয়ে দিয়েছে, তারা কৃষকদের বাসভাড়া মেটাতে পারবে না। কেননা সেই আর্থিক সঙ্গতি তাদের নেই। ধান কেনার প্রকল্পে সেই টাকা মেটানোর সংস্থানও নেই তাদের। এই ধরনের কোনও পরিকল্পনা নেই কৃষি দফতরেরও। তাই কৃষকদের বাসভাড়ার টাকা কৃষি দফতর কী ভাবে মেটাবে, কৃষিমন্ত্রী কোনও দিশা দেখাতে পারেনি। ওই টাকাটা কৃষি দফতর কোথা থেকে দেবে, ওই দফতরের আমলারাও তা জানেন না। তাঁরা এ ব্যাপারে খাদ্য দফতরের দিকে তাকিয়ে আছেন।
কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রবাবু বুধবার মহাকরণে বলেন, “কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। ধান বিক্রির জন্য কৃষককে বাসভাড়া দিয়ে বহু দূর যেতে হচ্ছে। তাতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমরা তাই কৃষকদের ওই টাকা মিটিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছি।” মন্ত্রী শুধু বাসের কথা বললেও চাষিরা অন্যান্য যানবাহনেও ধান নিয়ে শিবিরে যান। তাই সেই সব গাড়িরও ভাড়া মেটানোর প্রশ্ন উঠছে।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলে দিয়েছেন,“চাষিদের বাসভাড়া দেওয়ার ক্ষমতা খাদ্য দফতরের নেই। কৃষি দফতর সেই টাকা দিলে আমরা খুশি হব। সব রকম সহযোগিতাও করব।” ধান সংগ্রহে গতি আসছে না কেন? খাদ্যমন্ত্রীর যুক্তি, সমবায় সংস্থা বেনফেড, কনফেড এত দিন প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে পারেনি। তাই তারা পুরো মাত্রায় ধান কিনতে নামতে পারেনি। বুধবারেই তারা টাকা পেয়েছে। এ বার তারা পুরো মাত্রায় ধান কিনতে নামবে।
চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু খাদ্যমন্ত্রী সেই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর অভিযোগ, কোনও কোনও চালকল সমস্যার সৃষ্টি করছে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘বিষয়টি এ দিনই চালকল-মালিকদের সংগঠনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” কৃষকদের যে ধান কিনতে অনেক দূর যেতে হচ্ছে, তা স্বীকার করে নেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা ব্লক স্তর পর্যন্ত ধান কেনার ব্যবস্থা করেছি। অন্তত দু’টি করে শিবির যাতে চালকলের থেকে দূরের গ্রামে গিয়ে করা যায়, চালকল-মালিকদের সেটা দেখতে বলেছি।” এ দিন খাদ্য ভবনে চালকল-মালিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী।
ধান সংগ্রহে আর্থিক সমস্যা যে প্রধান অন্তরায়, তা স্বীকার করেছেন কৃষিমন্ত্রীও। টাকার সংস্থান কে করবে?
কৃষিমন্ত্রী বলেন, “অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব আমাদের নয়, খাদ্য দফতরের।”
কৃষকদের সমস্যা নিয়ে কৃষি দফতর কিছু করবে না?
কৃষিমন্ত্রী জানান, জানুয়ারির মধ্যে অধিকাংশ সমস্যা মেটানোর সব রকম চেষ্টা চলছে। যে-সব চাষি বাসভাড়া দিয়ে ধান বিক্রির জন্য চালকলে যাচ্ছেন, তাঁদের ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে সরকার। কৃষি বিমার জন্যও ছ’কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
কংগ্রেস নেতারা ধান কেনা নিয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করছেন। রাজ্যে কৃষি বন্ধ ডেকেছে বাম কৃষক সংগঠনগুলি। এ ব্যাপারে সরকারের বক্তব্য কী?
জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “যাঁরা আন্দোলন করছেন, সমালোচনা করছেন, তাঁদের জানা উচিত, এ-সবের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারই দায়ী। আন্দোলন করতে হলে দিল্লিতে গিয়ে করুন। ওঁরা উস্কানি দিচ্ছেন। চাষিদের চেক দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ ভন্ডুল করতেই এ-সব করা হচ্ছে।” খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, চাষিরা বস্তা-পিছু ধান বিক্রির জন্য সহায়ক মূল্যের কম টাকা পাচ্ছেন বলে যা প্রচার করা হচ্ছে, তা ‘অসত্য’। তিনি জানান, ধানের দাম নিয়ে যে-সব কৃষক কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতাদের কাছে অভিযোগ করেছেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা দফতরে পাঠানো হোক। কোনও চালকলের বিরুদ্ধে চাষিদের ধান না-নেওয়া বা সহায়ক মূল্যের চেয়ে কম দাম দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ মিললে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.