বিকেল পড়তে না পড়তেই বইপত্র ফেলে এক ছুটে মাঠে। সারা বিকেলটা কাটত ব্যাট-বল নিয়েই। সন্ধ্যেয় বাড়ি ফিরলে বাঁধা ছিল বকুনি। লেখাপড়া ফেলে মাঠে ক্রিকেট খেলে বেড়ানোটা মেনে নেননি মা-বাবাও। তবে এক বছরের মধ্যেই অনূর্ধ্ব ১৬ বেঙ্গল স্কুল ক্রিকেট দলে সুযোগ পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ডোমকলের সোহেল রানা।
ডোমকলের ভবতারণ স্কুলের দশম শ্রেণি এই ছাত্রের সাফল্যে খুশি শিক্ষক থেকে মহকুমা ক্রীড়া দফতরের কর্মীরাও। এই প্রথম রাজ্য স্তরের ক্রিকেটে নাম উঠল ডোমকলের। আপাতত সে সামনেই চণ্ডীগড়ে, খেলতে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব তরুণ দত্ত বলেন, “গ্রামে অনেক প্রতিভা রয়েছে। সকলে সুযোগ পায় না। ডোমকলে সিএবি পরিচালিত স্কুল ক্রিকেট শুরু না হলে মাত্র দু’বছরের মধ্যে এই সাফল্য পাওয়া যেত না।” ২০০৯ সালে প্রথম মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার হাত ধরে ক্রিকেট খেলার শুরু ডোমকলে। ডোমকলে সেই সময়েই শুরু হয় সিএবি পরিচালিত স্কুল ক্রিকেট। ভবতারণ হাইস্কুল, ইসলামপুর হাইস্কুল, নসিপুর ও পমাইপুর হাই মাদ্রাসাকে নিয়ে শুরু
 |
সোহেল রানা। |
হয় টুর্নামেন্ট। এক বছরের মধ্যেই নজরে পড়ে যায় সোহেল, সাদ্দাম, জিনারুল, রয়াল রাজ মোল্লা, ওয়াশিম আক্রমেরা। জেলা দলের হয়ে একের পর এক সাফল্য পায় ডোমকলের নতুন প্রজন্ম। মাস খানেক আগে রাজ্য স্কুল ক্রিকেট দল তৈরির জন্য একটি ক্যাম্প হয় ডায়মন্ড হারবারে। সেখানেই প্রথম সুযোগ পায় সোহেল। স্পিন বোলার ও ব্যাট হাতেও সমান দক্ষ সোহেল নজর কাড়ে সকলের। সোহেল বলল, “বছর খানেক আগেও ডিউজ বল, প্যাড, গ্লাভস চোখে দেখিনি। এখনও আমার নিজের ব্যাট নেই। বলের অভাবে ঠিক মতো অনুশীলনও হয় না। তবে এক বার সুযোগ যখন পেয়েছি কাজে লাগাবো।” লেখাপড়ায় ভাল সোহেল। মধ্যবিত্ত পরিবারের সকলেই চাইত ছেলে লেখাপড়াটাই মন দিয়ে করুক। কিন্তু সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনবরত মাঠে পালিয়ে যেত সোহেল। আর তাই বাড়ি ফিরে রোজই বকুনি খেতে হত।
সোহেলের বাবা আবদুল খালেক বলেন, “খেলার নেশার জন্য আমি ওকে মারধরও করেছি। বহরমপুরে খেলতে যেতে চাইলে আমি টাকাও দিতাম না। মাকে বুঝিয়ে ছেলে খেলতে চলে যেত। এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলার ব্যাপারেও একটু নজর দিলে ও বোধহয় আরও ভাল করতে পারত।” ভবতারণ স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন সামন্ত বলেন, “আমরা খুব খুশি। ক্রিকেট খেলার কোনও পরিকাঠামো নেই। তবুও আমাদের ছেলেটা রাজ্য দলে সুযোগ পেয়েছে।” স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক মিহির দাস মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট কর্তা। ছাত্রের সাফল্যে বেজায় খুশি তিনিও। তবে দায় বেনে গিয়েছে আরও অনেক সোহেলকে তুলে আনতে হবে তো! |