ক্রিকেটারের আকাল পড়েছে!
খেলোয়াড়ের অভাবে দলই গড়তে পারছে না নবদ্বীপের দলগুলি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক দলের অভাবে তাই বন্ধ হয়ে গেল স্থানীয় সাব-জুনিয়র ক্রিকেট লিগ। কোনও রকমে চারটি দল গড়ে মুখরক্ষা করছে দ্বিতীয় ডিভিশন ক্রিকেট লিগ। প্রথম ডিভিশনে ৯টি দল এবং জুনিয়র লিগে ১২টি দল অবশ্য এ বারও অংশ নিয়েছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় একটি ক্লাবের উদ্যোগে প্রতি বছরই এই শীতে শুরু হত খুদে ক্রিকেটারদের প্রশিক্ষণ শিবির। খেলোয়াড়ের আকালে এ বার তাও থমকে গিয়েছে। কেন এই অবস্থা? স্থানীয় ক্বাল কর্তাদের ব্যাখ্যাটা এইরকমসামনেই মাধ্যমিক। অনুর্ধ্ব ষোলো সাব জুনিয়র ক্রিকেটের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। বোর্ডের প্রথম পরীক্ষায় ফাঁকি দিয়ে ক্রিকেটে মন দেওয়ার ক্ষেত্রে তাই দিতে পারেননি খুদে ‘সচিন-সহবাগদের’ অভিভাবকেরা। আর তাই দলই গড়তে পারেনি স্থানীয় ক্লাবগুলি। কয়েক বছর ধরেই কমে আসছিল সাব-জুনিয়রে অংশ নেওয়া খেলুড়েদের সংখ্যা। এ বার তা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল।
প্রশিক্ষক-ক্লাব-কর্তা-খেলোয়াড়-অভিভাবকরা জানিয়েছে, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে ক্রিকেট খেলার সামর্থ্য নেই অধিকাংশের। আর যারা খেলছে, বহু দূরের মফস্সলে থেকে এসে নিজের সন্তানদের অনিশ্চিৎ ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে চাইছেন না তাঁরা। অভিভাবকদের সাফ কথা, এখানে খেলাধুলো করে কিছু হবে না। ক্রিকেট খেলা কলকাতার ছেলেদের জন্য। সুতরাং আমরা চাই না সময় নষ্ট হোক। এ প্রসঙ্গে নবদ্বীপ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার পক্ষে জয়ন্ত গোস্বামী বলেন, “প্রধানত দুটো কারণে ক্রিকেট খেলা এ সব জায়গা থেকে উঠে যাওয়ার মুখে। এক, বিরাট টাকার ব্যাপার। বেশীর ভাগ ক্লাবের এত টাকা ব্যয় করার সামর্থ্য নেই। দুই, স্কুলের পড়াশোনার চাপে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়ারা মাঠে আসতে চাইছে না। মার খাচ্ছে ক্রিকেট।”
কেমন খরচ ক্রিকেট খেলতে? উত্তরে নবদ্বীপ নবীন দলের প্রশিক্ষক দেবাশিস সাহা কিংবা আজাদ হিন্দ ক্লাবের প্রশিক্ষক সুব্রত দত্ত জানান, ৩০ হাজার টাকার কমে একটা দলের ক্রিকেট সরঞ্জাম হয় না। প্রশিক্ষক দেবাশিস সাহা বলেন, “গত বছরেও একটা প্র্যাক্টিস ক্রিকেট বলের দাম ছিল ১২০ থেকে ১৩৫ টাকা। এ বার তা ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। ম্যাচ বল ২৫০ টাকা। ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাট। একটা প্রাক্টিস ব্যাটের দাম অন্তত হাজার তিনেক টাকা। আর ম্যাচের জন্য একটু ভাল ব্যাট অন্তত ৫ হাজার।” আর এক প্রশিক্ষক সুব্রত দত্ত বলেন, “প্রতি দিন প্রায় একটা করে নতুন বল লাগে। মানে ১৫০ টাকা। এরপর অন্যান্য খরচ তো আছেই। কিন্তু এ সব করে লিগ জিতে লাভ কি? কোনও পুরস্কার নেই। নেই কোনও উন্নত সুযোগের পথ।” |