এ বার পর্যটন থেকে বিদায়ের মুখে রচপাল
ন্দ্রনাথ সিংহের পরে রচপাল সিংহ। পঞ্চায়েতের পরে পর্যটন। মন্ত্রিত্ব রদবদলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তালিকার ক্রমপর্যায় এমনটাই বলে মহাকরণ সূত্রে ইঙ্গিত।
১০০ দিনের কাজ-সহ গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন প্রকল্পে পঞ্চায়েত দফতরের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ছিলেন মমতা। একান্ত আলোচনায় ঘনিষ্ঠরা তো বটেই, এমনকী রাজ্য সরকারি অফিসারেরাও তাঁর ক্ষোভের প্রকাশ দেখেছেন। সেই ক্ষোভ বাড়িয়ে দেয় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশের একটি চিঠি। যাতে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের টাকায় গ্রামীণ সড়ক তৈরির কাজ করতে পারছে না বলে অভিযোগ করা হয়। এর পরেই আর দেরি না করে চন্দ্রনাথকে অন্য দফতরে সরিয়ে পঞ্চায়েতের দায়িত্বে বর্ষীয়ান সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে আসেন মমতা। সরিয়ে দেওয়া হয় দফতরের সচিব বরুণ রায়কেও।
পর্যটনের ক্ষেত্রেও মমতা শেষ পর্যন্ত একই পথে হাঁটতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহারে কলকাতাকে ‘লন্ডন’, দার্জিলিংকে ‘সুইৎজারল্যান্ড’ এবং দিঘাকে ‘গোয়া’ বানানোর প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ফলে সরকার গঠনের প্রথম দিন থেকেই পর্যটনের বিকাশ মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। এ জন্য নানা পরিকল্পনা করে রেখেছেন তিনি নিজেই। প্রশাসনিক কাজে অভিজ্ঞতা থাকার কারণে তাঁর স্বপ্নপূরণের জন্য পর্যটন দফতরের দায়িত্ব রচপালের হাতে তুলে দেন মমতা। এবং প্রথম থেকেই তিনি হতাশ বলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর। মন্ত্রী হওয়ার পরেই পর্যটনের কাজ দেখতে সিঙ্গাপুর যাবেন বলে পরিকল্পনা করেছিলেন রচপাল। সমালোচনার ঝড় ওঠার পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তা বাতিল হয়। এই ঘটনা এবং সামগ্রিক ভাবে রচপালের কাজকর্মে মমতা অসন্তুষ্ট।
এত দিন ঘনিষ্ঠ মহলে করা সেই সমালোচনা সম্প্রতি একেবারে প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। পর্যটনের দ্রুত বিকাশের জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই কাজ করা হবে। এ জন্য বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতেই খুব সম্প্রতি দুই বৃহৎ বণিকসভা ফিকি এবং সিআইআই-এর প্রতিনিধিদের মহাকরণে বৈঠকে ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে পর্যটনমন্ত্রী ও দফতরের সচিব এবং মুখ্যসচিব উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও।
সূত্রের খবর, বৈঠক চলাকালীন সকলের সামনেই পর্যটনমন্ত্রীকে কার্যত ভর্ৎসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পর্যটনের কাজকর্ম নিয়ে যে তাঁর নিজেরই অনেক অভিযোগ, তা বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে রচপালকে আড়াল করার চেষ্টা করেন দফতরের সচিব রাঘবেন্দ্র সিংহ। কাজকমের্র ফিরিস্তি-সহ একটি কাগজ তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দিকে এগিয়ে দেন। ক্ষুব্ধ মমতা সেটি না-দেখে রাঘবেন্দ্রর দিকে কার্যত ছুড়ে মারেন। এখানেই শেষ নয়। পর্যটন প্রকল্পগুলি নিয়ে ফিকি এবং সিআইআই-এর সঙ্গে সরকার কী ভাবে এগোবে, বৈঠকেই তার দায়িত্ব তিনি তুলে দেন অর্থমন্ত্রীর হাতে। মহাকরণের খবর, চন্দ্রনাথের পরিণতি হতে পারে রচপালেরও। তাঁর সচিবও খুব স্বস্তিতে নেই।
স্বস্তিতে নেই আরও কয়েক জন মন্ত্রী এবং সচিব। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পর থেকেই জেলা সফর শুরু করেছেন মমতা। এরই মধ্যে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের অফিসারদের নিয়ে টাউন হলে একাধিক বৈঠক করেছেন তিনি। অনেকেই বলছেন, কাজ ছাড়া আর কোনও কথা বলছেন না মুখ্যমন্ত্রী। তিনি দ্রুত কাজ চান। তাঁর গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না অনেকেই। প্রশাসনিক বৈঠকে আলোচনার সময় কাজের অগ্রগতির হাল বুঝে নিয়ে সরব হচ্ছেন মমতা। কাউকেই তিনি রেয়াত করতে নারাজ।
মুখ্যমন্ত্রীর এই মানসিকতা বুঝে কমবেশি সকলেই তটস্থ। সকলেই চেষ্টা করছেন কিছু করে দেখাতে। মন্ত্রিত্ব যেতে পারে, এই আশঙ্কায় এক বর্ষীয়ান মন্ত্রী গত ছ’মাসের কাজের চুলচেরা তালিকা ফাইলবন্দি করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন। সমালোচনা আর ক্ষোভের মুখে পড়ে কেউ কেউ উন্নতিও করেছেন বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। এঁদের মধ্যে রয়েছেন নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম এবং দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। গত কয়েক মাসে শহরে যে কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, সব ক্ষেত্রেই জাভেদ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাশ নিজের হাতে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। অন্য দিকে, পরিকল্পনামাফিক কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় ববির গুরুত্ব আগের চেয়ে বেড়েছে।
পৌষ মাস পার হলে মন্ত্রিসভায় রদবদল করবেন বলে মমতা নিজেই জানিয়েছেন।
তাতে দু’একটি বড় দফতরেরও পরিবর্তন হতে পারে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। অন্য দিকে, সচিব পর্যায়েও বেশ কিছু পরিবর্তন আসন্ন। সব মিলিয়ে কমবেশি অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সকলেই।
এ সব দেখেশুনে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক মন্ত্রীর মন্তব্য, ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের মতো ‘আয়রন লেডি’ হয়ে উঠছেন মমতা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.