গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি দায়িত্ব থেকে ‘অব্যাহতি’ চাইছিলেন। এর মধ্যে মহাকরণে পরিবর্তন হলেও সরকারের শীর্ষ কর্তারা এত দিন তাঁর আবেদনে সাড়া দেননি। অবশেষে বুধবার চঞ্চলমল বাচাওয়াতকে রাজ্যের অর্থসচিবের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বদলির আদেশ জারি করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েক সরকার। তাঁকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান দফতরের সচিব হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। অর্থসচিব পদে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন রাজ্যের আবগারি সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী।
রাজ্যের অর্থসচিব হিসেবে বাচাওয়াত যথেষ্ট যোগ্যতার সঙ্গেই তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন বলে মনে করেন প্রশাসনের একটি বড় অংশ। তবু বাম আমলের শেষ দিকে অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত এবং প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই নতুন সরকারের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয় বলে মহাকরণ সূত্রের খবর। একাধিক অফিসারের বক্তব্য, বিধানসভা নির্বাচনের মুখে আগের বামফ্রন্ট সরকার যখন ‘কল্পতরু’ হয়ে নানা প্রকল্প ঘোষণা করছিল, তখন থেকেই বাচাওয়াতের সঙ্গে সরকারের মতবিরোধের সূত্রপাত। কারণ, রাজ্যের চূড়ান্ত আর্থিক সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে লাগামছাড়া ভাবে প্রকল্প ঘোষণায় আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি। এই নিয়ে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের সঙ্গে বাচাওয়াতের বিরোধ বাধে। ফলে অর্থসচিবের পদ থেকে তিনি সরে যেতে চান। তাতে অবশ্য রাজি হয়নি বাম সরকার।
গত মে মাসে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার পরে অর্থনৈতিক নানা প্রসঙ্গে নতুন সরকারের সঙ্গেও বাচাওয়াতের মতান্তর দেখা যায়। তিন মাসের মাথাতেই রীতিমতো চিঠি লিখে সরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। কারণ, হিসেবে জানান, তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা ভাল নয়। কিন্তু তখনকার মতো বাচাওয়াতকে বুঝিয়ে অর্থসচিব পদে রেখে দেয় নতুন সরকার। যদিও বিরোধ কমার বদলে বাড়তেই থাকে।
মহাকরণের খবর, আর্থিক সঙ্কট সত্ত্বেও মমতার সরকার বহু নতুন চাকরির প্রস্তাব গ্রহণ করায় অর্থসচিব হিসেবে তাতে অসম্মতি জানান বাচাওয়াত। এই নিয়ে বিরোধের জেরে সম্প্রতি ফের তিনি অব্যাহতি চেয়ে মুখ্যসচিবের দ্বারস্থ হন। অনুরোধ জানান তাঁকে ‘বিকল্প’ কোনও কাজ দেওয়ার জন্য। আজ সেই ‘অনুরোধই’ রাখল রাজ্য সরকার। তবে ১৯৮৩ সালের এই আইএএস অফিসারকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব দেওয়ায় প্রশাসনের একাংশের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
বাচাওয়াতের জায়গায় যিনি এলেন, সেই হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এর আগে অল্প সময়ের জন্য অর্থসচিবের দায়িত্ব সামলেছেন। তবে নতুন দায়িত্ব নিতে তিনিও খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না বলেই মহাকরণ সূত্রে খবর। নতুন নির্দেশ অনুযায়ী তিনি আবগারি দফতরের সচিব পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাবেন।
প্রসঙ্গত, বাচাওয়াতের মতোই শিল্পসচিবের দায়িত্ব থেকে কিছু দিন আগে অব্যাহতি চেয়েছিলেন আর এক আইএএস অফিসার দীপঙ্কর মুখোপাখ্যায়। তিনিও স্বাস্থ্যের কারণে ‘হাল্কা’ কাজ চেয়েছিলেন।
সেই আর্জিও মেনে নিয়ে দীপঙ্করবাবুকে সেন্ট্রাল ভ্যালুয়েশন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে বদলি করা হয়েছে।
এ দিন আমলা পদে আরও কয়েকটি পরিবর্তন হয়েছে। সদ্য পঞ্চায়েত দফতরের সচিব পদ থেকে বদলি হওয়া বরুণ রায়কে রাজ্য ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং বস্ত্র নিগমের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সচিব লাইমে চোসাকে করা হয়েছে নতুন দফতর সংখ্যাতত্ত্ব এবং প্রকল্প রূপায়ণ দফতরের সচিব। |