ইন্দিরা ভবনের নাম বদল নিয়ে আপসে নারাজ হলেও অন্য সব বিষয়ে তৃণমূলকে বুঝিয়ে-সুজিয়েই এগোতে চাইছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।
ইন্দিরা ভবন প্রসঙ্গে আজ রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূলকে কড়া বার্তা দিয়েছে কংগ্রেস। কেন্দ্রে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার গঠনের পরে শরিক দলের উদ্দেশে এই ধরনের মন্তব্য এই প্রথম। কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ইন্দিরা ভবনের নাম পরিবর্তন নিয়ে কংগ্রেস কোনও সমঝোতাতেই রাজি নয়। অন্য কোনও ভবন কাজি নজরুল ইসলামের নামে রাখুন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা অন্য বহু বিষয়ে তৃণমূল সরকারের সমালোচনায় মুখর হলেও কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাঁদের সমালোচনা শুধু ইন্দিরা ভবনের নাম পরিবর্তনেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। অথচ খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি থেকে শুরু করে পেট্রোলের দাম, পেনশন বিল, লোকপাল বিল পর্যন্ত একের পর এক বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সংঘাত হয়েছে কংগ্রেসের। তা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন দল ও সরকারের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু প্রকাশ্যে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তাঁরা। উল্টে কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরা বলছেন, সরকার পরিচালনার কোনও বিষয়ে শরিক দলের ভিন্ন অবস্থান থাকতেই পারে। সে সব ক্ষেত্রে তাদের মতকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে সুষ্ঠু আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করা হবে।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, কোনও কারণে তৃণমূল সরকার ছেড়ে চলে গেলে যাতে সঙ্কট তৈরি না হয়, সে জন্য শরিক খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মমতাকে বাদ দেওয়ার ভাবনা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এখনই নেই। কারণ, হাইকম্যান্ডের মতে, মমতা চলে গেলে এমনিতেই নানা দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার মনমোহন সিংহের সরকার আরও নড়বড়ে হয়ে পড়বে। পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা ভোটেও তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। মমতার বিকল্প হিসেবে যাঁকে ভাবা হচ্ছে, সেই মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গে চূড়ান্ত সমীকরণ কী হবে, তা উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে স্পষ্ট হবে না। ফলে অন্তত তত দিন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
তা হলে ইন্দিরা ভবন নিয়ে কেন কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল কংগ্রেস। দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, বিষয়টির সঙ্গে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর নাম জড়িত বলেই হাইকম্যান্ডের পক্ষে চুপ করে থাকা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে দলের অগণিত কর্মী-সমর্থকের আবেগ জড়িত। রাজের পদক্ষেপে হাইকম্যান্ডও আহত। সেই কারণেই দলের শীর্ষ পর্যায়ের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ আলভি আজ বলেছেন, “কলকাতার ইন্দিরা ভবনের নাম যে ভাবে পরিবর্তন করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। নজরুল ইসলামকে কংগ্রেসও শ্রদ্ধা করে। একই সঙ্গে ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে শুধু কংগ্রেস নয়, দেশ-দুনিয়ার আবেগ জড়িত। ইন্দিরা ভবনের নাম পরিবর্তন করা তাঁরা কেউই ভাল ভাবে গ্রহণ করবেন না। তাই এই পদক্ষেপ থেকে বিরত থেকে রাজ্য সরকার কলকাতার অন্য কোনও ভবন, শিক্ষাকেন্দ্র বা পাঠাগার নজরুল ইসলামের নামে করুক।”
প্রদেশ কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সি আজ জানান, ইন্দিরা ভবনের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন আগে তিনি সনিয়া গাঁধীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তখনই কংগ্রেস সভানেত্রী রাজ্য নেতৃত্বকে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার নির্দেশ দেন। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদ কাল কলকাতা যেতে পারেন। সেখানেও তিনি ইন্দিরা ভবন প্রসঙ্গে মুখ খুলবেন বলে খবর।
অন্য সব বিষয়ে কিন্তু নরমে-গরমে চলার চিরাচরিত কৌশল নিয়েই চলছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। অর্থাৎ এক দিকে যেমন তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বের রাশ টেনে ধরছেন না, তেমনই নিজেরা মন্তব্য করে অহেতুক জটিলতা বাড়াচ্ছেন না। যেমন, কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে প্রদেশ কংগ্রেস।
সেই আন্দোলন বন্ধ করার কোনও নির্দেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব দেননি। আবার বিষয়টি যাতে মমতার সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ বলে মনে না হয় তা নিশ্চিত করতে শাকিল আহমেদ আজ বলেছেন, “কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে কংগ্রেস বরাবর সরব। বুড়ারিতে কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সনিয়া গাঁধী বলেছিলেন, এ সব ক্ষেত্রে রাজ্য সংগঠন প্রয়োজনে কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যেও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে পারে।”
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, মমতার আচরণে ক্ষুব্ধ দলের এক শ্রেণির নেতা তৃণমূলকে মুলায়ম সিংহের ভয় দেখালেও শীর্ষ নেতৃত্ব এখনই কোনও সংঘাতে যেতে চান না। উল্টে তাঁরা মমতার সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলারই পক্ষে। আর তাই কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বারবার শরিক দলের সঙ্গে সুষ্ঠু আলোচনার কথা বলছেন।
কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছেন। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ আজ মমতাকে ফোন করেন। জয়রাম শীঘ্রই বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া সফরে যাবেন। তার পর মহাকরণে গিয়ে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।
|